আরও এক ধাপ এগোলেন দেব

ছবি: প্রজাপতি

পরিচালনা: অভিজিৎ সেন

অভিনয়ে: মিঠুন চক্রবর্তী, মমতা শঙ্কর, দেব, খরাজ মুখোপাধ্যায়, শ্বেতা ভট্টাচার্য, কৌশানি চক্রবর্তী, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, বিশ্বনাথ বসু, পার্থসারথি চক্রবর্তী।

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২২ মিনিট

RBN রেটিং ★★★★★★★☆☆☆

সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকের সম্পর্ক নিয়ে ছবি নতুন নয়। অভিজিতের প্রথম ছবি ‘টনিক’-এর বিষয়বস্তুও একই ছিল। পরিচালক বোধহয় সম্পর্কের টানাপোড়েন, আবেগ, অনুভূতিকে তুলে ধরে, এমন ছবি বানাতেই পছন্দ করেন। কোথাও গিয়ে বর্তমান সমাজের ষাটোর্ধ্ব বাবা-মায়ের মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা কথাই বলতে চান তিনি। তাঁর নতুন ছবি ‘প্রজাপতি’ও এর ব্যতিক্রম নয়।



জয় (দেব) কলকাতার একজন সফল ওয়েডিং প্ল্যানার। বহু মানুষের বিয়ে ধুমধাম আয়োজনে সিদ্ধহস্ত জয় নিজে এখনও অবিবাহিত। সেই নিয়ে তার বাবা গৌর চক্রবর্তীর (মিঠুন) দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অবসরপ্রাপ্ত বাবা তাই নিজের ডিএ আর ছেলের বিয়ে বাকি থাকায় সকলের কাছেই পুত্রের জন্য উপযুক্ত মেয়ে খুঁজে দেওয়ার আর্জি রাখে। বর্তমান সমাজে যেখানে বিয়ের পরেই ছেলে-বৌমা আলাদা থাকার নমুনা চোখে পড়ার মতো, সেখানে সকলকে একসুতোয় গেঁথে রাখতে চায় জয়।

জয়ের দিদি (কনীনিকা) বিয়ের পর জামাইবাবুকে (অম্বরিশ) নিয়ে তিনতলায় আলাদা থাকে। তার শ্বাশুড়ি থাকে একই বাড়ির একতলায়। এসব দৃষ্টান্ত দেখে জয় বিয়ে করতে ভয় পায়। বিয়ের পর যদি জয়ের স্ত্রী তার বাবাকে আপন করে নিতে না পারে, তখন কী হবে! সব মানুষ তো সমান হয় না। একের পর এক করুণা, মায়া, মমতা মাখানো রূপের অধিকারিণীদের বাতিল করেছে জয়।

আরও পড়ুন: রেগে আগুন কমল মিত্র, সুবিধা হলো সত্যজিতের

একদিন হঠাৎ করেই মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে গৌর তার কলেজের বান্ধবী কুসুমকে (মমতা শঙ্কর) খুঁজে পায়। প্রৌড়া কুসুম অল্পবয়সেই বিধবা হওয়ায় একা হাতে মেয়ে জয়শ্রীকে (কৌশানি) মানুষ করেছে। জয়শ্রীকে দেখেই ছেলের জন্য তাকে পছন্দ করে নেয় গৌর। বাবার এই পরিকল্পনাকে বাতিল করার উদ্দেশ্যেই জয় বাড়িতে জানায় সে অফিসের এক কর্মী মালার (শ্বেতা) সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। এরপর মালার সঙ্গে জয়ের বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে গৌর। নিজের প্ল্যানেই জড়িয়ে যায় জয়। 

এই ছবির আসল তারকা মিঠুন ও মমতা শঙ্কর। ১৯৭৬ এর পর আবার ২০২২। ঘিনুয়া ও ডুংরির সম্পর্কের রসায়ন ছেচল্লিশ বছর পরেও অটুট। মিঠুনকে যোগ্য সঙ্গত করলেন খরাজ। প্রতিবেশীর চরিত্র তাঁর কমিক টাইমিং ও ডায়লগ ডেলিভারিতে হাসির রোল উঠল প্রেক্ষাগৃহে।

আরও পড়ুন: শেষ যাত্রায় ব্রাত্য, পথ হেঁটেছিলেন মাত্র কয়েকজন

স্টারসত্তা থেকে বেরিয়ে চরিত্র হয়ে ওঠার পথে আরও এক ধাপ এগোলেন দেব। ‘সাঁঝবাতি’, ‘টনিক’-এর পর এবার ‘প্রজাপতি’। প্রতি ছবিতেই নিজেকে আরও পরিণত করছেন তিনি। উন্নত হয়েছে তাঁর বাংলা উচ্চারণও।

প্রথম ছবিতে শ্বেতা যথেষ্ট সাবলীল। জয়শ্রীর চরিত্রে কৌশানি যথাযথ। তাঁর খুব বেশি কিছু করার ছিল না। অন্যান্য চরিত্রে কনীনিকা, অম্বরিশ, বিশ্বনাথ মানানসই। বহুদিন পর দেবের সঙ্গে এক ছবিতে দেখা গেল পার্থসারথিকে। তাকে আরও কিছুক্ষণ পর্দায় পেলে ভালো লাগত। ছবির সঙ্গীত মন ভালো করা। নচিকেতার গলায় ‘ভেঙে দেখো আমায়’ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে।



ছবির গল্পে কিছুটা বাস্তবতার অভাব বোধ করতে পারেন অনেকেই। তবে গভীরভাবে ভাবলে তা মোটেও অবাস্তব নয়। বরং সমাজের লাল চোখ এই ধরণের ভাবনাকে দাবিয়ে রেখেছে অবাস্তবতার মোড়কে। একজন মানুষ কীভাবে থাকবে, কার সঙ্গে থাকবে, সেসবই তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। সেখানে সমাজের ভয়, ঠাট্টা এগুলো কেন তাকে সহ্য করতে হবে? অন্য কেউ মতামত দেওয়ারই বা কে? এই কথাই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন অভিজিত। তাঁর পরিচালনায় যত্ন আছে।

অনেকটা ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’-এর রেশ রেখে যায় ‘প্রজাপতি’। সামনেই নতুন বছর। আসছে নতুন ভাবনার দিন। নতুন বছরে অনেকেই নতুন সংকল্প করেন। ‘নিজেকে বদলালে, তবেই সমাজ বদলাবে’, এরকম কোনও রেজ়োলিউশন নিতে চাইলে অবশ্যই দেখতে হবে ‘প্রজাপতি’। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *