সোজাসাপটা প্লটে স্মার্ট থ্রিলার

ছবি: তৃতীয়

পরিচালনা: অনিমেষ বসু

অভিনয়ে: সুদীপ্তা চক্রবর্তী, সম্পূর্ণা লাহিড়ী, জয় সেনগুপ্ত, রজতাভ দত্ত, বোধিসত্ত্ব মজুমদার

দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট

RBN রেটিং: ৩/৫

বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসা, শরীরী প্রেম, পরষ্পরের প্রতি নির্ভরতা যতই জরুরি হোক না কেন, বিশ্বাসের থেকে বড় কিছু হয় না। বিশ্বাসহীনতার ধাক্কায় সেই সম্পর্ক একবার ভেঙে গেলে আর তাকে জোড়া লাগানো যায় না। এ ছবির মূল সূত্র মোটামুটি এটাই। সেই কাহিনীই গড়িয়েছে খুনের রহস্য অনুসন্ধানে।



সন্দীপ (জয়) আর নন্দিনী (সম্পূর্ণা) পুরুলিয়ায় যায় ছুটি কাটাতে। নন্দিনী সন্দীপের স্ত্রী নয়। অধস্তনও নয়। তারা একই অফিসের সহকর্মী। নন্দিনী সন্দীপের সঙ্গে আগেও বাইরে গেছে, কিন্তু তাকে সে ভালোবাসে বলে মনে হয় না। দু’দিন থাকার পরিকল্পনা থাকলেও অফিসের জরুরি তলব পেয়ে সন্দীপ পরদিনই সকালে ফেরা মনস্থ করে। পরেরদিন ভোরে সন্দীপকে ঘুম থেকে ডাকতে গিয়ে কোনও সাড়া পায় না নন্দিনী। ডাক্তার এসে জানান সন্দীপ মৃত। হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হওয়া সত্বেও সন্দেহবশত স্থানীয় বাঘমুন্ডি থানার অফিসার বীরেন্দ্রপ্রতাপ হাজরা (রজতাভ) নন্দিনীকে জেরা করতে শুরু করে। সন্দীপের স্ত্রী শর্মিলাকে (সুদীপ্তা) খবর দেওয়া হয় । বীরেন্দ্রকে চমকে দিয়ে শর্মিলা জানায় নন্দিনীর উপস্থিতি সম্পর্কে সে ওয়াকিবহাল। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা যায় সন্দীপকে দু’ভাবে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। দুটো বিষ কি একজনই দিয়েছিল নাকি আলাদা দুজন মানুষ একই দিনে সন্দীপের মৃত্যু কামনা করেছিল?

ছিমছাম প্লটে জটিল সম্পর্ক ও ষড়যন্ত্র নিয়ে আদ্যন্ত একটি থ্রিলার ছবি ‘তৃতীয়’। যদিও এই ছবিতে হত্যার মোটিভ ও সম্ভাব্য পদ্ধতির থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মৃত ব্যক্তিকে ঘিরে তার স্ত্রী এবং প্রেমিকার ফ্ল্যাশব্যাক। সন্দীপের রক্তে ছিল লাম্পট্য। স্ত্রীর সামনেই একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়েছে সে। এমনকি বাড়ির বিছানা অবধিও গড়িয়েছে সেই সম্পর্ক। তবু সন্দীপের নতুন প্রেমিকার জায়গায় নন্দিনীকে দেখবে আশা করেনি শর্মিলা। সন্দীপকে সে খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছিল। নন্দিনী তার কলেজবেলার বন্ধু। ওদিকে নন্দিনীও সন্দীপের স্ত্রী হিসেবে শর্মিলাকে দেখার পর চরম অস্বস্তিতে পড়ে। তাহলে কে খুন করল সন্দীপকে? হোটেলে কি সে রাতে আর কেউ এসেছিল? হাতড়ে চলে বীরেন্দ্র।

