পরিণত কোয়েল, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের বার্তা
ছবি: জঙ্গলে মিতিন মাসি
পরিচালনা: অরিন্দম শীল
অভিনয়ে: কোয়েল মল্লিক, শুভ্রজিত দত্ত, অসীম রায়চৌধুরী, লেখা চট্টোপাধ্যায়, কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সামিউল আলম, অমিত সাহা
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা
RBN রেটিং ★★★★★★☆☆☆☆
একসময় দুর্গাপুজোর আনন্দের পাশাপাশি নতুন নতুন পূজাবার্ষিকীর রোমাঞ্চ ছিল অন্যতম। সেরকমই এক পূজাবার্ষিকীর পাতায় প্রথম প্রকাশিত হয় সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘সারান্ডায় শয়তান’। পুরুষ গোয়েন্দাদের ভিড়ে একজন মহিলা গোয়েন্দার সেনসেশন ছিল আলাদা রকমের। ছোটবেলার সেই উন্মাদনা যেন বারবার ফিরিয়ে আনছেন অরিন্দম। পুজোর শুরুতেই মুক্তি পেয়েছে ‘সারান্ডায় শয়তান’ অবলম্বনে ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’।
জঙ্গল, বন্যপ্রাণ, চোরাশিকার আর গোয়েন্দা এই চার উপাদান একত্রিত হলে টানটান উত্তেজনার সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। ছবির শুরুতেই হাতির চোরাশিকার এবং তারপরেই মিতিনের (কোয়েল) ধামাকেদার এন্ট্রি। একাই মেরে কাবু করে ফেললেন জনা দশেক ষণ্ডা লোককে। তাতে অবশ্য কিছুই এসে যায় না। কারণ একই কাজ নর্মদা রাই করতে পারলে গল্পের মিতিন কেন পারবে না! চোরাশিকার ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে মিতিনের বলা সংলাপ কোনওভাবেই আরোপিত মনে হয় না। ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালক একটিই বার্তা দিতে চেয়েছেন। সেটি হলো বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ শুধু সবার কর্তব্যই নয়, প্রয়োজনও।
মূল গল্প সকলেরই জানা। গল্পে সারান্ডার জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে চোরাশিকারীদের হাত থেকে জঙ্গল এবং বন্যপ্রাণী বাঁচানোর জন্য মিতিন নেমে পড়ে তদন্তে। তবে ছবিতে জঙ্গলকে বাঁচানোর জন্য বনদপ্তর থেকে মিতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অতঃপর মিতিনের সদলবলে জঙ্গল অভিযান এবং শেষ পর্যন্ত চোরাশিকারীর দলকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার।
আরও পড়ুন: আবারও চমক বিবেক অগ্নিহোত্রীর
‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’ মূলত ছোটদের জন্য। যারা এখন খুব একটা বইপোকা নয় তাদের ভালো লাগবে। এই ধরণের ছবিগুলো কিছুটা হলেও বাংলা সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। যাঁরা মিতিন পড়েছেন ভালো লাগবে তাঁদেরও। মূল কারণ ছবির সিনেমটোগ্রাফি। জঙ্গলের অসামান্য সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে পর্দায়। যাঁরা পুজোর ছুটিতে জঙ্গলে ঘুরতে যেতে চেয়েও পারেননি, তাঁদের সেই মনখারাপ কিছুটা হলেও মিটবে।
মিতিন হিসেবে কোয়েল প্রথম ছবিটির থেকে অনেকটাই পরিণত। বেশ কিছু অ্যাকশন দৃশ্যে তার ফিটনেস চোখে পড়ার মতো। তবে গল্পের মিতিন একটু বেশি ঘরোয়া। এই ছবিতে টুপুর চরিত্রাভিনেতা বদল হয়েছে। টুপুরের চরিত্রে লেখা সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি। পার্থর চরিত্রে শুভ্রজিত যথাযথ।
আরও পড়ুন: বড়পর্দায় ফিরছেন দেবশ্রী, সঙ্গী মিঠুন
সুচিত্রার মূল উপন্যাসে মিতিনের জামাইবাবু অবনী সম্পর্কে লেখা আছে: ‘অবনী দায়ে না পড়লে বেশি বাক্য উচ্চারণই করেন না।‘ পেশায় অধ্যাপক অবনী পেশাগত কারণেই শান্ত। তবে এই ছবিতে অবনীর ভূমিকায় অসীম একেবারেই বেমানান। সহেলীর ভূমিকায় কমলিকা যথাযথ। অভিনয়ে মন কেড়েছে সুমাইয়ার ভূমিকায় সামিউল। বিক্রম ঘোষের আবহ জমাটি। শুভা মুদগলের কণ্ঠে ‘গহন উপবন’ শুনতে দারুণ লাগে। ছবির ভিএফএক্স আরও পরিণত হওয়া উচিত ছিল।
গল্পের পাতায় লেখা চরিত্র নিয়ে পাঠকের কল্পনার সঙ্গে ছবির পর্দায় ফুটে ওঠা বাস্তবের ফারাক বিস্তর। খুব কম পরিচালক আছেন যাঁরা বই আর ছবির এই দূরত্বকে কমাতে পেরেছেন। মিতিন মাসির ক্ষেত্রে অরিন্দম অন্তত সেটা পারেননি। সুচিত্রার লেখা মিতিনকে পর্দায় তেমন পাওয়া গেল না। তবু মিতিনের গল্পগুলো ছোটদের পাঠোপযোগী হওয়ায় তাদের জন্য এই ছবি বেশ উপভোগ্য।
পরিশেষে পরিচালকের উদ্দ্যেশে একটাই বক্তব্য, মিতিন নিয়ে ছবিতে বুমবুমকে বাদ না দিলেই হয়ত ভালো করতেন।