অজানা সম্পর্কের জালে স্বস্তিকা, অনন্যা
কলকাতা: লাল পাড় সাদা শাড়ি, দড়ি আর বসার জন্য একটা চেয়ার, মোটামুটি এই তিনটে জিনিস দিয়ে যে একটা অদ্ভুত আতঙ্ক আর কৌতুহল সৃষ্টি করা যায় তা বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছেন ‘মোহমায়া’র শিল্পীরা। দুই নারী ও একজন পুরুষ; তবে এটি কোনও ত্রিকোণ প্রেম কাহিনী নয়, বরং এক জটিল মনস্তাত্বিক থ্রিলার যা আগে দর্শক দেখেননি বলেই দাবি করলেন এই ওয়েব সিরিজ়ের কলাকুশলীরা। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘মোহমায়া’তে অভিনয় করেছেন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, বিপুল, সুজন মুখোপাধ্যায়, সাগ্নিক, শ্বেতা চৌধুরী ও অঙ্কিত মজুমদার। গতকাল শহরে ছবির ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছবির দুই প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী অনন্যা ও স্বস্তিকা।
মৃতা মা মায়ার (অনন্যা) স্মৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকা ঋষি (বিপুল) তার বন্ধুর মা অরুণার (স্বস্তিকা) মধ্যে সেই স্নেহ ভালোবাসা খুঁজে পায় যা সে আগে কখনও পায়নি। সে অরুণার প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করে। কিন্তু তা কি শুধুই মা-ছেলের সম্পর্কের টান? নাকি এমন কোনও অনুভূতি যার কোনও নাম দেওয়া যায় না। ঋষির আগমনে কী এমন ঘটে যা এক সুখী স্বাভাবিক পরিবারকে তছনছ করে দেয়?
আরও পড়ুন: মায়ের কথা ভেবে না পাওয়ার গানে চন্দ্রিকা
ছবির বিষয় সম্পর্কে কমলেশ্বর জানালেন, “সাইকোলজিকাল থ্রিলার তো বটেই, তবে গল্প সম্পর্কে বেশি কিছু এখনই বলা যাবে না। ট্রেলারটা দেখলে কিছুটা হয়ত আন্দাজ করা যাবে। সিরিজ়টা না দেখলে গল্পের আসল মজাটা পাওয়া যাবে না। আমার এই সিরিজ়টা করার কারণই হলো এর গল্প। গল্পটা এত অন্যরকম যে শুনেই মনে হয়েছিল এটা নিয়ে কাজ করব।”
সিরিজ়ের মূল কাহিনীকার সাহানা দত্ত। তিনি জানালেন, “এমন একটা গল্প লিখতে চেয়েছিলাম যা আগে লেখা হয়নি। গল্পটা শোনাবার সময়েই ওরা নিজেদের চরিত্র বেছে নিয়েছিল। লেখা থেকে শুরু করে অভিনয়, পরিচালনা, পোস্ট-প্রোডাকশন সব দিকেই প্রাণপাত করে কাজটা করা হয়েছে। স্বস্তিকা আর অনন্যা নিজেকে নিংড়ে অভিনয় করেছে বললেও কমই বলা হবে। শুটিংয়ের দিনগুলোয় ওরা দুজনেই আসল মায়া আর অরুণা হয়ে উঠেছিল।”
আরও পড়ুন: আবারও বাংলায় জনপ্রিয় হিন্দি মেগাধারাবাহিক
সিরিজ়টি সম্পাদনার দায়িত্বে রয়েছেন রবিরঞ্জন মৈত্র। শুটিংয়ের পরের যাবতীয় দায়িত্ব তাঁর কাঁধে তুলে দিয়েই নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন বলে জানালেন সাহানা। “কিছু অমানুষিক দৃশ্যের ডাবিং করা সম্ভব ছিল না। চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু হয়নি। সেগুলো আমরা রবিদার ওপরেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। এইসব দৃশ্যের মূল সাউন্ড রেখেই ‘মোহমায়া’ তৈরি হয়েছে।”
প্রথমবার এমন একটি ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করতে পেরে উছ্বসিত অনন্যা। “এরকম একটা চরিত্রের জন্য সাহানাকে ধন্যবাদ। মায়া একটা বিমূর্ত চরিত্র বা বলা যায় একটা ধারণা। চরিত্রের মধ্যে যে স্তরগুলো থাকে সেটা তার মধ্যে এত বেশি আছে যে এক কথায় তাকে বর্ণনা করা অসম্ভব। কাজটা করতে গিয়ে সকলেই প্রচণ্ড খেটেছি, সেটা সিরিজ়টা দেখলেই সবাই বুঝতে পারবেন। এরকম কোনও চরিত্র আগে আমি করিনি,” বললেন অনন্যা।
তবে প্রথমবার চিত্রনাট্যের শুরুটা পড়ে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল বলে জানালেন স্বস্তিকা। “বলেছিলাম পারব না। তারপর আবার মনে হলো এটা করব। কারণ গল্পটা একেবারেই আলাদা। আমি সবসময়েই এমন কোনও চরিত্র বা লুকে দর্শকদের সামনে আসতে চাই যেভাবে তাঁরা আগে আমাকে দেখেননি। অরুণা হয়ে ওঠা কিছুটা সহজ ছিল কারণ এইরকম সাজগোজ আমি আমার মাকে করতে দেখেছি। আর চরিত্রটাও ওরকমই, যেমন আমাদের সময় মায়েরা হতেন। তাই প্রথম থেকেই অরুণাকে খুব পছন্দ হয়ে যায়,” জানালেন স্বস্তিকা।
দশ পর্বে ৪৩০ মিনিটের ‘মোহমায়া’ হইচইতে ২৬ মার্চ থেকে দেখা যাবে।
ছবি: গার্গী মজুমদার