সান্ধ্য আড্ডায় উঠে এল ‘শেষের কবিতা’র না বলা অংশের গল্প

কলকাতা: একসঙ্গে বৃদ্ধ হতে পারেনি অমিত ও লাবণ্য। স্বইচ্ছাতেই হোক বা ভাগ্যের ফেরে, আলাদা হয়ে গিয়েছিল দুজনের পথ। লাবণ্যর জীবনসঙ্গী হয়েছিল শোভনলাল আর কেতকীর হাত ধরেছিল অমিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’র সমাপ্তি এখানেই। ১৯২৮ সালে প্রথম প্রকাশের পর যত পাঠক এই উপন্যাসটি পড়েছেন, একটাই প্রশ্ন ঘুরেছে তাঁদের মনে—মিতা ও বন্যার এরপর কি হল?

ধরা যাক বহু বছর পর হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল দুজনের। কি কথা বলবে তারা? আদৌ কোনও কথা হবে কি? না কি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত পূণর্বিবেচনা করবে দুজনে? এরকমই কাল্পনিক একটা পরিস্থিতির আধারে পরিচালক জিৎ চক্রবর্তী নিয়ে আসছেন তাঁর প্রথম ছবি ‘শেষের গল্প’। এই ছবিতে অমিত ও লাবণ্যর ভূমিকায় দেখা যাবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও মমতা শংকরকে। এছাড়াও থাকছেন অর্ণ মুখোপাধ্যায়, দুর্গা সাঁতরা, খরাজ মুখোপাধ্যায়, পল্লবী চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় ও কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায়। গতকাল শহরে এক সান্ধ্য আড্ডায় মিলিত হয়েছিলেন এই ছবির সঙ্গে যুক্ত শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

পুনরায় চালু হবে ইলোরা, জানিয়ে দিল মালিকপক্ষ

জিৎ জানালেন, “শুধু ‘শেষের কবিতা’ই নয়, যে কোনও উপন্যাস পড়া শেষ হয়ে গেলেই আমরা ভাবতে থাকি, এরপর কি হল। তবে এক্ষত্রে ‘শেষের কবিতা’ নিয়ে এই প্রশ্নটা বোধহয় সবার মনেই ঘোরে। সেরকমই একটা ভাবনা থেকে এই ছবিটা করা।”

এই ছবিতে কেতকীর মৃত্যুর পর একটি বৃদ্ধাবাস চালায় অমিত। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুদিন অধ্যাপনা করার পর অবসর নিয়ে দেশে ফিরছে লাবণ্য। সেই বৃদ্ধাবাসেই একদিন দেখা হয়ে যায় দুজনের।

“লাবণ্য আমার স্বপ্নের চরিত্র,” বললেন মমতা শংকর। “আমি হামেশাই ভাবতাম, ‘শেষের কবিতা’ নিয়ে কেউ কেন ছবি করার কথা ভাবছে না। জিতের এটা প্রথম ছবি। তার ওপর আবার এরকম একটা উপন্যাসের এক্সটেনশন। তাই ওকে বলেছিলাম, আগে চিত্রনাট্যটা পড়ে দেখব। তবে পড়ার পর আর দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি।”

গান শেষ আর জান শেষ তো একই কথা রাজামশাই

‘শেষের গল্প’-এ আকাশ ও কুহুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্ণ ও দুর্গা। রবীন্দ্রনাথের মূল উপন্যাসটিতে শিলংয়ের পাহাড় ঘেরা পথে যেতে যেতে যেভাবে দেখা হয়েছিল অমিত ও লাবণ্যর, সেই ভাবেই এক গাড়ি দুর্ঘটনায় দেখা হয় আকাশ ও কুহুর। অনেকটা ‘শেষের কবিতা’র মূল ন্যারেটিভের মতই এগোয় এই দুজনের গল্প। ‘শেষের গল্প’-এ নরেন্দ্র বলে একটি চরিত্র থাকছে যে এক সময় লাবণ্যর কলেজের জুনিয়র ছিল। বৃদ্ধাবাসটা সেই দেখাশোনা করে। কুহু নরেন্দ্রর মেয়ে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’য় জ্যোতিশঙ্করের ছেলে আকাশ।

“আমার ছবিতে আকাশ ও কুহুর কাহিনীটা অমিত-লাবণ্যর সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলতে থাকে,” জানালেন জিৎ।

“এই ছবিটা আমার কাছে শেখার,” বললেন অর্ণ। “এমন তাবড় শিল্পীদের সঙ্গে একই ফ্রেমে থাকতে পেরে আমি ভাগ্যবান।”

অমিতের চরিত্রে সৌমিত্র কেন, জানতে চাইলে জিৎ বললেন, “এই প্রশ্নটা উনি নিজেই আমাকে করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, ‘আমার কাছে আপনিই অমিত। আর কোনও বিকল্প আমার ভাবনায় নেই। আপনি যদি কাউকে খুঁজে দিতে পারেন, তাহলে আমি তার কাছে যাব।’ উনি হেসে মাথা নেড়েছিলেন, চিত্রনাট্যটা পড়েছিলেন, তারপর রাজি হন।”

শব্দ যখন ছবি আঁকে

মমতা শংকর জানালেন, “সৌমিত্রদার সঙ্গে সব রকম সম্পর্কের চরিত্রেই অভিনয় করা হয়ে গেল। উনি আমার বাবা, স্বামী, ভাসুর, এমনকি নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে ব্যবহার করছেন, এরকম চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। তবে বলতেই হবে জিতের ছবিতে একেবারেই অন্যরকম একটা সম্পর্কের অভিনয় করছি দুজনে।”

এই ছবির  চিত্রনাট্য লিখেছে Other ব্যাপারী (সৌমিত ও জয়দীপ)। সঙ্গীত হেঁসেল সামলেছেন জয় সরকার। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মিউজ়িক চার্টে লাফিয়ে হিট বাড়ছে নচিকেতা চক্রবর্তী ও কৌশিকি চক্রবর্তীর গাওয়া ‘কপালে আজ ভালোবাসার জ্বর’ ও অনুপম রায়ের কণ্ঠে ‘পুড়ে গেছে চোখ’ গানদুটির। এছাড়াও সোমলতা আচার্যর ‘মুখ তুলে তাকিও না আর’ মুক্তি পেল গতকাল। সবকটা গানেরই কথা লিখেছেন রাজীব চক্রবর্তী।

১৯ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে ‘শেষের গল্প’।

ছবি: গোপাল দেবনাথ

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *