একই হত্যার দুই সত্য দেখাবে ‘ইকির মিকির’

কলকাতা: অতিমারীর ভয়াবহ দিন। ঘরে বসে সময় কাটানো ছাড়া উপায় নেই। বাচ্চাদের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। নতুন জীবনে তাদের অভ্যস্ত করাতে বাবা-মায়েরা জেরবার। এদিকে বহু মানুষ কর্মহীন। বাড়ির লোক বাইরে থাকলে তার ফেরার উপায় নেই। জীবনযাত্রার সমস্ত সহজ সরল পদ্ধতি কার্যত বন্ধ। এমনই এক দিনে সুরশার ফ্ল্যাটে খাবার ডেলিভারি করতে আসে রঞ্জন। এদিকে সেই রাতেই খুন হয়ে যায় আবাসনের সিকিউরিটি গার্ড। তদন্তকারী পুলিশ অফিসার রঞ্জন ও সুরশার বয়ানে প্রচুর অসঙ্গতি খুঁজে পায়, যা রীতিমতো অস্বাভাবিক। কী হয়েছিল আসলে সেদিন রাতে? একজন সিকিউরিটি গার্ডকে খুন করে কার উদ্দেশ্য সফল হলো? উত্তর পাওয়া যাবে পরিচালক রাতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘ইকির মিকির’ ছবিতে। এই ছবিতে অভিনয়ে রয়েছেন রজতাভ দত্ত, রূপাঞ্জনা মিত্র, সৌরভ দাস, দেবপ্রসাদ হালদার, অপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দিতা রায়চৌধুরী ও তিয়াসা। গতকাল শহরের এক রেস্তোরাঁয় ছবি নিয়ে একান্ত আড্ডায় পাওয়া গেল পরিচালক ও শিল্পীদের। 

ছবিতে মধ্যবয়স্ক রঞ্জনের ভূমিকায় রয়েছেন রজতাভ। এক দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও কন্যাকে হারিয়েছে সে। “থ্রিলার বলেই বেশি বলা যাবে না,” রেডিওবাংলানেট-কে বললেন রজতাভ। “তবে রঞ্জনের একটা অতীত রয়েছে। সে একসময় জেল খেটেছে। এক ঝড়ের রাতে রঞ্জন একটা পার্সেল ডেলিভারি করতে এক মহিলার ফ্ল্যাটে আসে। যদিও পরে জানা যায় যে রঞ্জন আসলে ডেলিভারি বয় নয়। সে অন্য একজনের হয়ে ডেলিভারি করতে এসেছিল।”

আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ

ছবিতে তিনটে ভার্শন রয়েছে বলে জানালেন তিনি। গল্পের কাঠামোটা এক রেখে ঘটনার প্রেক্ষিত বদলে যায় প্রত্যেকের বয়ানে। একজনের বয়ানে যাকে নিরীহ মনে হয়, অন্যজনের কথায় সেই হয়তো শয়তান।

“এটাই এই ছবির মজা,” বললেন রজতাভ, “এটা যে কোনও অভিনেতার কাছেই চ্যালেঞ্জিং। একই ঘটনার ভিন্ন-ভিন্ন রূপের মধ্যে কতভাবে নিজেকে মেলে ধরা যায়।” 

সুরশার ভূমিকায় রয়েছেন রূপাঞ্জনা। তিনি জানালেন, “সুরশা মেয়েকে নিয়ে একা থাকে। তার স্বামী বেঙ্গালুরুতে থাকে এবং সংসারের প্রায় কোনও দায়িত্বই নেয় না। সুরশা তার স্বামীর বাড়িতেই থাকে, তাদের বিবাহ বিচ্ছেদটা এখনও হয়নি। তবে স্বামীর দেওয়া টাকাতেই তার সংসার চলে। সবকিছুই তাকে একা হাতে সামলাতে হয়। এমনকি এটিএম যেতে হলেও বাচ্চাকে কারোর কাছে রেখে যেতে হয়। রাতুল খুব সুন্দরভাবে চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলেছে। এই চরিত্রটা একেবারেই আমার মতো নয়। তবু এক মায়ের চরিত্র বলেই আমার খুব কাছের, এটুকু বলতে পারি।” 



ছবিতে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সৌরভ। এমন এক অফিসার যার সদ্য বিয়ে হয়েছে, অথচ অফিসের চাপে এই কেসটার জন্যই তাকে কাজে যোগ দিতে বলা হয়। “ইন্সপেক্টর বাসু চরিত্রটা আমার মতো নয় একেবারেই,” বললেন সৌরভ। “আমি খুব মিশুকে, আর বাসু খুব রাগী আর গম্ভীর। লোকটা প্রচুর খারাপ ভাষা ব্যবহার করে। এর আগে কোনও কেসে সে অসফল হয়নি। তবু এই খুনের তদন্ত করতে এসে তার সব তালগোল পাকিয়ে যায় কারণ দুই মূল অভিযুক্তের একজন যদি বলে আমি বেল বাজিয়ে ঢুকেছিলাম, অন্যজন বলে সে নক করে ঢুকেছিল। বাসু বুঝতে পারে না কে ঠিক আর কে ভুল। লজিক্যালি দুজনেই ঠিক।”

গভীর এক হত্যারহস্য রয়েছে ‘ইকির মিকির’-এ। এর পাশাপাশি এক ভয়ানক সামাজিক ব্যাধির কথাও উঠে আসবে যার কারণে হয়তো এক পর্যায়ে মনে হবে খুনটা আসলে অপরাধ ছিল না।

“বাংলা ছবিতে পুলিশের চরিত্র যেভাবে আসে তা বাস্তবের থেকে অনেকটাই আলাদা। আমি সেই বাস্তবের চরিত্রটাই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি,” জানালেন সৌরভ।




ছবির নাম ‘ইকির মিকির’ হওয়ার কারণ কী? 

রাতুল জানালেন, “এটা খুব জনপ্রিয় একটা ছড়া, যেটা ছোটবেলায় সকলেই খেলেছে। এই গল্পের একটা চরিত্রের ওপর এই ইকির মিকির ছড়াটার একটা গভীর প্রভাব রয়ে গেছে। এই লাইনগুলো তার মাথায় ফিরে-ফিরে আসে। সেখান থেকেই বোঝা যাবে কেন ছবিটার এই নাম। আর যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁদের নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রত্যেকেই নিজের কাজটা বোঝেন। তাই সব মিলিয়ে ছবিটা দর্শকদের ভালো লাগবে আশা করি।” 

রাতুলের চিত্রনাট্যে ছবির চিত্রগ্রহণ করেছেন রক্তিম মন্ডল। সম্পাদনায় আছেন ঈশান শীল। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।

মুভিসেইন্টস ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আজ মুক্তি পেয়েছে ‘ইকির মিকির’ ।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *