বামন হয়েও চাঁদে হাত বাড়ানো যায়

ছবি: কুলপি

পরিচালনা: বর্ষালী চট্টোপাধ্যায়

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ৩ মিনিট

অভিনয়ে: প্রত্যয় ঘোষ, পায়েল সরকার, রজতাভ দত্ত, চুমকি চৌধুরী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু

RBN রেটিং: ২.৫/৫

পুরাণে কথিত আছে দৈত্যরাজ বলিকে দমন করবার হেতু বিষ্ণু বামন অবতাররূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বামন সম্প্রদায়কে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র সার্কাসের মনোরঞ্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দৈনন্দিন সভ্যতার সঙ্গে তাল মেলাতে তাঁরা অক্ষম। হয়তো বা তাদের সমাজের অঙ্গ হিসেবেই ধরা হয় না। তাই তো পথে, ঘাটে, বাসে, ট্রামে, ট্রেনে, দোকানে, রেস্তোরাঁতে, সিনেমা হলে কোথাওই তাদের জন্য কোনও বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু কেন? এই সাধারণ প্রশ্নটা কোনওদিন কারও মাথায় আসেনি। কেউ বুঝতেই চায়নি তাদেরও মান আছে, হুঁশ আছে। যে কোনও সাধারণ মানুষের মতোই তাদের জন্ম হওয়া, শারীরিকভাবে না হলেও, মানসিকভাবে বেড়ে ওঠা, অনুভূতির বিকাশ ঘটে। তবু তাঁরা জানেন সব অনুভূতি প্রকাশ পেতে নেই। র‍্যান্ডম জেনেটিক মিউটেশনের দায় কাঁধে নিয়েই কাটিয়ে দেয় সারাজীবন। তাদের কি ইচ্ছে হয় না আর পাঁচজনের মতো বাঁচতে? বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানো কি অসম্ভব?



কালীপদর (রজতাভ) প্রথম পক্ষের ছেলের নাম কুলদীপ ওরফে কুলপি (প্রত্যয়)। জন্মসূত্রে বামন হওয়ায় সমাজের কাছে সে হাসির খোরাক। যখন তখন যেখানে সেখানে তাকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা দেখতে অভ্যস্ত কুলপি। কালীপদর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মানবীর (চুমকি) কাছে গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে থাকে কুলপি। এমনকি দ্বিতীয়পক্ষে একটি সন্তান হওয়া সত্ত্বেও লোকমুখে বামনার বাপ হয়ে সারাজীবন হাসিমুখে কাটিয়ে দেয় কালীপদ। এভাবেই দিন গুজরান হয় কুলপির।

হঠাৎই বসন্তের নব প্রেমডালি সাজিয়ে হাজির হয় কঙ্কনা (পায়েল)। পাড়ার সর্বজনীন নীরু ঠাম্মার (সাবিত্রী) বাড়ির নতুন ভাড়াটে হয়ে আসে কঙ্কনা ও তার দাদু। লুনি নদীর মতোই কুলপির মরূময় জীবনে নেমে আসে কঙ্কনা। কিন্তু কোনওভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে না কুলপি। এরই মাঝে সার্কাসের ম্যানেজার হিল্টনের (বিশ্বনাথ) নজর পড়ে কুলপির ওপর। তার সার্কাসের নতুন জোকার হিসেবে কুলপিকে নিয়ে সে যেতে চায়। এরপরই গল্পে আসে নতুন মোড়।

আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তবুও ঔজ্জ্বল্যে অম্লান

অভিনয়ে প্রত্যেকেই নিজেদের মতো চেষ্টা করেছেন। প্রত্যয়ের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতেই হয়। পেশাদার অভিনেতা না হয়েও এতজন প্রতিষ্টিত শিল্পীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করলেন তিনি। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা সবেতেই ছোট হয়েও অভিনয়ের ক্ষেত্রফলে তিনি অনেকটাই বড়।

ছবির সঙ্গীত বেশ ভালো। তবে আইটেম গানটির কোনও প্রয়োজন ছিল না। ক্যামেরার কাজ সুন্দর। বিশেষত বেশ কিছু ড্রোন শটে ভীষণ সুন্দর ফুটে উঠেছিল শুটিংয়ের লোকেশনটি।

‘কুলপি’ একটি আদ্যোপান্ত মূলধারার ছবি। সামাজিক সচেতনতার বার্তা থাকলেও ‘কুলপি’ কোনওভাবেই কোনও জ্ঞান প্রদর্শন করে না। এর জন্য বর্ষালীকে ধন্যবাদ। ছবির শেষ দৃশ্য অনেকের কাছেই অবাস্তব মনে হতে পারে। তবে বাস্তবে এ ধরণের ঘটনা বহু ঘটেছে। তাই বাস্তবতা নিয়ে এই ছবি প্রশ্ন তুলবে না কোনওভাবেই।

আরও পড়ুন: বাইপোলার ডিসঅর্ডার থেকে চরম অবসাদ, হোমসে ‘ডুবে’ গিয়েছিলেন জেরেমি

সমাজের একাংশ চিরকালই নিষ্ঠুর। তারা চায় বলেই বামনদের দিনের পর দিন হাসির খোরাক বানিয়ে সার্কাসে খেলা দেখানো হয়। একজন মানুষ শারীরিক, জেনেটিক গন্ডগোলের মাসুল দিয়ে যায় এভাবেই। বহু ছবিতে নায়ককে হাসির রসদ জোগাতে ব্যবহার করা হয় তঁদের। এর আগে এই ছোট-ছোট মানুষদের জীবন সংগ্রাম উঠে এসেছিল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ছোটদের ছবি’তে। তবে ‘কুলপি’ একদম আলাদা ছবি। সমাজ বোধহয় ধীরে-ধীরে বদলাচ্ছে। তাই বদলাচ্ছে ছবির সংজ্ঞাও।  ভবিষ্যতে বামনদের শুধুমাত্র জোকার নয়, মানুষ হিসাবে ভাবা ভীষণ আবশ্যক।  




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *