চন্দ্রযানের মডেল হাতে চলচ্চিত্র উৎসবে লাইভ স্ট্যাচু গোপাল মণ্ডল
কলকাতা: চন্দ্রযান অভিযান সফল হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। সেই নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল সারা দেশ। কিন্তু প্রতিদিনের সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে কেই বা আর সেসব কথা মনে রাখে! তবু শিল্পী গোপাল মণ্ডল সে কথা ভুলতে দেবেন না। হাতে কৃত্রিম চন্দ্রযানের মডেল নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
জীবন্ত স্ট্যাচু শিল্প খুব নতুন নয়। লন্ডনের রাস্তায় এরকম প্রচুর দেখা যায়। এই বাংলাতেও আছে এমন প্রতিভা। বেশ কিছু বছর ধরে বিভিন্ন জেলায় মেলা কিংবা দুর্গাপুজোয় এমনটা সেজে থাকেন কেউ-কেউ। তবে কুলপির গোপালবাবু এদের থেকে একটু আলাদা। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি প্রতি বছর আসেন জীবন্ত স্ট্যাচু হয়ে মানুষকে আনন্দ দিতে। আর সেইজন্য সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন ভঙ্গিকে বেছে নেন তিনি। সর্বাঙ্গে থাকে সোনালী কিংবা রুপোলি রঙের প্রলেপ। দু’হাত ওপরে তুলে বাঁশের ওপর লাগানো চন্দ্রযান বা বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের প্রতিকৃতি নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন। কতক্ষণ? ছয় থেকে সাত ঘণ্টা! প্রায় চোখের পলক না ফেলে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন সামনের দিকে। কাছে গিয়ে কথা বললেও খুব একটা চোখ সরান না নিজের লক্ষ্যের থেকে। হয়ত তাতে মনোযোগ নষ্ট হয়।
আরও পড়ুন: ডেভিড হেয়ারের জীবনী প্রকাশ
এভাবে যে দাঁড়িয়ে থাকেন কষ্ট হয় না?
“না, আমার অভ্যেস আছে। মেলায় যাই প্রতিবার। আমাদের ওখানে মেলা হয়। সেখানেও করি। মানুষ ভালোবেসে এই ঝোলায় যা দিয়ে যান তাতেই আমি খুশি,” কোমরে বেঁধে রাখা ব্যাগ দেখিয়ে বললেন তিনি।
সত্যি কি? ছুঁয়ে দেখা
রোদ-বৃষ্টি-শীত সবকিছু সয়ে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর অভ্যেস আছে, আর ভালোও লাগে বলে জানালেন গোপালবাবু। গোটা গায়ে রং মেখে তৈরি হতে লাগে মাত্র দশ মিনিট। আবার তুলতেও তাই। সারাদিনের কাজ শেষ করে আবার কুলপির বাড়িতে ফেরেন তিনি। বাড়িতে স্ত্রী এবং ছেলে আছে। ছেলে অন্য কাজ করে। গোপালবাবু নিজেও দিনমজুর খাটেন অন্য সময়। কিন্তু এটা তাঁর শখ। কিংবা অন্যতম ভালোবাসাও বলা যায়।
কেউ বিরক্ত করে না তাঁকে?
“না বরং সকলেই খুশি হয়। কখনও হয়ত বাচ্চারা সত্যি কিনা দেখতে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। তবে তেমন খুব একটা হয় না,” বললেন তিনি।
বাড়িতে তিনি অভ্যাসও করেন এভাবেই। বইমেলাতেও আসেন প্রতিবছর। কখনও সর্বশিক্ষা অভিযান তো কখনও চন্দ্রযান, মানুষকে সবকিছু নিয়েই জানাতে ভালোবাসেন তিনি। বললেন, পুলিশ আর কর্তৃপক্ষ থেকে খুব সাহায্য করা হয় তিনি যাতে এককোণে দাঁড়াতে পারেন। পথচলতি মেলায় আসা মানুষ তাঁকে দেখে মূর্তি ভেবে এগিয়ে যায়। কেউ-কেউ বুঝতে পারলে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ছবি তোলে অনেকেই, চলে সেলফি তোলার পালাও। তাঁর এই কঠিন অধ্যবসায় দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই ব্যাগে দিয়ে যান দশ, কুড়ি বা পঞ্চাশ টাকা। এতেই খুশি গোপালবাবু। অভাব তাঁর আছে, থাকবেও। কিন্তু মানুষকে খুশি করার মধ্যে যে আনন্দ তিনি খুঁজে পান, তার বিকল্প আর কিছুতে নেই।
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য