সেরা প্রাপ্তি পটল-পোস্ত
ছবি: বাবা, বেবি ও…
পরিচালনা: অরিত্র মুখোপাধ্যায়
অভিনয়ে: যীশু সেনগুপ্ত, শোলাঙ্কি রায়, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, রজত গঙ্গোপাধ্যায়, মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, রেশমি সেন, সায়ন্তনী মুখোপাধ্যায়
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট
RBN রেটিং: ৩/৫
বিজ্ঞানের যত উন্নতি হচ্ছে, মানুষের জীবনযাপনেও তার প্রভাব পড়ছে। আজকাল আর পিতা বা মাতার দায়িত্ব পালন করতে বিয়ে করা বা দত্তক নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই সমাজের রক্ষণশীল মানসিকতাকে উপেক্ষা করে সারোগেসির মাধ্যমে শিশুর জন্ম দিচ্ছেন। তবে যাঁরা সিঙ্গল ফাদার, বা সিঙ্গল মাদার, তাঁদের পক্ষে কি শুধুমাত্র শিশু এবং পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব? একাকীত্ব কি কখনও তাঁদের গ্রাস করে না?
এই ছবির নায়ক মেঘ (যীশু)। চল্লিশোর্ধ্ব মেঘ প্রথম জীবনে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে আর কোনও সম্পর্কে জড়ায়নি। সে বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে। তার খুব শখ বাবা হওয়ার। তাই সে সিঙ্গল ফাদার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ছবির শুরু সেখানেই। মেঘের বাবা (রজত) ও মা (রেশমি) ছেলের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান। মেঘের বন্ধু রাজ (মৈনাক) সবসময় তার পাশে থাকে।
যথাসময়ে যমজ পটল ও পোস্তর জন্ম হয়। তাদের নিয়ে নিজের মতো করে এগিয়ে চলার মাঝেই মেঘের জীবনে আসে বৃষ্টি (শোলাঙ্কি)। পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটা খেলনার দোকান চালায় বৃষ্টি। একটা সময় রাজ বুঝতে পারে, মেঘ ক্রমে বৃষ্টির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। মেঘ-বৃষ্টির আলাপ যখন ক্রমে গাঢ় হয়ে উঠছে, ঠিক সেই সময় বৃষ্টির বাগদত্ত সিডনিনবাসী সৌভিকের (গৌরব) প্রবেশ ঘটে।
আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ
ছবির দ্বিতীয়ার্ধের অনেকটা জুড়েই রয়েছে সৌভিক। মেঘ এবং বৃষ্টির ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনী সমান্তরালভাবে চলতে থাকে। বৃষ্টিও তার নিজের জীবনে জর্জরিত। মায়ের (বিদীপ্তা) সঙ্গে থাকা বৃষ্টি কোথাও গিয়ে বুঝতে পারে সৌভিক ও তার সম্পর্কটা আর আগের জায়গায় নেই। নেহাত দীর্ঘদিনব্যাপি সম্পর্কের খাতিরেই যেন সেটা না-থাকার মতো করে রয়ে গেছে। এরপরের ঘটনা প্রেক্ষাগৃহে দেখার জন্য তোলা থাক।
প্রধান অভিনেতা হিসেবে যীশুর ওপরে অনেকখানি দায়িত্ব ছিল। তিনি তাতে সফল। পাশাপাশি রজত, রেশমি বিদীপ্তাও যথাযথ। যীশুর বিপরীতে শোলাঙ্কিকে বয়সে অনেকটা ছোট লাগলেও, ছবির দাবী অনুযায়ী তাঁকে মানিয়ে গিয়েছে। তবে বিশেষ করে বলতে হয় মৈনাকের কথা। পার্শ্বচরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি মাতিয়ে রাখলেন। ছোট-ছোট প্রতিক্রিয়া থেকে শুরু করে কমিক টাইমিং, সবেতেই মৈনাক দুর্ধর্ষ। গৌরবের থেকে আরও বেশি প্রত্যাশা থাকলেও তাঁর অভিনয়ে বিশেষ নতুনত্ব চোখে পড়েনি। তবে এর জন্য কিছুটা চিত্রনাট্যকেও দায়ী করা চলে।
তবু এই সকল পেশাদার শিল্পীদের ছাপিয়ে দর্শকমনে যে দুজন দাগ কাটতে বাধ্য, তাঁরা শুধু হাতপা নাড়া, আর কয়েকবার ‘মাম্মা’ ও ‘বাবা’ ছাড়া কিছুই বলেননি। এই ছবির সেরা প্রাপ্তি মেঘের যমজ সন্তান পটল ও পোস্তর ভূমিকায় প্রায় নির্বাক দুই অভিনেতা। তাঁরা যতবার পর্দায় ভেসে ওঠে, ততবার তাদের আদর করতে ইচ্ছে করে।
সমাজের ট্যাবু, হাসি-মজা, গভীর প্রেম, সব মিলিয়ে সুন্দর কাহিনী লিখেছেন জিনিয়া সেন। তবে দুই অর্ধ মিলিয়ে ছবির দৈর্ঘ্য একটু বেশিই মনে হয়। সেই দীর্ঘাংশ বাদ দিয়ে দৈর্ঘ্য আরও পনেরো মিনিট কমে গেলেও তেমন কোনও ক্ষতি হতো না। ছবির সংলাপ লিখেছেন সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবির প্রথমার্ধের সমানুপাতে দ্বিতীয়ার্ধেও হাস্যরসের সংলাপ থাকলে ভালো হতো। তাতে দ্বিতীয়ার্ধের কিছুটা একঘেয়ে ভাব কেটে যেত।
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
চমক হাসান এবং অমিত-ঈশানের সঙ্গীত পরিচালনা শ্রুতিমধুর। বিশেষ করে ছবির শুরুতে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘বাবা হওয়া এত সোজা নয়’ এবং দ্বিতীয়ার্ধে চমক হাসানের কণ্ঠে ‘এই মায়াবী চাঁদের রাতে’ গানদুটি বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। শুভঙ্কর ভড়ের ক্যামেরার কাজ ভালো।
সব মিলিয়ে বসন্তের সূচনাকালে প্রেম, মজা ও সমাজের ট্যাবু ভাঙার কাহিনীর এই মিশেল একবার দেখে আসাই যায়।