খারাপভাবে করা সমালোচনায় রাগ তো হয়ই: সোহিনী
সকাল থেকে অঝোর বৃষ্টি আর তারই জেরে শ্যুটিং স্থগিত। তাই ঘরবন্দী বাংলার ভূমিকন্যা সোহিনী সরকার । একান্ত সাক্ষাৎকারে রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন কেন তার টেলিভিশনে ফিরে আসা এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা।
আগে বলো কেমন আছ?
একটু চাপে আছি। তবে মোটের ওপর ভালোই (হেসে)।
এখন ডাঙায় আছ, না জলে?
আপাতত ডাঙাতেই আছি। বাকিদের জলপুলিশের জিম্মায় করে দিয়েছি (হেসে)। বৃষ্টি পড়ছে তো, তাই এখন ডাঙাই ভরসা।
একটা লম্বা বিরতির পর তোমার টেলিভিশনে ফিরে আসা। এর পেছনে কারণটা কি?
ভূমিকন্যা সীমিত পর্বের ধারাবাহিক। কমবেশি ২০০ এপিসোড মতন চলবে এটি। টি আর পি’র চাপও নেই যে অন্য ধারাবাহিকের মত চলতেই থাকল তারপর একদিন দুম করে বন্ধ হয়ে গেল। আর তাছাড়া টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা বিপুল। সেটা অস্বীকার করা যায় না। যে কোনও অভিনেতা, অভিনেত্রীর কাছেই এটা খুবই লোভনীয় একটা মাধ্যম। একেবারে ঘরের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। এই দুটো কারণ মিলিয়েই টেলিভিশন করছি আবার।
তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে
অন্য ধারাবাহিকের থেকে ভূমিকন্যা আলাদা কেন?
দেখো, এটা ওই বোকা-বোকা শাশুড়ি-বৌমার কূটকচালি মার্কা ধারাবাহিক একেবারেই নয়। প্রচুর আউটডোর শ্যুট আছে এখানে, অনেক অ্যাকশন সিকোয়েন্স আছে। বড় পর্দায় এ ধরণের রোল আমরা পাই না বললেই চলে। তাই ভূমিকন্যা অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত ব্যাপার আমার কাছে।
কিন্তু গত পাঁচ-ছয় বছরে তো প্রায় সব বড় পরিচালকের সাথেই তোমার কাজ করা হয়ে গেছে। তাহলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর কথা বলছ কেন?
আসলে কাজ করতে করতে নিজের কাছে এক্সপেক্টেশনটা বেড়ে যায় জানো। প্রথম যখন ছবি করতে আসি, তখন ভেবেছিলাম কেউ যদি একটা ছোট রোলও দেয়, তাতেই ফাটিয়ে দেব। তারপর ধীরে ধীরে প্রধান চরিত্র পেতে থাকলাম, আমাকে কেন্দ্র করে ছবির গল্পও লেখা শুরু হল। কোনও একটা গল্প হয়ত পরলাম, তারপর মনে হতে থাকল, ইশ্ এরকম একটা চরিত্রে যদি অভিনয় করতে পারতাম। চাহিদাগুলো বাড়তে থাকে মনের মধ্যে। তাই ভূমিকন্যার অফারটা যখন পেলাম, তখন ‘না’ বলার কোনও কারণ দেখিনি।
রক্তবরণ মুগ্ধকরণ
ভূমিকন্যা তো একেবারেই নারীকেন্দ্রিক একটা ধারাবাহিক
একদমই তাই। এধরণের কোনও চরিত্র টেলিভিশনে আগে কেউ করেছে বলে মনে পড়ছে না। ভূমিকন্যায় আমি বাইক চালাচ্ছি, গাড়ি চালাচ্ছি। স্টান্টের কাজও আছে অনেক। টেলিভিশন তো ছেড়েই দাও, বাংলা ছবিতেও এরকম কোনও মহিলা চরিত্র আগে হয়নি। তাই চিত্রনাট্য যখন হাতে পেলাম তখন মনে হল যে এই রোলটা করা যেতে পারে।
Advertisement
ভূমিকন্যাকে বাস্তবধর্মী রূপকথার গল্প বলছে অনেকে
হ্যাঁ ঠিকই। রূপক সাহার তরিতা পুরাণ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এই ধারাবাহিকটি। পুরাণের মনসামঙ্গল কাব্যকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এনেছি আমরা, যেমন মহাভারত বা অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনী থেকে আগে একইরকম ভাবে ছবি করা হয়েছে। মনসামঙ্গলের মূল গল্প—বংশপরিচয়হীন একটি মেয়ের সাথে এক ব্যবসাদারের লড়াই—সেটাকে ভিত্তি করেই ভূমিকন্যা লেখা হয়েছে। এখানে তরিতা একদমই রক্তমাংসের একটি সাধারণ মেয়ে যার কিছু অতিন্দ্রীয় ক্ষমতা আছে। সে অন্যায়ের সাথে আপোষ করে না। ব্যবসায়ী চন্দ্রভানু (কৌশিক সেন) এই মেয়েটির ক্ষমতাকে অস্বীকার করে। তাই নিয়েই দুজনের দ্বন্দ্ব। এর সাথে স্বাভাবিকভাবেই এসে যায় গ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, এই ব্যাপারগুলো। সেইভাবেই এগোবে এই ধারাবাহিকের গল্প।
তাশি গাঁওয়ে একদিন
দর্শকরা কি বলছেন?
এখনও অবধি খুবই ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি। ছোট পর্দায় সিনেমার মত দেখতে লাগছে, এটা অনেকেই বলেছেন। সত্যি কথা বলতে কি, ভূমিকন্যার মাউন্টিংটা সেই ভাবেই করা হয়েছে, যাতে সিনেমার ফিলটা থাকে ছোট পর্দায়।
বিরসা দাশগুপ্তর ক্রিসক্রস-এও দেখা যাবে তোমাকে
হ্যাঁ, ১০ আগস্ট মুক্তি পাচ্ছে ক্রিসক্রস। কয়েকটি মেয়ের জীবন নিয়ে ছবি। প্রত্যেকেই একে অপরের থেকে আলাদা। প্রত্যেকেরই লড়াই তার নিজের মত করে। এক সাধারণ গৃহবধুর চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। এরকম নারী আমাদের খুবই পরিচিত। বাসে-ট্রামে, হাটেবাজারে সর্বত্রই দেখা যায় এদের।
শব্দ যখন ছবি আঁকে
এত বছর ধরে তো অনেক কাজ করলে। সমালোচনা কিভাবে নাও?
আমার কাজ অভিনয় করে যাওয়া, নিজের সেরাটা দেওয়া। আমি সেই কাজটাই করে যাই। তবে এই সমালোচনার ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং জানো। আজকাল সোশাল মিডিয়ার দৌলতে দর্শকদের সাথে সরাসরি কথা বলা যায়। তাদের মন্তব্য পড়েই বোঝা যায় কে আমার কাজটা নিজে দেখে কথা বলছেন, আর কে অন্যের মুখের ঝাল খেয়ে বলছেন। এমনও হয়, সেই ঝালটাও হয়ত তিনি খাননি, শুধু নিজের মনে একটা ধারণা করে নিয়েই খারাপ বলছেন। উল্টোপাল্টা অনেক কথাই বলেন এরা।
এ কেমন জীবন
উল্টোপাল্টা সমালোচনা কি গায়ে মাখো?
গায়ে না মাখলেও, এরকম কিছু কিছু কথায় খারাপ তো লাগবেই। আর পাঁচটা মানুষের মতই আমিও তো ষড়রিপুর দ্বারাই পরিচালিত। তার মধ্যে ক্রোধ বাদ নয় নিশ্চয়ই। সেটা হলে তো ভগবান হয়ে যেতাম। আসল কথা হল, এই খারাপভাবে করা সমালোচনাগুলো কোনওভাবে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে কি না। সেটা যাতে না হয় তার খেয়াল রাখতে হবে। খারাপ সমালোচনার বাধাগুলো কেউ খুব চট করেই পেরিয়ে আসতে পারে, কারুর আবার সময় একটু বেশি লাগে।
সিরিয়াল, ছবির পর এবার শোনা যাচ্ছে মঞ্চেও দেখা যাবে তোমাকে
টেলিভিশনে আসার আগে আমি থিয়েটার করেছি। এবছর শুরু করেছি আবার। থিয়েটার অলিম্পকেও আমাদের একটা প্রোডাকশন ছিল। ২০১৮-তে অন্য ব্যস্ততার মধ্যে হয়ত সম্ভব হবে না, তবে পরের বছর মঞ্চ অভিনয়ে ফিরব।