খড়দহে গঙ্গাসাগর, ১৮০০ লোক নিয়ে মেলা বসাবেন রিঙ্গো

RBN Web Desk: জীবন অনেকটা নদীর মতোই। জন্মের সময় মাতৃগর্ভে শিশু থাকে তরলের মধ্যে। আবার জন্মের পর যে পৃথিবীতে সে ভূমিষ্ঠ হয়, তার তিন ভাগই জলে পরিপূর্ণ। এমনকি মানব শরীরেও জলের আধিক্য প্রমাণ করে জীবন এক বয়ে চলা নদীরই স্বরূপ। গীতা অনুযায়ী একটিমাত্র নদী সমগ্র পৃথিবীতে বয়ে চলেছে, আর তা হলো গঙ্গা। শুধু দেশে-বিদেশে তার নাম পাল্টে যায়। আসামে সে ব্রহ্মপুত্র, আবার বাংলাদেশে সেই পদ্মা। কলকাতায় এসে সে আবার হুগলি নামে পরিচিত হয় । নদীদ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই জীবনেরই এক অন্য অর্থ খোঁজার চেষ্টা করেছেন পরিচালক অর্ণব রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর পরবর্তী ছবি ‘আ রিভার ইন হেভেন’-এর মাধ্যমে। ছবিতে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি, এই তিন ভাষাই ব্যবহৃত হবে। অভিনয়ে থাকবেন দেবশংকর হালদার, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, শ্রমণা চক্রবর্তী, রাফিয়াত রাশিদ মিথিলা, অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, ববি চক্রবর্তী, সায়ন ঘোষ, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস। 

ছবির প্রেক্ষাপট গঙ্গাসাগর মেলা ও বারাণসী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, এমনকি বিদেশ থেকেও বহু মানুষ প্রতিবছর গঙ্গাসাগরে আসেন। কারোর উদ্দেশ্য মেলার সামগ্রিক রূপ প্রত্যক্ষ করা, তো কেউ করেন পুণ্যস্নান। কেউ হয়তো পাপস্খালনের জন্য গঙ্গার কাছে নতজানু হন, তো কেউ আবার পুণ্য জমা রেখে আরও পাপে মগ্ন হওয়ার ছাড়পত্র চাইতে আসেন মায়ের কাছে।

আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি

রিঙ্গোর ছবিতে থাকছে একাধিক চরিত্রের কোলাজ। ঠিক যেমনটা হয় গঙ্গাসাগরে। বিহার থেকে আসা হরির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হলেও পুণ্যের খোঁজে সে তার মা, বাবা ও স্ত্রী বন্নোর সঙ্গে এসে পড়ে মা গঙ্গার শরনে। কিন্তু বন্নোর সঙ্গে সুন্দরভাইয়ের সম্পর্ক তাদের কোন পরিণতিতে নিয়ে যাবে? ওদিকে সলমন খানের ভক্ত টাট্টু আসলে পেশায় সোনাগাছির দালা। নারীশরীর তার কাছে রোজগারের মাধ্যমমাত্র। অথচ সেই টাট্টুই যখন শাওনকে দেখে কী যেন ঘটে যায় তার মধ্যে।

বাংলাদেশ থেকে আসা স্বপন ও বিশাখা সন্তানহীন দম্পতি। বিশাখাকে ভালোবাসলেও স্বপন মাঝেমাঝে হতাশায় ডুবে যায়। তাদের সন্তানহীনতার জন্য তখন সে স্ত্রীকেই দায়ী করে। তারাও মা গঙ্গার করুণা লাভের আশায় এসে পৌঁছয় পুণ্যতীর্থে। সেখানে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় বিশাখার প্রাক্তন প্রণয়ী কৌশিকের সঙ্গে।

আর আছে বেলা রায়। টেমসের পার থেকে গঙ্গার সংস্পর্শ লাভের আশায় সে গঙ্গাসাগরে এসেছে। উদ্দেশ্য তথ্যচিত্র বানানো। আসলে সে ববকে ভুলতে চায়, যে কোনও এক অজানা কারণে তাকে ছেড়ে চলে গেছে।

এই সবকটি চরিত্র কেউ শান্তির খোঁজে, কেউ বা পুণ্যের তাগিদে ছুটে আসে গঙ্গাসাগরে। মেলে কি শান্তি? দেবী কি আদৌ পাপীকে ক্ষমা করেন? নাকি সবটাই অন্ধবিশ্বাস?




গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে ছবি, কীভাবে ভাবলেন রিঙ্গো এমন একটা গল্প? রেডিওবাংলানেট-কে রিঙ্গো জানালেন, “আমার বন্ধু ভিএফএক্স আর্টিস্ট কৃষ্ণেন্দু ঘোষ প্রতিবছর গঙ্গাসাগর আর কুম্ভমেলায় যায়। ওর সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতেই এই গল্পটা মাথায় আসে। ধর্মভীরু মানুষ বিশ্বাস করে পাপ করে গঙ্গায় ডুব দিলেই দেবী সব দোষ ক্ষমা করে দেবেন। আর এই বিশ্বাসের আড়ালে মানুষ আরও বেশি করে নিমজ্জিত হয় পাপের অন্ধকারে। আসলে কিন্তু আমাদের সমস্ত কাজের হিসেব জীবৎকালেই হয়ে যায়।” 

আরও পড়ুন: বেহিসেবী জীবনযাপন, আজ স্মৃতির অতলে সৌমিত্র

সকলের ভেতরেই একটা করে নদী আছে বলে মনে করেন রিঙ্গো। সেই নদীর সামনে সকলেই নিজের পাপ পুণ্যের হিসেব রাখেন। যাঁর মেলায় যান তাঁরা মনে করে ওই উৎসব ও গঙ্গা তাঁদের পাপ ক্ষয় করবে। “বারাণসীতে খুব বড় করে রামনবমীর অনুষ্ঠান হয়। সেই উৎসবও দেখানো হবে ছবিতে। আমরা বারাণসী ঘাটে শ্যুট করব। এছাড়া প্রায় ১,৮০০ আর্টিস্ট নিয়ে খড়দহে গঙ্গাসাগরের সেট বানানো হবে। বাংলা ছবিতে এত বড় মাপের শ্যুটিং এর আগে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এই বিশাল সংখ্যক আর্টিস্টের সকলের জন্যই রয়েছে বিশেষ মেকআপ ও কস্টিউমের ব্যবস্থা,” জানালেন রিঙ্গো। 

ছবির কাহিনীকার রিঙ্গো নিজেই। এছাড়া চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা ও আবহ সঙ্গীতের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। পুজোর পরেই শুরু হতে চলেছে শুটিং। আগামী বছরের শুরুর দিকে মুক্তি পেতে পারে ‘আ রিভার ইন হেভেন’।

ছবি: রাজীব মুখোপাধ্যায়



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *