গানের আধিক্যে ঢাকা পড়ল গল্প

ছবি: হামসাজ় দ্য মিউজ়িকাল

পরিচালনা: সৌম্যজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

অভিনয়ে: অন্বেষা, মহম্মদ ইকবাল, প্রকৃতি দাশগুপ্ত, ধ্রুপদী বন্দ্যোপাধ্যায়, তৌসিফ আলম, অশোক সিংহ, দেবলীনা কুমার 

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৮ মিনিট

RBN রেটিং ★★★★★☆☆☆☆☆

সিনেমা জগতে সাধারণত কয়েক বছর জুড়ে কোনও এক ধরনের কাহিনি ও চিত্রনাট্যের ট্রেন্ড চলে। যেমন নব্বই দশকের কিছুটা রোমান্টিক আবার কিছুটা অ্যাকশন ছবির দাপট চলেছিল। ২০০০ সালের পরেও বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে নানা ঘরানার ছবির বাজার। শেষ কয়েক বছরে চলছে থ্রিলারের রমরমা। সঙ্গে সামাজিক ও ঐতিহাসিক ছবিও গ্রহণ করছেন দর্শক। ইদানিং থ্রিলারের ভরা বাজারে রোমান্টিক ছবির নির্মাণ প্রায় বিরল। সেই রোমান্টিক ঘরানার সঙ্গে সঙ্গীতকে মিশিয়ে সৌম্যজিত তৈরি করেছেন হিন্দি ছবি ‘হামসাজ়’।



ছবির কাহিনি কলকাতাকে ঘিরে। খনক বসু (অন্বেষা) এবং তার দুই প্রিয় বন্ধু জ়োয়া এবং নিশা, তিনজনেই ছোটবেলায় গুরুকুলে গান শিখেছে। সেই শিক্ষার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা আজও সকলের অটুট। তবে এখন যে যার কেরিয়ারে ব্যস্ত। প্রত্যেকেই ব্যস্ত চাকুরে। তিন বন্ধু মিলে ছুটি কাটাতে গোরুমারার জঙ্গলে বেড়াতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা হয়ে যায় লয়ের সঙ্গে। লয় ডিসুজা (ইকবাল) খনকের পূর্ব পরিচিত। একসময় গুরুকুলের অনুষ্ঠানে গান করেছিল একসঙ্গে। অথচ ডুয়ার্সের জঙ্গলে খনককে দেখে লয় যেন চিনতেই পারে না। সে আবার নতুন করে আলাপ করে সকলের সঙ্গে। বারবার চাওয়া সত্বেও নিজের ফোন নম্বর দিতে চায় না সে। নানা অজুহাতে এড়িয়ে যায়।  অথচ অনেকদিন আগে থেকেই লয়কে মনে-মনে পছন্দ করে খনক। অনেকটা মনখারাপ জমিয়ে নিয়ে কলকাতায় ফেরে সে। 

প্রেমের ছবি দেখতে যে কোনও বয়সেই ভালো লাগার কথা। প্রথম যৌবনের উচ্ছ্বাস, ভয়, ভালোলাগা সব মিলিয়েই নিজের ভালোবাসার অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে দেখে চরিত্রদের সঙ্গে দর্শকের একাত্ম হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই প্রেম পর্দায় সেভাবে জমল না। কারণ চিত্রনাট্যের দুর্বলতা। শুরু থেকেই অনাবশ্যক কথা এবং মেকি কথোপকথনে ছবির ছন্দ নষ্ট হয়। ফলে ছবি দেখার আগ্রহ কমে যায়। অন্বেষার অভিনয়ে জড়তা না থাকলেও বাকিরা বেশিরভাগেই হয় আড়ষ্ট না হয় সংলাপ বলায় অসুবিধা ধরা পড়ছে।

আরও পড়ুন: সৌরভের বায়োপিকে তৃতীয়বার অভিনেতা বদল

হিন্দি ছবিতে বাঙালি অভিনেতা নিলেও ডাবিংয়ের সময় আলাদাভাবে নজর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। বাঙালি জিভে অনভ্যাসের হিন্দি উচ্চারণ রীতিমতো কানে লাগে।

মিউজ়িকাল হওয়ার কারণে ছবির প্রথম অর্ধের বেশিরভাগটাই গান দিয়ে ভরানো হয়েছে। গল্প সেই অর্থে প্রায় নেই বললেই চলে। অনাবশ্যক কারণে পরের পর গান ছবির স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে। দু’ঘন্টার ওপর চিত্রনাট্যে আরও কিছু ঘটনার প্রয়োজন ছিল। এমনকী খনক নামটিও বাঙালিদের মধ্যে শোনা যায় না। লয়ের জীবনের সমস্যা এবং তার অতীত কোনওটাই সেভাবে সামনে আনা হলো না। অথচ এই অতীত ও তার কারণে তৈরি হওয়া জটিলতা নিয়ে অনেক বেশি নাটক তৈরি করা যেত। গল্পকে মুখ্য না করে গানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার ফলে ছবির উদ্দেশ্য ঢাকা পড়ে যায়। ভবিষ্যতে পরিচালককে আরও সতর্ক হতে হবে। 

আরও পড়ুন: থ্রিলারে নতুন জুটি শুভঙ্কি-আরিয়ান

অভিনয়ে অন্বেষা যথাযথ। ক্যামেরার সামনে যথেষ্ট সাবলীল এবং চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছেন তিনি। লয়ের চরিত্রে ইকবাল বেশ আড়ষ্ট। ভবিষ্যতে আরও সুযোগ পেলে হয়তো নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবেন তিনি। ধ্রুপদী, প্রকৃতি এবং তৌসিফ স্বতঃস্ফূর্ত হলেও চিত্রনাট্য খুব একটা সাহায্য করেনি তাঁদের। প্রবীণ অভিনেতা অশোক চরিত্রের প্রয়োজন পূরণ করেছেন। 

অন্বেষার সুরারোপিত বেশ কিছু গান শ্রুতিমধুর। বিশেষত শানের সঙ্গে গাওয়া ‘হাম পেয়ার কি রাহ পর খো গয়ে’ শুনতে বেশ ভালো লাগে। গুরুকুলের সকলে মিলে গাওয়া ‘নীলা নীলা সা’ গানটিও সুন্দর। দেবলীনার নাচের সঙ্গে ‘ক্রেজ়ি সাইয়া’ আইটেম সঙ্গীত হিসেবে মন্দ নয়। উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গান এবং অন্যান্য দৃশ্যের শুটিং এই ছবির অন্যতম প্রাপ্তি বলা যায়। অপূর্ব কন্ঠস্বর ও সুরের দক্ষতায় খুব ছোট বয়স থেকে শ্রোতা ও দর্শকের প্রায় ঘরের মানুষ সঙ্গীতশিল্পী অন্বেষা। বড়পর্দায় তাঁর আত্মপ্রকাশ এবার তেমনভাবে প্রচারের আলো না পেলেও আশা করা যায় ভবিষ্যতে নিজেকে আরও ঘষেমেজে পর্দায় হাজির হবেন তিনি। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *