ব্যবসায়িক লাভের জন্য নয় ‘চঞ্চু’, জানালেন পরিচালক
RBN Web Desk: কোনও কিছুতেই অবাক না হওয়াটা কিছু মানুষের সহজাত হলেও আকাশে দুটো রামধনু, সাত ফুট লম্বা লোক কিংবা দণ্ডকারণ্যের মাঝে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত দর্শন ডিম দেখে চোখ কপালে উঠবে অনেকেরই। তবে এসব অদ্ভুত ঘটনাও যাকে অবাক করতে পারেনি তিনি তুলসীবাবু, সত্যজিৎ রায়ের ‘বৃহচ্চঞ্চু’ গল্পের প্রধান চরিত্র। তবে সেই তুলসীবাবুকে নিয়ে করা পরিচালক আবির রায়ের ছবি ‘চঞ্চু’ দেখে এই মুহূর্তে অসংখ্য সত্যজিৎভক্ত একইসঙ্গে অবাক ও আপ্লুত। ‘চঞ্চু’তে তুলসিবাবুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দীপঙ্কর গোস্বামী ও প্রদ্যুৎবাবুর চরিত্রে রয়েছেন দীপক চক্রবর্তী। নটবরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ ঘোষ। একটি ছোট চরিত্রে পরিচালক নিজেও রয়েছেন।
কোনওরকম আগাম ঘোষণা ছাড়াই ছবিটা ইউটিউবে এল, এমন একটা কাজ নিয়ে মানুষকে জানাতে ইচ্ছে করেনি? উত্তরে আবির রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “এ বছর সত্যজিতের জন্মশতবর্ষে এমন কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল যেটা আগে হয়নি। ফেলুদা বা শঙ্কুকে নিয়ে অনেকেই ভাবছেন, কাজও হচ্ছে নানারকম। আর ফেলুদা করতে চাওয়া মানেই দর্শক মারমুখী হয়ে থাকে। ট্রোলিং ছাড়া কিছু করাই যায় না। তাই এর বাইরে অন্য কিছু ভাবছিলাম যেটা কম বাজেটে করা সম্ভব।”
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
এর আগে অরণ্যদেবের আশি বছরে ‘চলমান অশরীরী’ করেছিলেন আবির। তবে ‘চঞ্চু’ কেমন হবে সেটা নিয়ে ভয় ছিল বলেই কোনওরকম প্রচারের কথা ভাবেননি তিনি। “সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের শেয়ার থেকে মানুষ ছবিটার কথা জেনেছেন,” বললেন আবির।
কোনওরকম ব্যবসায়িক লাভের উদ্দেশ্য না থাকায় কপিরাইটের সমস্যা হবে না বলেই মনে করেন ছবির সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা। ইউটিউব থেকেও কোনওরকম আয় যাতে না হয় তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জানালেন পরিচালক।
আরও পড়ুন: বাইপোলার ডিসঅর্ডার থেকে চরম অবসাদ, হোমসে ‘ডুবে’ গিয়েছিলেন জেরেমি
গল্পের ক্ষেত্রে সামান্য কিছু পরিবর্তন ছাড়া আর বিশেষ কোনও বদল আনার প্রয়োজন পড়েনি। “‘বৃহচ্চঞ্চু’ গল্পটা আশির দশকে লেখা। সেই হিসেবে কিছু জায়গা আপডেট করতে হয়েছে, যেমন রিডার্স ডাইজেস্টের জায়গা নিয়েছে গুগল। তবে খুব আধুনিক কিছু করা হয়নি। সচেতনভাবেই পুরোনো ছাপটা রেখেই কাজটা করতে চেয়েছিলাম কারণ বাঙালি নস্ট্যালজিয়া ভালোবাসে, আমি নিজেও তার ব্যতিক্রম নই। কস্টিউম বা চশমার ফ্রেমে একটু পুরোনো ধাঁচ রেখেই কাজটা করা হয়েছে। ছবির বাজেট খুবই কম ছিল। এমনকি যাঁরা অভিনয় করেছেন তারাও প্রোডাকশনের অন্য কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন,” বললেন আবির।
মাস কমিউনিকেশন ও ভিডিওগ্রাফি নিয়ে সেন্ট জ়েভিয়ার্স থেকে পাশ করে, টুকটাক কিছু ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর বন্ধুরা মিলে ছবি করার কথা মাথায় আসে বলে জানালেন আবির। “ছবির ভিএফএক্স এর কাজগুলো আমরাই করেছি, সেটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে বাইরে থেকে করা হয়নি বলেই বাজেটটা বেড়ে যায়নি, না হলে আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। আমরা চাই মানুষ ছবিটা দেখুন, দেখে নিজেদের মতামত দিন। তার বিনিময়ে কোনও লাভ করার আশা আমরা করিনি। তবে ভবিষ্যতের কাজগুলো নিয়ে ব্যবসায়িক দিক থেকে নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করব,” জানালেন তিনি।
‘চঞ্চু’র পরের পরিকল্পনা কী? উত্তরে আবির জানালেন “মহিষাসুরমর্দিনী নিয়ে একটা কাজ করতে চলেছি। মার্কণ্ডেয় পুরাণ থেকে স্ক্রিপ্ট করা হয়েছে। তবে এটা নৃত্যনাট্য নয়, অভিনয়ভিত্তিক কাজ হবে। সেখানে বাজেটের একটা ব্যাপার আছে। কস্টিউম, লোকেশন বা আরও অনেক বেশি ভিএফএক্স লাগবে। তাই এই কাজটার ক্ষেত্রে আমাদের আরও বেশি গুছিয়ে এগোতে হবে।”