মানিককাকু লিখে দিলেন, কোনও প্রতিষ্ঠানে অভিনয় শেখার দরকার নেই: জয়া বচ্চন
কলকাতা: তাঁর প্রথাগত অভিনয় শিক্ষার প্রয়োজন নেই, জয়া বচ্চন সম্পর্কে এমনটাই মনে করতেন চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। সত্যজিতের একটিমাত্র ছবিতে কাজ করেছিলেন অভিনেত্রী জয়া। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘অবতরণিকা’ গল্প অবলম্বনে সেই ‘মহানগর’-এর ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল নন্দনে এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। ছিলেন সন্দীপ রায়ও। তাঁর প্রথম ছবি ও পরিচালককে নিয়ে নানা কথা উঠে এল জয়ার স্মৃতিচারণে।
কিশোরী বয়সে, যখন স্কুলে পড়তেন, সেই সময় রুমা গুহঠাকুরতা, শর্মিলা ঠাকুর ও রবি ঘোষের সৌজন্যে তাঁর মানিককাকু অর্থাৎ সত্যজিতের সঙ্গে প্রথম আলাপ জয়ার। “আমি সিনেমা নিয়ে খুব একটা আগ্রহী ছিলাম না। তারপর উনি যখন ছবির কথা বললেন, তখন একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কারণ তখন কনভেন্টে পড়ি, স্কুলে যদি কিছু বলে। কিন্তু বাবা (তরুণকুমার ভাদুড়ি) বললেন, এটা আমার জন্য একটা বিরাট সুযোগ। এমন সুযোগ বারবার আসবে না। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটা তিনি আমার ওপরেই ছেড়ে দিয়েছিলেন,” জানালেন জয়া।
আরও পড়ুুন: জয়সলমেরে সত্যজিৎ রায়ের মূর্তি, উদ্যোগী রাজস্থান সরকার
‘মহানগর’ ছবিতে অভিনয় করার কিছু বছর পর পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন জয়া। “বাবা মানিককাকুকে অনুরোধ করেছিলেন তিনি যদি আমার নামে একটা সুপারিশপত্র লিখে দেন। উনি সোজা লিখে দিলেন, তোমার কোনও প্রতিষ্ঠানে অভিনয় শেখার দরকার নেই। আমি নিজেও বিশ্বাস করতাম অভিনয় শেখা যায় না। তাই কিছুটা দোনামনা করেই ভর্তি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, ভালো না লাগলে ছেড়ে দেব। কিন্তু সেখানে এমনই ভালো লেগে গেল যে থেকে গেলাম,” বললেন তিনি।
তাঁর সঙ্গে একই বছর পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করেন ড্যানি ডেনজ়ংপা, অনিল ধাওয়ানরা।
মঞ্চে, সন্দীপ রায়ের সঙ্গে
স্মৃতিচারণে উঠে এল শুটিংয়ের নানা কথা। জয়া জানালেন, “আমি চশমা পরতাম। মানিককাকু সেটা খুলে ফেলতে বলেননি। আমি তাতে বেশ খুশি হয়েছিলাম। উনি কখনও বলে দিতেন না কীভাবে কাজ করতে হবে। আমি যেভাবে করতাম, সেটাই করতে দিতেন। মুখে সাবান মাখার দৃশ্যটা আমি যেভাবে করেছিলাম, তাতে উনি খুব খুশি হয়ে এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আমি নিজেও খুব একটা প্রস্তুতি নিয়ে কোনওদিন অভিনয় করিনি। সেটে গিয়ে যেরকম মনে হতো করতাম। আর বেশি সংলাপ বলা আমার কোনওদিনই পছন্দের ছিল না।”
তবে ‘মহানগর’ ছাড়া বাংলায় আর খুব বেশি ছবি করেননি জয়া। তার মধ্যে ‘ধন্যি মেয়ে’ ও ‘সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা’ উল্লেখ্য। সত্যজিতের যে কোনও ছবিই তাঁর কাছে একইরকম প্রিয় বলে জানালেন অভিনেত্রী। তাঁর নিজের প্রিয় ছবি ‘দেবী’।
আরও পড়ুন: “আমার মতো অভিনেতাদের খুব একটা বেছে কাজ করার সুযোগ থাকে না”
সন্দীপ জানালেন, “একটি দৃশ্যে জয়াদির পড়া মুখস্থের একটি ব্যাপার ছিল। সেটা বাবা আলাদা করে অডিও করতে চেয়েছিলেন। সেটা করতে গিয়ে তিন-চার লাইন পড়ার পরেই নাক দিয়ে কেমন একটা শব্দ করল জয়াদি। বাবা বললেন, এটা কী হলো? জয়াদি বলল, বা রে, পড়তে গিয়ে নাকে মাছি ঢুকে যেতে পারে না নাকি!”
তবে আক্ষেপও রয়েছে ‘মহানগর’-এর বাণীর। “মানিককাকু যখন ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ করলেন তখন একবারও আমার কথা ওঁর মনে পড়ল না দেখে অবাক হয়েছিলাম আমি। অমিতকে (অমিতাভ বচ্চন) দিয়ে ভয়েসওভার করালেন আর আমাকে ভুলে গেলেন! পরে অবশ্য নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি এই ভেবে যে ওই সময়ের লখনৌয়ের কোনও চরিত্রে হয়তো আমাকে মানাত না,” বললেন জয়া।
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য