পদাবলীর হাত ধরে মঞ্চে ফিরল ‘ক্ষুদিরাম’
কলকাতা: ২৯ এপ্রিল, ১৯০৮। ব্যভিচারী বড়লাট ডগলাস কিংসফোর্ডকে গুপ্তহত্যা করার দায়িত্ব এসে পরে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর ওপর। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বড়লাটকে মারতে গিয়ে তাঁরা বোমা মারেন অন্য ইংল্যান্ডবাসী প্রিঙ্গল কেনেডির স্ত্রী ও মেয়ের গাড়িতে। ধরা পড়ার পূর্বেই আত্মহত্যা করেন প্রফুল্ল, গ্রেপ্তার হন ক্ষুদিরাম। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ফাঁসি হয় ক্ষুদিরামের। মৃত্যুদিন পর্যন্ত তাঁর বয়সের হিসেব শুনে সেইসময় আঁতকে ওঠেন অনেকেই। ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন বয়েসের ছেলেটি কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত। ইতিহাসের তথ্যানুযায়ী ক্ষুদিরামই হলেন ভারতবর্ষের সর্বকনিষ্ঠ শহীদ।
ক্ষুদিরাম-প্রফুল্লর আত্মত্যাগের ঘটনাটি জানেন না এমন মানুষ বিরল। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকেই ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনে সম্প্রতি মঞ্চে উপস্থাপন করলেন যোগেশ মাইম আকাদেমির ছাত্রছাত্রীরা। ১৯৭৭ সালে পদাবলীর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘শহীদ ক্ষুদিরাম’, যার মূল ভাবনায় ছিলেন যোগেশ দত্ত। বর্তমানে এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আবারও সেই প্রযোজনা পরিচালক শান্তিময় রায়ের হাত ধরে নতুন ভাবে ফিরে এল।
“‘ক্ষুদিরাম’ যখন প্রথমবার মঞ্চস্থ হয় তখন নাম ভূমিকায় আমি অভিনয় করেছিলাম,” জানালেন শান্তিময়।“ এরপর নিজে যখন মূকাভিনয় শিক্ষার দায়িত্ত্ব নিই তখন বহুবার ‘ক্ষুদিরাম’ করার ইচ্ছে থাকলেও, লোকজনের অভাবে পিছিয়ে আসতে হয়। কয়েক মাস আগে আমরা আকাদেমিতে একটি তিন মাসের মূকাভিনয় প্রশিক্ষণের কোর্স চালু করি, যেখানে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। তাঁরা এবং পুরোনো কিছু ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই আমাদের এই প্রযোজনা। পরিচালনায় সাহায্য করেছেন দিলীপ ভট্টাচার্য।”
আরও পড়ুন: স্মরণে ঋতুপর্ণ, এই প্রথম কোনও ভারতীয় ছবিকে রাষ্ট্রসংঘের অনুমোদন
ভারতীয় মূকাভিনয় শিল্পের জনক প্রবাদপ্রতিম যোগেশ দত্তর কন্যা প্রকৃতি দত্তকেও দেখা গেল মঞ্চে। শুরুতে তিনি এবং আরও কয়েকজন শিল্পী গলা মেলালেন দেশাত্মবোধক কিছু গানে। ‘ক্ষুদিরাম’ প্রসঙ্গে প্রকৃতি জানালেন, “ছোটবেলা থেকে মূকাভিনয় দেখে বড় হওয়ার পাশাপাশি নিজেও অংশগ্রহণ করেছি একাধিক প্রযোজনায়। পরবর্তীকালে আমি গানকে বিষয় হিসেবে বেছে নিই। বাবা প্রথমদিকে বারকয়েক ‘ক্ষুদিরাম’ করলেও, মাঝখানে অনেকটা সময় এটা নিয়ে আর ভাবা হয়নি। হঠাৎ মনে হল আজকের দিনের পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে ক্ষুদিরামের সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকে আবার সবার সামনে উপস্থিত করলে ভালো হয়। তাই নতুনভাবে ‘ক্ষুদিরাম’-কে মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা নিই আমরা।” নতুন করে ‘ক্ষুদিরাম’-এর সংগীত করেছেন প্রকৃতি, যা এ প্রযোজনার অন্যতম সম্পদ।
‘ক্ষুদিরাম’-এর নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অরিন্দম বর্মণ। এছাড়াও ছিলেন শুভ চট্টোপাধ্যায়, সুশান্ত সাহা, দিশারী মুখোপাধ্যায়, অয়ন মুখোপাধ্যায়, রূপসা দে, মিষ্টি মণ্ডল, প্রিয়তোষ ধর, সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ ভট্টাচার্য ও আরও অনেকে। অরিন্দম ও দিলীপ দুজনেই জন্মবধির। ক্ষুদিরামের চারিত্রিক দৃঢ়তা মঞ্চে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুললেন তিনি।