ওয়েব সিরিজ়ে সোনার কেল্লা, জয়সলমের সত্যিই জমজমাট
ওয়েব সিরিজ়: জয়সলমীর জমজমাট
পরিচালনা: অর্ণব রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়ে: সব্যসাচী চৌধুরী, মেঘলা দাশগুপ্ত, রাজদীপ পাল, অমৃতা দেবনাথ, অভিষেক সিংহ, দেবতনু, দেবাশীষ নাথ, শাহির রাজ, মৌমিতা পাল, ওঙ্কার ভট্টাচার্য, সৌমিত্র বসু (ডিউক), সৌম্য মুখোপাধ্যায়, স্বর্ণাভ সাধুখাঁ, প্রতীক রায়
পর্ব সংখ্যা: ৫
ওটিটি: ক্লিক
RBN রেটিং ★★★★★★☆☆☆☆
পশ্চিম রাজস্থানের প্রতি বাঙালির কস্মিনকালেও আগ্রহ জন্মাতো না যদি ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ (Goopy Gyne Bagha Byne) এবং পরবর্তীতে ‘সোনার কেল্লা’ (Sonar Kella) ছবিটি তৈরি না হতো। এই দুটি ছবির সাফল্য ত্রিকূট পাহাড়ের ওপর রাজা রাওয়াল জয়সলের তৈরি এই কেল্লাকে সুপরিচিত তো করেইছে, উল্টে সারাবছর বাঙালি ট্যুরিস্ট আসার পাকাপাকি ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই তৈরি হয়েছে পরিচালক রিঙ্গোর ওয়েব সিরিজ় ‘জয়সলমীর জমজমাট’ (Jaisalmer Jomjomat)।
সিরিজ়ের কাহিনি শুরু হয় দূরপাল্লার ট্রেনে জয়সলমের যাত্রা দিয়ে। স্ত্রী মধু (মৌমিতা), মেয়ে ঐশী (অমৃতা) ও ছেলে রিভুকে (ওঙ্কার) নিয়ে ব্যাংক ম্যানেজার রজতবাবু (দেবাশিস) চলেছেন সোনার কেল্লা দেখতে। ট্রেনে আলাপ হয় দাশগুপ্ত দম্পতির সঙ্গে। ফেলুদার পাড়ার লোক নীলাঞ্জন (সব্যসাচী) আর ঋতুপর্ণাও (মেঘলা) চলেছে সোনার কেল্লা দেখতে। ওদিকে ঐশীর বিশেষ বন্ধু ধ্রুবও (রাজদীপ) কলকাতা থেকে আসছে বাইক নিয়ে, সঙ্গে বন্ধু জয় (ডিউক)। কিন্তু এর মধ্যে নিখোঁজ তাদের আর এক বন্ধু রাকেশ (দেবতনু)। সোনার কেল্লায় পৌঁছে ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা, ঘনিয়ে ওঠে রহস্য।
আরও পড়ুন: রাজ কপূরের বাড়িতে সিমিকে দেখে পছন্দ করেন সত্যজিৎ রায়
সোনার কেল্লা বললেই বাঙালির মন অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পেতে চায়। একইসঙ্গে বেড়ানো আর রহস্য সমান্তরালে চলবে আবার নস্টালজিয়াও খানিক ছুঁয়ে যাবে, তবেই তো চোখের আরাম আর মনের তৃপ্তি। তাই গরমের ছুটিতে বাড়ি বসে রাজস্থান ভ্রমণ আর সঙ্গে একখানা টাটকা থ্রিলার কাহিনি পাওয়া, বাঙালির প্রায় আঠারো আনা লাভই বলা চলে।
রাজস্থান রাজ্যের সীমান্ত অর্থাৎ ভারতের বর্ডার এলাকা। ওপারে পাকিস্তান। সোনার কেল্লার সঙ্গে যার দূরত্ব খুব বেশি হলে কয়েক ঘণ্টার। এই ভৌগোলিক সুবিধা থাকার জন্যই থর মরুভূমিকে ব্যবহার করে জঙ্গি কার্যকলাপ থেকে শুরু করে বেআইনি দ্রব্যের আদানপ্রদান নতুন ঘটনা নয়। উপরন্তু ইদানিং মানুষের পরিবর্তে ড্রোন ব্যবহার করেও অনায়াসেই মাদক দ্রব্যের ছোট প্যাকেট পাচার করা সহজ হয়ে গেছে। গল্পে তেমনই এক রহস্যময় প্যাকেটকে কেন্দ্র করে ঘটে যায় একাধিক ঘটনা।
গোটা পরিবার সমেত রিল তৈরি বা রাজস্থান পৌঁছে সকলে মিলে নাচানাচি করে ভিডিয়ো তোলা একটু চোখে লাগলেও বর্তমানে এটাই বহুলাংশে বাঙালির কালচারের অংশ। তবে আটদিনের ট্যুরে শুধুমাত্র জয়সলমেরে কেউ থাকতে যায় না। অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছেও দেখা গেল না কারোর। আবার কলকাতা থেকে ট্রেনে সরাসরি জয়সলমের যাওয়াও সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিচ্ছু বা রমেনের উপস্থিতি কেন ওইটুকু অংশে সীমাবদ্ধ হয়ে রইল স্পষ্ট হয় না। পরবর্তী সিজ়নের প্রস্তুতি হিসেবে ভালই, তবে অভিষেকের অংশ আর একটু থাকলে ভালো লাগত। আনোয়াররূপে প্রতীকের অংশও আর একটু বেশি রাখা যেত। দুজনেই ভালো অভিনেতা, সিরিজ়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দুজনেরই রয়েছে।
সিরিজ়ের বেশিরভাগ অভিনেতাই নতুন। ফলে অভিনয়ে স্বতঃস্ফূর্ততার কিছুটা অভাব থেকেই যায়। ছোট্ট রিভুর ভূমিকায় ওঙ্কার খুব ঝকঝকে আর স্মার্ট। অমৃতাও তাঁর চরিত্রে সুন্দর মানিয়ে গিয়েছেন। বাকিরা সকলেই যথাযথ। সব্যসাচী ও মেঘলার চরিত্র আর একটু অ্যাকশনধর্মী হতে পারত। মুকেশের চরিত্রে শাহির নিজের অভিনয় দক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন। ভবিষ্যতে বড় চরিত্রে তাঁকে দেখার আশা রইল। এছাড়াও বন্ধুর চরিত্রে ডিউক তাঁর চরিত্রের প্রতি সুবিচার করেছেন। অন্য ধরনের চরিত্রে দেবতনু মানানসই।
আরও পড়ুন: পাল্প নয়, সত্য ঘটনা অবলম্বনে ‘মৃগয়া’: অভিরূপ ঘোষ
সিরিজ়ের টাইটেল কার্ড ও শীর্ষ আবহ মজাদার, একইসঙ্গে নস্টালজিকও। ড্রোন শটে বেশ কিছু দৃশ্য দেখতে ভালো লাগে। হলদেটে কালার প্যালেটে পুরো সিরিজ়ের দৃশ্যগ্রহণ চোখকে তৃপ্তি দেয়। এছাড়াও মশালের আলোয় তোলা মরুভূমির দৃশ্যের জন্য পরিচালকের প্রশংসা প্রাপ্য। রিঙ্গোর তৈরি সিরিজ় বা ছবি সাধারণত একটু সিরিয়াস গোছের হয়ে থাকে। এই প্রথমবার সিরিয়াস কাহিনীর আড়ালে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি পরিবারের কাহিনীকে জুড়ে দিয়ে একটা ফিল গুড ব্যাপার আনা হয়েছে, যেটা দর্শক উপভোগ করবেন। এছাড়াও মুকুলের বাড়িকে গল্পের এক বিশেষ অংশে ব্যবহার করা সত্যি চমকপ্রদ। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া কাশ্মীর কাণ্ডের বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে গল্পের মিল কাকতালীয় হলেও দর্শককে চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই পাঁচ এপিসোডের সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়ন আসুক বা না আসুক, এবারের পর্ব সোনার কেল্লাপ্রেমী দর্শককে হতাশ করবে না।
