ভালো থাকার জন্য পদবী গুরুত্বপূর্ণ নয়
ছবি: কুলের আচার
পরিচালনা: সুদীপ দাস
দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৫৬ মিনিট
অভিনয়ে: ইন্দ্রাণী হালদার, সুজন নীল মুখোপাধ্যায়, মধুমিতা সরকার, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়
RBN রেটিং: ২.৫/৫
পদবীর গুরুত্ব ঠিক কতটা? রামায়ণের রামচন্দ্র, লক্ষ্মণ, সীতা বা মহাভারতের কৌরব, পাণ্ডবদের পদবী কী? এই যে এত দেবদেবীর পূজার্চনা করা হয়, সেখানে কেউ কি কখনও জানতে চায় মা দুর্গা বা শিব ঠাকুরের পদবী কী? তাহলে হঠাৎ করে পদবী কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল? আর কেনই বা শুধুমাত্র মেয়েদের বিয়ের পর পদবী পরিবর্তনের এই প্রথা চালু হলো? ঠিক এই প্রশ্নগুলিই তুলে ধরেছেন সুদীপ তাঁর ‘কুলের আচার’-এ।
পরিবারের ছোট ছেলে প্রীতমকে (বিক্রম) বিয়ে করে সেন বাড়িতে এসেছে মিঠি (মধুমিতা)। কিন্তু বিয়ের পর সে তার পদবী পাল্টাতে নারাজ। খাতায় কলমে রায় থেকে সেন হবে না মিঠি। তার এই সিদ্ধান্তে প্রীতমের কোনও আপত্তি না থাকলেও তার শ্বশুরমশাই প্রাণতোষ (নীল) কিছুতেই মেনে নিতে রাজি নয়। এমতাবস্থায় মিঠির শাশুড়ি মিতালি (ইন্দ্রাণী) হঠাৎ ঘোষণা করে চল্লিশ বছর পর সেও আর সেন বংশের পদবী বহন করে চলবে না। প্রাণতোষের কথা অনুযায়ী মানুষের পদবী যখন তার বংশের ঐতিহ্য, কূলের ইতিহাস, তখন মিতালিও তার পিতৃদত্ত পদবীকেই ফের ফিরিয়ে আনতে চায়। এরকম সেমসাইড গোল খাওয়ার ফলে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান প্রাণতোষ। এরপর শুরু হয় গল্পের আসল মজা।
আরও পড়ুন: শেষ যাত্রায় ব্রাত্য, পথ হেঁটেছিলেন মাত্র কয়েকজন
কেন এই পদবীর পরিবর্তন? এর একটা খুব সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে এই ছবিতে। একটি দৃশ্যে মিতালি তার পুত্রবধূ মিঠিকে বলছে, মেয়েরা যখন নতুন সংসারে আসে তখন সেই সংসারের সমস্ত দায়দায়িত্ব, কাজকর্মের গুরুভার চাপিয়ে দেওয়া হয় তার কাঁধে। তখন যাতে মেয়েটির মনে কোনও ক্ষোভ তৈরি না হয়, সেই উদ্দেশ্যেই পদবীর পরিবর্তন করে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় মেয়েটি সেই পরিবারেরই একজন।
তবু পদবী পরিবর্তন না করে কি একটা মেয়ে তার নতুন পরিবারের একজন হয়ে উঠতে পারে না? নিশ্চয়ই পারে। মানসিকভাবে সে তখন সেই পরিবারের রীতিনীতি, ভালোলাগা, মন্দলাগা সব কিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই পদবী বদল সেক্ষত্রে শুধু বহমান নিয়ম হয়ে থেকে যায়। ভালো থাকার জন্য আর যাই হোক পদবী গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আরও পড়ুন: রেগে আগুন কমল মিত্র, সুবিধা হলো সত্যজিতের
‘কূলের আচার’ মিঠিকে দিয়ে শুরু হলেও শেষপর্যন্ত এই ছবি মিতালির। এক অদ্ভুত ব্যথায় মোড়া সমাপতন এই ছবির। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে পদবী আলাদা হওয়ায় থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য অবাস্তব লাগে। আবার এই একই কারণে প্রীতমকে দেখতে হাসপাতালে ঢোকার সময় মিঠি নিজেকে মিসেস রায়ের পরিবর্তে মিসেস সেন হিসেবে পরিচয় দেয়। তার মনে ভয় হয়, মিসেস সেন না বললে যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢোকার অনুমতি না দেয়। এই ঘটনাগুলো আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মেনে নেওয়া কষ্টকর।
এ ছবি কোনওভাবেই পদবী পরিবর্তনের পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলে না। এই ছবি মেয়েদের নিজের মতামত রাখার কথা বলে। ছবিতে প্রত্যেকের অভিনয় যথাযথ। মিতালির ভূমিকায় ইন্দ্রাণী তাঁর নিজস্বত্ত্বায় সাবলীল। বেশ কিছু দৃশ্যে মধুমিতা ও বিক্রমের অভিনয়ের জায়গায় আরও সাবলীল হওয়া উচিত ছিল। নীল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ অভিনয় করে গেছেন ছবি জুড়ে।
আরও পড়ুন: বাইপোলার ডিসঅর্ডার থেকে চরম অবসাদ, হোমসে ‘ডুবে’ গিয়েছিলেন জেরেমি
তবে ছবিতে কিছু কমেডি দৃশ্য জোরপূর্বক বলে মনে হয়। প্রাণতোষের ধ্যানধারণা বদলানোর জন্য শেষ দৃশ্য অহেতুক বেদনাময় না করলেও হতো। শুধুমাত্র কোনও একজন মানুষের অনুপস্থিতি যদি আরেকজনের বোধোদয় ঘটায়, তাহলে সেই বোধদয়ের মূল্য কী?
প্রসেন ও তাঁর দলবলের সৌজন্যে ছবির গানগুলি শ্রুতিমধুর। ইমনের কণ্ঠে ‘আমি আমার মধ্যে তোমায় খুঁজে পাই’ বেশ ভালো লাগে।
পারিবারিক ছবি হিসেবে ‘কুলের আচার’ হয়তো বহু মেয়ের জীবনের গল্পের সঙ্গে মিলে যাবে। তাই একবার সবাই মিলে দেখাই যায় এই ছবি।