“আমার মতো অভিনেতাদের খুব একটা বেছে কাজ করার সুযোগ থাকে না”

ব্যোমকেশ বক্সীর সহকারী নিপাট ভালোমানুষ অজিতই হোক বা প্রজাপতির সুখেন গুন্ডা, যে কোনও চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে তাঁর অসুবিধা হয় না। বাংলা এবং হিন্দি মিলিয়ে একের পর এক কাজ করে চলেছেন তিনি প্রায় নীরবেই। এই মুহূর্তে কলকাতা-মুম্বই করে বেড়ানো অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী, ভার্সেটাইল অভিনেতা সুব্রত দত্ত তাঁর আগামী প্রজেক্ট ও চরিত্র নিয়ে কথা বললেন রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে। 

তুমি তো সাংঘাতিক ব্যস্ত, সারাক্ষণ কলকাতা-মুম্বই করছ। এর মধ্যে কী-কী কাজ করলে একটু বলো 

সুব্রত: পরপর অনেকগুলো কাজ করেছি এটা ঠিক। ‘গুটলি লাড্ডু’ নামে একটা হিন্দি ছবি আসছে সঞ্জয় মিশ্রর সঙ্গে। ২০২১-এর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে এটা হীরালাল সেন পুরষ্কার পেয়েছিল। এছাড়া ‘টি ফর তাজমহল’ ছবিটা সলমন খানের সংস্থা কিনেছে। সেটাও এই বছরেই কোনও এক ওটিটিতে মুক্তি পাবে। এছাড়া সুব্রত সেনের ছবি ‘সমরেশ বসুর প্রজাপতি’ মুক্তি পাবে আগস্টে। তারপর বাবা যাদবের পরিচালনায় ‘পাখি’ নামে একটা ছবি আসছে। এটার নাম আগে ছিল ‘গুরুজি’। আমি সেই গুরুজির চরিত্রটা করেছি। তবে পরে নামটা পাল্টে যায়। অঙ্কুশ (হাজরা) ও শুভশ্রী (গঙ্গোপাপাধ্যায়) রয়েছে এই ছবিতে। আমি এক সমকামীর চরিত্রে রয়েছি। এটা থ্রিলার ছবি। এছাড়া জয়দীপদার (মুখোপাধ্যায়) ‘কাঁটায় কাঁটায়’ ছবিতে পুলিশ অফিসারের চরিত্র করেছি। 



বাংলা বা হিন্দি ছবিতে নায়ক বলতে যা বোঝায় তেমনভাবে তোমাকে আমরা পাইনি কখনও। আবার ‘প্রজাপতি’তে তুমি এমন এক নায়কের চরিত্র করলে যাকে ঠিক প্রথাগতভাবে নায়ক বলা যায় না। আবার নেগেটিভও বলা যায় না। কীভাবে দেখেছিলে তুমি চরিত্রটা? 

সুব্রত: আমি নিজেকে নায়ক হিসেবে কোনওদিন ভাবিনি। বরং মুখ্য চরিত্রাভিনেতা বা লিড অ্যাক্টর হিসেবেই নিজেকে দেখে এসেছি বরাবর। সমরেশ বসুর উপন্যাসটা আমার আগেই পড়া ছিল। যে সময় থেকে সুব্রতদা ‘প্রজাপতি’ নিয়ে ভাবছেন, রাইটস কিনছেন, তখন থেকেই আমরা একসঙ্গে চিন্তাভাবনা করেছি ছবিটা নিয়ে। কাজেই ছবির যে মূল চরিত্র সুখেন, সেটা আমার ভেতরে ধীরে-ধীরে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এটা আমার কেরিয়ারের খুব প্রিয় চরিত্র হয়ে থাকবে। 

এটা যে সময়ের গল্প, ছবিতে ঠিক সেই সময়টাকে আমরা পাই না। সেটা কি ছবির সুবিধার জন্যই করা হয়েছে? 

সুব্রত: আমরা সেই সময়কালটা কিছুটা এগিয়ে এনেছিলাম। সেই সময় বইটা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। কাজেই ছবি হিসেবে তখন এমন অনেককিছুই দেখানো যেত না যেটা আজ দেখানো সম্ভব। তবে ছবির বাহ্যিক দিকের থেকেও তার মূল বক্তব্যটা আমার মনে হয় দর্শককে ভাবতে বাধ্য করবে। সুখেনের মনোলগ দর্শককে সাহায্য করবে চরিত্রটাকে বুঝতে। আর এখন ছবিটা করার ফলে কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে আঘাত না করেই মূল বক্তব্যকে বুঝিয়ে দেওয়া অনেক সহজ হয়েছে। 

আরও পড়ুন: জয়সলমেরে সত্যজিৎ রায়ের মূর্তি, উদ্যোগী রাজস্থান সরকার

সুখেনকে তৈরি করতে গিয়ে কতটা পড়াশোনা করতে হয়েছে? 

সুব্রত: ছবির গল্পটা পুরুলিয়ার সেটআপে রয়েছে। আর আমি যেহেতু বাঁকুড়ার ছেলে তাই ওই বিশেষ মফস্বলের জীবনযাত্রা, আচার-আচরণের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। ওই জায়গার প্রাকৃতিক রুক্ষতা, শুষ্কতা বা সামাজিক প্রেক্ষাপট, কারখানা অঞ্চলের প্রাত্যহিক খুঁটিনাটি এগুলো আমি দেখেছি বহু আগেই। তাই খুব একটা কঠিন ছিল না কাজটা।

‘ব্যোমকেশ’ ওয়েব সিরিজ়ে অজিত হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরেও ছেড়ে দিলে কেন? 