আরও পড়ুন: শেষ দৃশ্যে ভাঙা হোল্ডার, সত্যজিতের জয়জয়কার

একটা খুন ও তাকে ঘিরে পারিপার্শ্বিক যে সব নিয়মমাফিক পুলিশি কর্মকান্ড চলে এ ছবিতে খুব স্পষ্টভাবে সেসব দেখানো হয়েছে। অন্যান্য রহস্য ছবির মতো অহেতুক কিছু তথ্য গোপন রেখে দর্শককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেননি অনিমেষ। ফলে রহস্য ডালপালা মেলেও প্রত্যাশা মতোই অঙ্কের নিয়মে মিলেও গেছে। যদিও কিছু ঘটনা শুরুতেই দেখিয়ে দেবার ফলে থ্রিলারপ্রেমীদের পক্ষে রহস্যের সমাধান করা হয়তো কিছুটা সহজ হয়ে যাবে। ছবি শেষের আগেই আন্দাজ করা যায় অপরাধী কে বা কারা। তাই প্লটের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। তবে ইন্সপেক্টর হাজরার স্বগতোক্তি শোনার পর মনে হয় এ ছবি যত না থ্রিলার তার থকে বেশি মনস্তাত্ত্বিক।

আরও পড়ুন: বেহিসেবী জীবনযাপন, আজ স্মৃতির অতলে সৌমিত্র

অভিনেতারা সকলেই যথেষ্ট পারদর্শী ও পরিণত হওয়ায় অভিনয় আগাগোড়াই প্রশংসার দাবি রাখে। বরাবর তথাকথিত ভালোমানুষের চরিত্রে অভিনয় করে আসা জয়কে অন্য ধরণের চরিত্রে মানানসই লেগেছে। নন্দিনীর চরিত্রটি তার নিজের জায়গায় ঠিক হয়েও সারাক্ষণ কেন এমন দোটানায় থাকে তা পরিষ্কার হয় না। সর্বোপরি মন সায় না দিলেও কেন সে পুরুলিয়া গেল, তার স্পষ্ট কোনও কারণ নেই। যদিও চরিত্রের দাবি যথাযথভাবেই পূরণ করেছেন সম্পূর্ণা। সুদীপ্তা তাঁর নিজের মতোই আত্মবিশ্বাসী। আগাগোড়াই তিনি নিজের চরিত্রে অভিনয় করে গেলেন মনে হলো। সমস্ত ছবি জুড়েই শর্মিলার স্বল্প উপস্থিতিকেও বিশ্বাসযোগ্য করে গেছে সুদীপ্তার অভিনয়। 



বীরেন্দ্রপ্রতাপ এই রহস্যের চতুষ্কোণের অন্যতম কোণ। একাধিকবার একই ধরণের ভূমিকায় কাজ করতে হলেও নিজের অভিনয়গুণে প্রতিটি চরিত্রকে আলাদাভাবে দর্শকের মনে এঁকে দেওয়ার পারদর্শিতা এই মুহূর্তে বাংলা ছবিতে হাতেগোনা যে কয়েকজন অভিনেতার মধ্যে আছে রজতাভ তাঁদের অন্যতম। ইন্সপেক্টর হাজরা আগাগোড়া এই কাহিনীর মূল ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে থাকবেন, যার কারণেই সম্ভবত সন্দীপ দত্ত মার্ডার কেস মনে থেকে যাবে।

সোজাসাপটা প্লটে স্মার্ট থ্রিলার ‘তৃতীয়’। তবে কিছুটা চাকচিক্য থাকলে হয়তো মন্দ লাগত না। ন্যারেটিভ আগাগোড়া বেশ সাদামাঠা ও সিরিয়াস। ছবির প্রচারও হয়েছে সমসাময়িক অন্য ছবির তুলনায় কম। কাজেই ভালো কাহিনী হওয়া সত্বেও কতজন দর্শকের কাছে এ ছবি পৌঁছবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *