টেলিভিশনে জনপ্রিয়তা পাওয়া এক ধরণের অভিশাপ: মানালি
কলকাতা: ‘নীল দিগন্তে’ সুপারহিট। নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরবর্তী ছবি ‘গোত্র’র এই গান ইতিমধ্যেই শুনে এবং দেখে ফেলেছেন কয়েক লাখ মানুষ। আবার এটাও ঠিক যে নায়িকা হিসেবে ‘গোত্র’ই তাঁর প্রথম ছবি। তবে বাংলার প্রতিটি ঘরেই তাঁকে রোজ দেখা যায় টেলিভিশন খুললেই। বর্তমানে ‘নকশি কাঁথা’ ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্র শবনমের ভূমিকায় অভিনয় করছেন মানালি দে। তারও আগে ‘বউ কথা কও’ ধারাবাহিকে মৌরীর চরিত্রে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন মানালি, যদিও বড় পর্দায় তাঁকে খুব একটা দেখা যায়নি।
আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। মেগা-ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা কি কোথাও ছবিতে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়?
“দেখুন, টেলিভিশনে অভিনয় করেই দর্শক আমাকে চিনেছেন,” বললেন মানালি। “সেটা একটা সময় খুব ভালো লাগলেও, পরে বুঝলাম যে টেলিভিশন ধারাবাহিকে জনপ্রিয়তা পাওয়া এক ধরণের অভিশাপ, কেন না তারপর আর কেউ বড় পর্দায় কাজ দিতে চায় না। শিবুদা-নন্দিতাদিই প্রথমবার ‘প্রাক্তন’-এ একটি গুরত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য আমাকে ডাকেন। কিন্তু ছবিটা সুপারহিট হওয়ার পরেও কেউ আমাকে ডাকেনি। আসলে বড় পর্দার শিল্পীদের সঙ্গে ধারাবাহিকে কাজ করা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সব সময় আলাদা করে দেখা হয়।”
সংক্রামক নয় ভিটিলিগো, বোঝাবে সমুদ্র দাশগুপ্তর ছবি
মানালির পরিবর্তে বড় পর্দার কোনও প্রতিষ্ঠিত নায়িকাকে কি নেওয়া যেত না ‘গোত্র’তে? ধারাবাহিকের পরিচিত মুখকে নায়িকা করা তো অনেক বড় ঝুঁকি।
শিবপ্রসাদ জানালেন, “এমন অনেক প্রশ্নেরই সম্মুখীন হতে হয়েছে ‘গোত্র’র অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচনের সময়। যদিও কোনও যুক্তিই মানালিকে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আমি নিজেও একটা সময় টেলিভিশনে কাজ করেছি। ‘একুশে পা’ ধারাবাহিক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেছিলাম আমি। তারপর ক্রমশ অভিনয় থেকে পরিচালনা ও প্রযোজনায় এসেছি।”
এই প্রসঙ্গে উঠে এল এ বছরেই মুক্তি পাওয়া ‘মুখার্জীদার বউ’ ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাও। শিবপ্রসাদের আক্ষেপ, “প্রায় কুড়ি বছর টেলিভিশনে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে পরিচিতি পেয়েও কেন কনীনিকাকে কোনও ছবিতে লিড রোলে কেউ ভাবেননি, এর উত্তর আমার জানা নেই। শাহরুখ খানও কিন্তু একসময় টেলিভিশন থেকেই উঠে এসেছেন।”
বিশ্বনাথের বারাণসী, বারাণসীর বিসমিল্লাহ
তবে বর্তমানে বাংলা ছবির বহু তারকাই উঠে এসেছেন টেলিভিশন থেকে। যীশু সেনগুপ্তর প্রথম কাজও ছিল টেলিভিশনেই, ‘মহাপ্রভু’ ধারাবাহিকে শ্রীচৈতন্যের ভূমিকায়। আবির চট্টোপাধ্যায়কেও প্রথম দেখা গিয়েছিল টেলিভিশন ধারাবাহিকেই। তাঁর সঙ্গে একই ধারাবাহিকে সেই সময় কাজ করেছেন পরবর্তীকালের বাংলা ও হিন্দী ছবির নায়িকা পাওলি দাম। এছাড়া স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী, তনুশ্রী চক্রবর্তী, মিমি চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার ও আরও অনেকেই ধারাবাহিক দিয়ে শুরু করলেও পরে বড় পর্দাতেও নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন।
ছোট পর্দা থেকে সিনেমায় সাফল্যের সঙ্গে পা রেখেছেন ইন্দ্রাণী হালদার, রূপা গাঙ্গুলী, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর মত অভিনেত্রীরা। সব্যসাচী চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, কাঞ্চন মল্লিক, অম্বরীশ ভট্টাচার্যর মত তুখোড় অভিনেতাদেরও আত্মপ্রকাশ টেলিভিশনেই।
রক্তবরণ মুগ্ধকরণ
খরাজের মতে, “ধারাবাহিক হল দৈনিক সংবাদপত্রের মত। আর সিনেমা হল সাহিত্য। যতদিন একটা ধারাবাহিকে আমরা কাজ করি, ততদিনই লোকে সেই চরিত্রের নামে আমাদের মনে রাখে। ধারাবাহিক শেষ হয়ে গেলে ভুলে যায়। সেখানে একটা ছবির জন্য অনেকদিন লোকে সেই চরিত্রটাকে মনে রেখে দেয়। এটুকুই যা তফাৎ। ছবি হোক বা টেলিভিশন, দুই ক্ষেত্রেই কাজের পরিশ্রমটা কিন্তু একই।”
‘গোত্র’তে ঝুমার চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শকদের ভালো লাগবে, এমনটাই আশা করেন মানালি।
ছবি: অর্ক গোস্বামী