সুব্রত: ‘ব্যোমকেশ’ তিনটে সিরিজ়ের পর আমি আর করিনি। তার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে অজিত চরিত্রের লুক। যেহেতু এটা পিরিয়ড পিস, তাই চুল দাড়ি কেটে একটা ছাপোষা বাঙালির লুক আনতে হয়। আর আমি যেহেতু মুম্বইতে থাকি, তাই ওখানকার কাজগুলোর জন্য আবার চুল বাড়িয়ে নিজের লুকে ফিরতে অনেকটা সময় লাগে। তাতে আমার অন্য কাজগুলোয় অসুবিধা হচ্ছিল। অজিতের লুকটা একদম ক্লিন শেভড লুক। আর হিন্দিতে যে কাজগুলো করি তার জন্য আমাকে তিনমাস আগে থেকে তৈরি থাকতে হয়। এদিকে বাংলায় কবে কাজ হবে, খুব একটা বেশি আগে থেকে সেটা ঠিক করা থাকে না। সেই সময় এই অসুবিধাটা হয়েছিল। আমার সঙ্গে প্রযোজনা সংস্থার কোনও সমস্যা হয়নি। তবে তারপরেও তো অনেকগুলো সিজ়ন হয়ে গেল। আমার কাছে পরে আর ডাক আসেনি। ডাক এলে আমার না করার তেমন কোনও কারণ ছিল না। 

আরও পড়ুন: ৩৪ বছর পর একসঙ্গে ‘রামায়ণ’ জুটি

তোমার চেহারায় এমন একটা ব্যাপার আছে যাতে পজ়িটিভ এবং নেগেটিভ দু’ধরণের চরিত্রেই মানিয়ে যায়। সেই জন্যই কি সচেতনভাবে দু’রকম চরিত্রই করে থাকো? 

সুব্রত: দেখো, সত্যি বলতে কী সলমান খান, শাহরুখ খান, আমির খান বা ওই সময়ের আরও কয়েকজন অভিনেতা আর দক্ষিণের বড়মাপের অভিনেতারা ছাড়া, আর কেউ নিজের ইচ্ছেমত কনটেন্ট বেছে নিতে পারে না। কারণ এরাই ভারতীয় ফিল্মের শেষ স্টার। এক যদি নায়ক নিজেই প্রযোজক হয় তাহলে হয়তো করতে পারে। এর বাইরে অভিনেতাদের খুব একটা বেছে কাজ করার সুযোগ থাকে না। বরং কাজই অভিনেতাকে বেছে নেয়। তবে ছোট-ছোট চরিত্রগুলো, যেগুলো বড় নায়কের আড়ালে থাকে, সেরকম চরিত্র এখন আর করব না। পঁচিশ বছর হয়ে গেল অভিনয় করছি। এখন আমি এটাই দেখি, যে চরিত্রটা আসছে সেটায় আমার জন্য কোনও চ্যালেঞ্জ আছে কিনা। নিজের করার মতো কিছু থাকলে তবেই সেটা করব। 



তোমাকে প্রায় সব জায়গায় সিরিয়াস চরিত্রে দেখা যায়। কমেডি নিয়ে কিছু ভেবেছ কখনও?

সুব্রত: কমেডি তো করলাম। সৌরভ চক্রবর্তীর ওয়েব সিরিজ় ‘সাড়ে সাঁইত্রিশ’-এ দারুণ কমেডি করেছি। এর আগে অক্ষয় কুমারের সঙ্গে ‘শৌকিন’ ছবিতেও কমেডি চরিত্র ছিল আমার। অজিত করতে গিয়েও চরিত্রটায় হালকা কমেডির ছাপ থাকত। চরিত্র যেমন আসবে সেই অভিনয়টাই করব আমি। আরে আমি তো ভেজ রেস্তোরাঁ নই যে পজ়িটিভ চরিত্র করি বলে নেগেটিভ করব না, আবার নেগেটিভ করি বলে কমেডি করব না। আমি একজন অভিনেতা, অর্থাৎ ফাইভ স্টার হোটেল, পরিচালক যেমন চাইবে আমি সার্ভ করতে রাজি আছি। পারিশ্রমিক আর চরিত্র এই দুটো জিনিস ঠিক থাকলে আমার কাজ করতে কোনও সমস্যা নেই। এমনকি চরিত্র যদি তেমন পছন্দ হয়, সেখানে কম পারিশ্রমিকেও আমি কাজ করেছি। 

পরিচালনায় আসার কোনও ইচ্ছে আছে?

সুব্রত: এই মুহূর্তে অভিনয় ছাড়া আর কোনও ফোকাস নেই। যদি এমন কখনও হয় যে কোনও গল্প নিজের মতো করে বলতে চাই, তাহলে হয়তো ভেবে দেখব। তবে আমার ভেতরে যতটুকু অভিনয় আছে সেই অনুযায়ী এখনও অনেককিছু দেওয়া বাকি। এনএসডিতে থাকাকালীন যা কিছু শিখেছি সেই মাপের চরিত্র যে খুব বেশি পেয়েছি তেমন নয়। আমি অ্যাকশন ভালো করি। কিন্তু বাংলায় অ্যাকশন ছবি সেভাবে হয় না। তাই আগে অভিনয়টা ভালো করে করি, পরে না হয় পরিচালনা নিয়ে ভাবা যাবে।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *