প্রশ্ন রেখেই অন্দরমহলের রহস্যভেদ

সিরিজ়: ইন্দু

পরিচালনা: সায়ন্তন ঘোষাল

অভিনয়ে: ইশা সাহা, চন্দ্রনিভ মুখোপাধ্যায়, সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, মানসি সিনহা, পায়েল দে, যুধাজিৎ সরকার, তনিকা বসু

দৈর্ঘ্য: ১৮১ মিনিট (আট পর্বে)

RBN রেটিং: ৩.৫/৫

বাংলা ছবির জগতে থ্রিলারের রমরমা চলছে বেশ কিছু বছর ধরেই। থ্রিলার ঘরানায় এর আগে ‘আলিনগরের গোলকধাঁধা’ ও ‘যকের ধন’-এর মতো ছবি করেছেন সায়ন্তন। ‘ব্যোমকেশ’ সিরিজ়ের পরিচালকও ছিলেন তিনি। এবার তাঁর হাত ধরে  এল নতুন থ্রিলার সিরিজ় ‘ইন্দু’। গোয়েন্দার তকমা আঁটা কারোর উপস্থিতি না থাকলেও, আটটি পর্ব জুড়ে এই সিরিজ়ের পরতে-পরতে জড়িয়ে রয়েছে রহস্য। সিরিজ় দেখতে-দেখতে দর্শক নিজেই অনুমান করার চেষ্টা করবেন রহস্যের পর্দা সরালে কোন চরিত্রের আসল মুখ দেখা যাবে।




কাহিনীর কেন্দ্রে রয়েছে ইন্দু। তার বিয়ে নিয়েই বাধে যত ঝঞ্ঝাট। বিয়ের দিন থেকেই সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পরেও রহস্যের গিঁট খোলে না, উল্টে আরও জট পাকিয়ে যায়। কোনও অজ্ঞাত কারণে, শ্বশুরবাড়ির কিছু সদস্যের নাম নেওয়া সে বাড়িতে বারণ। শ্বশুরবাড়িতে একাধিক বিচিত্র চরিত্রের মধ্যে গিয়ে পড়ে ইন্দু। সেখানে ঘটতে থাকে নানা আশ্চর্যজনক ঘটনা। ক্রমে ঘনীভূত হয় রহস্য। অবশেষে ইন্দু সেই রহস্যের আড়ালে থাকা চরিত্রটিকে খুঁজে পায় বটে, কিন্তু তার এমন কীর্তির কারণ পরিষ্কার হয় না। 

সিরিজ়ে অপরাধ ঘটানোর জন্য যে সব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলিতে যথেষ্ট নতুনত্ব রয়েছে। শেষ পর্যন্ত না দেখলে, এই সরঞ্জাম অপরাধীর হাতে কোথা থেকে এল, তা অনুমান করা কঠিন। পর্ব বিভাজন যথাযথ হলেও অতীতের ঘটনা, এবং হ্যালুসিনেশনের দৃশ্যগুলি দেখানোর ক্ষেত্রে আরও কিছুটা ক্যামেরার মুন্সিয়ানা দেখানোই যেত।

আরও পড়ুন: যন্তর মন্তর কক্ষের নেপথ্যে

থ্রিলার হলেও ‘ইন্দু’র কাহিনী একমুখী নয়। বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত দৃশ্য ও কিছু চরিত্রের আচার-ব্যবহার দেখে বোঝা যায়, প্রতিটি চরিত্রের একটা প্রেক্ষাপট আছে, অতীত আছে। সেই অতীত নিয়ে তারা নাড়াচাড়া করতে চায় না। প্রত্যেকটি চরিত্রের নিজস্ব রহস্যময়তা কাহিনীকে অনেকগুলি স্তর দিয়েছে। তবে রহস্যের আড়ালে যে রয়েছে, শুরুর কয়েকটি পর্বের পর তাকে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। অন্তিম পর্বে সেই আন্দাজ সত্যিও হয়ে যায়। চরিত্রটিকে ঘিরে বেড়ে ওঠা অকারণ জনপ্রিয়তাই যেন তার সকল রহস্যময় কীর্তির ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হয়।

অপরাধ-কাহিনীর ক্ষেত্রে শুধু অপরাধীকে ধরলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। একই সঙ্গে অপরাধীর উদ্দেশ্যও জানা দরকার। সায়ন্তন সেই কাজটি পরবর্তী সিজ়নের জন্য তুলে রেখেছেন। 

আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে-পথে দেওরিয়াতাল

‘ইন্দু’র নামভূমিকায় রয়েছেন ইশা। আটটি পর্ব জুড়েই তাঁর অভিনয় লক্ষণীয়। অনুসন্ধিৎসু, অথচ সসঙ্কোচে থাকা নববধূর ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করেছেন তিনি। তবে কয়েকটি দৃশ্যে তাঁকে ছাপিয়ে গিয়েছেন দেওর সুজাতর ভূমিকায় থাকা সুহোত্র। ইন্দুর স্বামীর ভূমিকায় চন্দ্রনিভ এবং ননদাই মিহিরের চরিত্রে যুধাজিতের অভিনয় যথাযথ। রক্ষণশীল শাশুড়ির ভূমিকায় মানসী, ইন্দুর বোন মিলির চরিত্রে তনিকা ও ছোট ননদ পৌষালি ওরফে মিমির অভিনয়ও উল্লেখযোগ্য। মানসিক ভারসাম্যহীন বড় ননদ খুশির ভূমিকায় বিশেষ প্রশংসার দাবি রেখেছন পায়েল। মানালিকে খুব বেশি দৃশ্যে পাওয়া না গেলেও, অনুমান করা যায় আগামী সিজ়নে তাঁর বড় ভূমিকা থাকবে। এছাড়া একটি বিশেষ চরিত্রে অনুরাধাও দর্শকের মনে কৌতূহল জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।




‘ইন্দু’র কাহিনী ও চিত্রনাট্য অত্যন্ত দক্ষভাবে বুনেছেন সাহানা দত্ত। বিনীতরঞ্জন মৈত্রের তৈরি আবহ এই সিরিজ়টিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। রহস্যের খাসমহল তৈরি হয়েছে কেবল দুই বাড়ির ভেতরে এবং বাড়ির বাইরের কিছু অংশে। আলো-আঁধারির এক অনন্য খেলা ছড়িয়ে রয়েছে গোটা সিরিজ় জুড়ে। এর জন্য সুদীপ্ত মজুমদারের বিশেষ প্রশংসা প্রাপ্য। রবিরঞ্জন মৈত্রের সম্পাদনাও যথাযথ।

সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে, কিছু প্রশ্ন রেখেই এক যৌথ পরিবারের অন্দরমহলকে রহস্যের খাসমহল হিসেবে গড়ে তুলতে সফল সায়ন্তন। তবে এই রহস্যের পুরোপুরি সমাধান পেতে পরবর্তী সিজ়ন খুব তাড়াতাড়ি আসুক, এটাই চাইবেন দর্শক।



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Diptajit

An avid reader and a passionate writer of crime fiction. Poems and verses are his second calling. Diptajit is the editor of a Bengali magazine. Nothing makes him weaker than books, films and food

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *