এবারের পাঠ: বাঁচলে বাঁচো, মরিও না

ছবি: কিলবিল সোসাইটি

পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়

অভিনয়ে: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপ্তা সেন, তুলিকা বসু, বিশ্বনাথ বসু

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট

RBN রেটিং ★★★★★★★☆☆☆

অরণ্যদেব: প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন একটা পর্ব আসে, যখন নানা টানাপড়েনের জন্য বেঁচে থাকার সামান্যতম ইচ্ছেটুকুও আর থাকে না। সেই পর্বে ফেলুদা, নেরুদা, দেরিদা, কোনও এক দমকা হাওয়া এসে মানুষকে আবারও বাঁচিয়ে তুলতে পারে। এই দুটি কথাই সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর নতুন ছবি ‘কিলবিল সোসাইটি’তে (Killbill Society) বলেছেন।



ছবির নায়িকা পূর্ণা আইচ (কৌশানী) ইনস্টাগ্রামে রিল বানিয়েই বিখ্যাত। সেখান থেকেই প্রথম ছবির সুযোগ, তার জন্যই পুরষ্কার। কিন্তু পূর্ণার কেরিয়ারে এই নতুন পদক্ষেপ পছন্দ হয় না তার প্রেমিক জোয়ের (অনিন্দ্য)। চলচ্চিত্র জগতের অন্ধকার দিকগুলোকে মনে ধরে রেখে বসে থাকে জো। তার ধারণা, পূর্ণাও সেই পাঁকেই নামছে। বারবার কথাকাটাকাটির ফলে সম্পর্ক ভাঙে। তাদের এক অন্তরঙ্গ ভিডিয়ো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে জো প্রতিশোধ নেয় । ভিডিয়ো ভাইরাল হতে মাথায় হাত পড়ে পূর্ণার। কালিম্পং থেকে পালিয়ে এসেছিল বলে দিদি সুনয়না (সন্দীপ্তা) ছাড়া আর কেউ পাশে থাকে না।

এদিকে পূর্ণা আত্মহত্যাকেও ভয় পায়। তাই সে শরণাপন্ন হয় কলকাতার ডন পেট কাটা ষয়ের (বিশ্বনাথ)। নিজেকে খুন করার জন্য এক ভাড়াটে খুনি ডেকে পাঠায় সে। যথাসময়ে হাজির হয় মৃত্যুঞ্জয় কর (পরমব্রত)। পূর্ণা কি তাহলে সত্যিই মরবে, নাকি নতুন করে বেঁচে নিতে শিখবে? সেই গল্পই বলে এই ছবি।

আরও পড়ুন: আবারও একসঙ্গে জন-অক্ষয়?

সৃজিতের এই ছবি বহুস্তরীয় নয়, বরং বেশ ফ্ল্যাট। গল্পে আলাদা মশলা আনতে গিয়ে পূর্ণা ও সুনয়নার কিছু অতীত প্রসঙ্গ তিনি এনেছেন বটে, কিন্তু তার পিছনে রানটাইম নষ্ট না করলেও চলত। তবে অনেকদিন বাদে এককথার পাঞ্চলাইনের সৃজিতকে ফিরে পাওয়া গেল। এই ছবি দেখতে হলে ঢোকা ইস্তক দর্শক জানেন, ছবির পরিণতি কী হতে পারে। তাই সে পরিণতি যথাসম্ভব সুস্বাদু ভাবে পরিবেশন করেছেন সৃজিত। কিন্তু ছবির আনপ্রেডিক্টেবল ক্লাইম্যাক্স হিসেবে শেষ ১৫ মিনিট তিনি যোগ না করলেও ছবির কোনও ক্ষতি হতো না।

এই ছবির স্পটলাইট কৌশানীর উপরেই। গোটা ছবি জুড়ে দর্শকের চোখ সরতে দেন না তিনি। পরমব্রত এই ধরনের চরিত্রে ১৩ বছর আগেই করে ফেলেছেন। তাই বদলে যাওয়া লুক ছাড়া তাঁর থেকে খুব নতুন কিছু পাওয়া যায় না। বরং মাঝেমধ্যেই মৃত্যুঞ্জয়ের মুখে ইনফো-ডাম্পিং শোনা একটু সময় নষ্ট বলেই মনে হয়।

killbill society

বিশ্বনাথের অভিনীত চরিত্রকে আরও কিছু স্তর দিয়ে উপস্থাপনা করা যেতেই পারত। তবে তিনি এ ছবির অন্যতম সম্পদ। সন্দেহপ্রবণ প্রেমিক তথা প্রতিশোধপরায়ণ মানুষের চরিত্রে অনিন্দ্য যথাযথ। পর্দায় তাঁর উপস্থিতি তীব্র ঘৃণার সঞ্চার করে। আরও একটু বেশি স্ক্রিনটাইম পেলে হয়তো নিজেকে আরও বেশি মেলে ধরতে পারতেন তিনি। পূর্ণার মা হিসেবে তুলিকা বা দিদি হিসেবে সন্দীপ্তার তেমন কিছু করার ছিল না।

killbill society

ছবিতে কাহিনির গতি অনুযায়ী সংলাপ ভৌমিকের সম্পাদনা যথাযথ। রাতের দৃশ্য এবং উত্তরবঙ্গকে ক্যামেরায় ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন চিত্রগ্রাহক ইন্দ্রজিৎ মারিক। সুরকার হিসেবে অনুপম রায় আবারও চেনা ছকে। অনেক ক্লোজ়ার পাওয়া বা যাকে বাংলায় বলে ‘ঝুলে থাকা’ প্রেমিকই হয়তো বিশেষ কারও মন গলানোর জন্য গান ধরবেন: ‘ভালোবেসে বাসো না, দাও না ধরা কেন বলো’।

সব মিলিয়ে, ভালো না-থাকার, অবসাদে ভোগার এই পৃথিবীতে আরও একবার, একটু হলেও বেঁচে নিতে শেখায় ‘কিলবিল সোসাইটি’। বুঝিয়ে দেয়, যুগে-যুগে ভালো থাকার অব্যর্থ নিদান: চুটিয়ে প্রেম করুন!




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *