বড়পর্দা থেকে নাটকের মঞ্চে ‘সপ্তপদী’
RBN Web Desk: ১৯৬১ সাল। মুক্তি পেল অজয় কর পরিচালিত বাংলা ছবি সপ্তপদী। উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত সেই রোমান্টিক ছবি সাড়া ফেলে দিল টালিগঞ্জ তথা বাংলা বিনোদন জগতে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি সেই ‘সপ্তপদী’ এবার আসছে নাটকের মঞ্চে। রিনা ব্রাউনের ভূমিকায় রয়েছেন অভিনেত্রী পায়েল সরকার (Paayel Sarkar) এবং কৃষ্ণেন্দু মুখার্জির চরিত্রে থাকছেন দীপ ভট্টাচার্য। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের জগৎ ছেড়ে প্রথমবার নাটকের মঞ্চে দেখা যাবে পায়েলকে। নববর্ষের ঠিক আগের দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে নাটকের প্রথম শো। তার আগে নাটকের মহড়াপর্ব দেখে এল রেডিওবাংলানেট।
নাকউঁচু খ্রিস্টান পরিবারে বড় হওয়া রিনা ব্রাউন এবং সাধারণ মধ্যবিত্ত হিন্দু পরিবারের ছেলে কৃষ্ণেন্দুর দেখা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে এসে। সমাজের সবচেয়ে উঁচু স্তরে বিচরণ করা, সবদিক দিয়ে এগিয়ে থাকা অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের চোখে ভারতীয়রা ‘ব্ল্যাকি’, অশিক্ষিত, অসামাজিক। তায় কৃষ্ণেন্দু আবার হিন্দু, ব্রাহ্মণ সন্তান। সমস্যা সেখানে অবধারিত। জাত-ধর্ম-পরিবারের কথা বাদ দিলেও কৃষ্ণেন্দু এবং রিনার রুচিগত অমিল ছিল বিস্তর। অনেকের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক ‘ওথেলো’তে কৃষ্ণেন্দুর বিপরীতে রিনাকেই দেখা যায়। ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গানের দৃশ্যায়ণ আপামর বাঙালির হৃদয়ে লেখা থাকবে চিরকাল।
আরও পড়ুন: অ্যাঞ্জেলিনাই অনুপ্রেরণা, জানালেন সৃজিত
সেই ‘সপ্তপদী’, সেই রিনা, সেই কৃষ্ণেন্দু। ছবিতে সুচিত্রা সঙ্গে থিয়েটারে পায়েলের তুলনা আসবেই। তবে পায়েলের মতে সুচিত্রা নয়, অভিনয়ের মাধ্যমে রিনা ব্রাউনকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করছেন তিনি। “থিয়েটার তো সিনেমার মতো নয়। নতুন একটা জিনিস শিখছি। তার মধ্যে অবশ্যই ভালোলাগা আছে। কিন্তু সিনেমার সঙ্গে তুলনা করতে যাওয়া ঠিক নয়। আগে অনেকবার ‘সপ্তপদী’ দেখেছি। রিনার চরিত্রে অভিনয় করতে হবে জানার পর থেকে সচেতনভাবেই আর ওই ছবি দেখিনি,” বললেন পায়েল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা তারাশঙ্করের ‘সপ্তপদী’ উপন্যাস বেশ অনেকটা বদলে গিয়েছিল ছবি তৈরির সময়। তাকে আবার থিয়েটারের মঞ্চে উপস্থাপন করতে গিয়ে চিত্রনাট্যে নতুন করে বেশ কিছু জায়গায় যোগ-বিয়োগ করেছেন নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তিনি বললেন, “আসলে ছবিতে ভিজ়ুয়ালি যতটা দেখানো যায়, নাটকে সেটা সম্ভব নয়। থিয়েটারে সময়ও কম, তাই কাঁচি চালাতেই হয়। তবে আমি মূল উপন্যাসকে গুরুত্ব দিয়েই চিত্রনাট্য সাজিয়েছি। প্রয়োজনে কিছু বদল ঘটেছে। আবার সিনেমায় দেখানো হয়নি এমন অনেক কিছু আমি যোগও করেছি।”
অজয় কর পরিচালিত সপ্তপদী ছবিতে রিনার ‘আই’ অর্থাৎ কুন্তীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ছায়াদেবী। মঞ্চে সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেত্রী দোলন রায়। ছায়াদেবীর সঙ্গে সরাসরি কোনও তুলনায় না গেলে নাটকের কুন্তীকে দর্শকের ভালোই লাগবে বলে জানালেন দোলন। “ছবির কুন্তী অনেক শান্ত, নিশ্চুপ। কিন্তু নাটকের কুন্তী যথেষ্ট প্রতিবাদী। একজন সত্যিকারের মায়ের পক্ষে যতটা প্রতিবাদ করা সম্ভব, ততটাই এখানে দেখানো হবে। উপন্যাসেও তেমনটাই আছে,” জানালেন দোলন।
আরও পড়ুন: ফেলুদা সিরিজ়ে চিরঞ্জিৎ
এছাড়াও ‘সপ্তপদী’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে দেখা যাবে দুলাল লাহিড়ী, নদী রায়, অর্পিতা কাজী, অঙ্কন ধর, কৌশিক ভট্টাচার্য, অর্পিতা নন্দী, প্রসূন ভট্টাচার্য, সৈকত গাঙ্গুলী, সুমন দাস, অমিত বিশ্বাস ও অর্পণ ভট্টাচার্যকে। অজয় করের জন্মশতবর্ষ এবং উত্তমকুমারের প্রাক-জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘সপ্তপদী’ মঞ্চস্থ করতে চলেছে নাট্যশাস্ত্রম দল।
ছবি: অঙ্কিতা দাস