‘আজও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে, ‘মৃগয়া’য় প্রথম দিনের প্রথম শট দিচ্ছি মনে হয়’

‘গৃহযুদ্ধ’র নিরুপমা থেকে ‘উৎসব’-এর পারুল বা আরও সম্প্রতি ‘শাহজাহান রিজেন্সি’র মিসেস পাকড়াশী। চার দশকেরও বেশি অভিনয় জীবনে তাঁর কাজ করা হয়ে গেছে বাংলার সব প্রথম সারির পরিচালকের ছবিতে। সত্যজিৎ রায়ের ‘আগন্তুক’-এর জন্য পেয়েছেন চলচ্চিত্রে বিশেষ জাতীয় পুরস্কার। জিৎ চক্রবর্তীর ‘শেষের গল্প’তে তিনি লাবণ্য। রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মমতা শংকর জানালেন আজও প্রতিটা ছবিই তাঁর কাছে ‘মৃগয়া’র মতই মনে হয়।

লাবণ্যর চরিত্রে অভিনয় করার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল বলছিলেন

হ্যাঁ। শুধু আমিই না, চন্দ্রোদয় (ঘোষ, স্বামী) যখনই ‘শেষের কবিতা’ পড়ত, আমাকে জিজ্ঞাসা করত যে এই উপন্যাসটা নিয়ে কেন কেউ ছবি করছে না। আমি বলতাম, করলেও যে সেখানে আমাকে লাবণ্যর চরিত্রে নেবে, এমন তো কোনও কথা নেই। শেষমেষ জিৎ ‘শেষের গল্প’তে লাবণ্যর চরিত্রটা অফার করল। চিত্রনাট্য পড়ে কাজটা করতে রাজি হয়ে গেলাম।




বাঙালি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে খুব রক্ষণশীল। তাঁর কোনও সৃষ্টি অবলম্বনে কোনও নতুন কাজ হলেই একটা হা-হুতাশ শোনা যায়। ‘শেষের গল্প’ নিয়ে সেরকম কিছু শুনেছেন?

এখনও অবধি না। তবে এটা আমাদের স্বভাব জানো। নতুন কিছুকে গ্রহণ করতে আমাদের খুব অস্বস্তি হয়। আবার সেই নতুনটাই যখন একটু পুরোনো হয়ে যায় তখন মনে হয় যা হয়েছে হয়ে যাক, আর যেন না হয়। আমার মনে হয় আগে দেখে তারপর বিচার করা উচিৎ। দেখো, সময়ের সঙ্গে কিছু তো বদল আসবেই। তবে আমূল পরিবর্তন না করে, গল্পটাকে আজকের মত করে উপযোগী করতে হবে, তাহলে সেটা অনেক বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছবে। তার মানে এই নয় যে আমি সেটার মধ্যে কোনও সস্তা মনোরঞ্জনের উপাদান ঢোকাব বা মূল গল্পটার সঙ্গে কোনও কম্প্রোমাইজ় করব।

পুনরায় চালু হবে ইলোরা, জানিয়ে দিল মালিকপক্ষ

আপনার নাচের ক্ষেত্রেও তো আপনি এই ভাবনাটাই অনুসরণ করেন

একদম তাই। রবীন্দ্রনাথের যত নৃত্যনাট্য আমি করেছি, সেগুলো একেবারে আজকের মত করে মঞ্চে এনেছি যাতে বর্তমান প্রজন্ম সেটা বোঝে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মূল কাহিনীটা আমি কোথাও এতটুকু বিকৃত করিনি। আমার উদ্দেশ্য রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাক এমন একটা ফর্মে যেটা এখনকার ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারে। দেখো, নতুনের মাধ্যমেই তো পুরোনো বেঁচে থাকবে। যাঁরা এখনও ‘শেষের কবিতা’ পড়েননি, তাঁরা হয়ত ‘শেষের গল্প’ দেখার পর মূল উপন্যাসটা পড়বেন। এটা তো খুব ভালো একটা উদ্যোগ।

পরিচালক হিসেবে জিৎ কেমন?

বয়স এত অল্প হলেও ওর আত্মবিশ্বাসটা সাংঘাতিক। গোটা ছবিটা সম্পাদনার পর কেমন দেখতে হবে, সেটা ওর মাথায় একেবারে গেঁথে রয়েছে। জিতকে ভালো লাগার আরেকটা কারণ হল, ওর মধ্যে কোনও অহমিকা নেই। অহংকারী লোকজন আমি একদম বরদাস্ত করতে পারি না। আমি খুব খুশি লাবণ্যর চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে।

যে জন থাকে মাঝখানে

কোনও গ্রে-টাইপ চরিত্রে কাজ করার ইচ্ছে হয় না? ‘অন্তর্লীন’ বা ‘শাহজাহান রিজেন্সি’-তে যেমন করলেন

ভীষণ ইচ্ছে করে। আগে অতটা সাহস ছিল না জানো। এখন তো ভয়ডরটা কমে গেছে। খুব বেশিদিন হয়ত আর অভিনয় করতে পারব না। এখন মনে হয় এরকম চ্যালেঞ্জিং চরিত্র আরও বেশি করে আসুক। সৃজিত (মুখোপাধ্যায়) যখন মিসেস পাকড়াশীর চরিত্রটা নিয়ে আসে, আমার মনে হয়েছিল, এটা কি আমি পারব? খুব দ্বিধার মধ্যে ছিলাম। সৃজিত ভরসা দিয়েছিল, আমার প্রতি ওর বিশ্বাস ছিল। তবে এই ভাবনাটা যে কোনও চরিত্রের ক্ষেত্রেই মাথায় ঘুরতে থাকে যে কাজটা আমার দ্বারা আদৌ হবে কি না।

হ্যাঁ, ঋতুপর্ণ ঘোষ আপনাকে চিরকালীন নবাগতা বলতেন

আর বোলো না (হাসি)। ও যখনই কোনও ছবির প্রস্তাব নিয়ে আসত, এটাই ভাবতাম যে আমাকে দিয়ে হবে তো? ঋতু বলত, ‘মমদি, তুই আমার চির নবাগতা নায়িকা। তুই কি ভুলে যাস যে কোন মাপের সব পরিচালকের ছবিতে কাজ করেছিস?’ একটুও বাড়িয়ে বলছি না, আজও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে, ‘মৃগয়া’য় প্রথম দিনের প্রথম শট দিচ্ছি মনে হয়। মঞ্চেও যখন উঠি, মনে হয় এই প্রথমবার এত লোকের সামনে দাঁড়ালাম। আমার টেনশনটা যায় না।

ছবি: গোপাল দেবনাথ

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Prabuddha

Foodie, lazy, bookworm, and internet junkie. All in that order. Loves to floor the accelerator. Mad about the Himalayas and its trekking trails. Forester in past life. An avid swimmer. Also an occasional writer and editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *