জারি রইল সিংহাসনের লড়াই

সিরিজ়: আবার রাজনীতি

পরিচালনা: সৌরভ চক্রবর্তী

অভিনয়ে: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী, দিতিপ্রিয়া রায়, অনিরুদ্ধ গুপ্ত, শ্যামল চক্রবর্তী

দৈর্ঘ্য: ৩ ঘণ্টা ১ মিনিট (৭ পর্বে)

RBN রেটিং ★★★★☆☆☆☆☆☆

লোকসভা নির্বাচনের আবহে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ এখন উর্ধ্বমুখী। সিংহাসনে কাকে দেখা যাবে, এ নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা চলছে। আসলে এটাই রাজনীতির মূল কথা। ক্ষমতা দখলের লড়াই। সেই লড়াইকে কাল্পনিক রিজপুরের প্রেক্ষাপটে নিয়ে এসেছিলেন সৌরভ। রিজপুরের ব্যানার্জি পরিবার সেখানে একচেটিয়াভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতায় বহাল রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্ন এলেই উঠে আসে, রাজা হবে কে? বেশ কিছু প্রশ্ন রেখেই শেষ হয়েছিল সৌরভের ‘রাজনীতি’ সিরিজ়ের প্রথম সিজ়ন। সে সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই এবার এসেছে ‘আবার রাজনীতি’ (Abar Rajneeti)



কাহিনির কুশীলবরা মোটামুটি সকলেই এক। রাশি (দিতিপ্রিয়া) তার দুর্ঘটনার জের সামলে উঠে সৌনকের (অর্জুন) সঙ্গে রিজপুর ছেড়ে চলে আসে কলকাতায়। সেখানে তারা নিজেদের মতো করে জীবন কাটাতে শুরু করে। ওদিকে রিজপুরে ক্ষমতায় রয়েছেন রাশির সৎমা মল্লিকা ব্যানার্জি (কনীনিকা)। তাঁর পরামর্শদাতা পার্টির বর্ষীয়ান সদস্য রাজ্যেশ্বর (শ্যামল)। ইতিমধ্যে রাশির দুর্ঘটনার সময়ে তার চিকিৎসা করা ডাক্তার দেবজিৎ (অনিরুদ্ধ) কলকাতায় পালিয়ে এসে রাশিকে দেখতে পায়। রিজপুরে দেবজিৎ নিরাপদ ছিল না। এর আগে তার কিছু কুকীর্তির আড়ালের সত্যিগুলো সে জানিয়ে যেতে চায় রাশিকে। ওদিকে রিজপুরে এসে হাজির হয় এক সন্ন্যাসী (কৌশিক) যাকে হুবহু প্রয়াত নেতা রথীন ব্যানার্জির মতো দেখতে। এইসব প্রশ্নের পাশাপাশি উপনির্বাচন উপলক্ষে বিপক্ষ দল নিয়ে আসে ফিল্মস্টার জিমিকে। কিন্তু জিমিকে আদতে নিয়ন্ত্রণ করছে কে? রাশিও ফিরে আসে রিজপুরে। ফের শুরু হয় ক্ষমতা দখলের লড়াই।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশি থ্রিলারে স্বস্তিকা

আগের সিজ়নের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সৌরভ। তবু দ্বিতীয় সিজ়নের জন্য দর্শক যতখানি অপেক্ষা করে বসেছিলেন, সে তুলনায় ‘আবার রাজনীতি’ একরকম জলই ঢেলে দিল বলা চলে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি নতুন প্রশ্ন হাজির করতে গিয়ে গোটা ব্যাপারটি এতটাই জটিল হয়ে গেছে যে কাহিনি আরও দৃঢ় হওয়ার বদলে নড়বড়ে হয়ে গেছে। কাহিনি জটিল হলে ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত মারপ্যাঁচ থাকলে তা বেশিরভাগ সময় বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। চিত্রনাট্য কিছুক্ষেত্রে অত্যন্ত ধীর আবার মাঝেমধ্যে তা অতিরিক্ত দ্রুত। বেশ কিছু ঘটনার সুতো শেষে গিয়ে মিলিয়ে দেওয়া হলেও তার ব্যাখ্যা পরিষ্কার হয় না। আরও একটু বেশি সময় দিলে হয়তো ভালো হতো।

Abar Rajneeti

অভিনয়ের কথা বলতে গেলে অবশ্যই কনীনিকার উল্লেখ সবার আগে প্রয়োজন। তাঁকে ইদানিংকালে পর্দায় খুব বেশি দেখা না গেলেও অভিনয়ের ধার কিছুমাত্র কমেনি। প্রথম সিজ়নে তাঁর যেমন ক্ষুরধার অভিনয় দেখা গেছিল, দ্বিতীয় সিজ়নেও তার কোনও পরিবর্তন হলো না। আগের সিজ়নের থেকে এ সিজ়নে অনিরুদ্ধর অভিনয় ভালো। তাঁর বলা বেশ কিছু সংলাপ মনে রয়ে যায়। তবে তা শুনে বহুল জনপ্রিয় কিছু হিন্দি সিরিজ়ের সংলাপ মনে পড়ে গেলেও আশ্চর্য লাগে না। অবশ্য তার জন্য চিত্রনাট্যই দায়ী। রাশির ভূমিকায় দিতিপ্রিয়া আগের থেকে কম সাবলীল। অর্জুনের অভিব্যক্তি বহু জায়গায় কাঠের পুতুলের মতো হয়ে যাওয়ায় এমন এক বহুস্তরীয় ধূসর চরিত্রের জন্য বেমানান বলেই মনে হয়। শ্যামল তাঁর নিজের ভূমিকায় যথেষ্ট সাবলীল। তবে চিত্রনাট্য অনুযায়ী চরিত্রের নামটি বা তাঁর কীর্তিকলাপ বারংবার এলেও পর্দায় তাঁর বিশেষ কিছু করার ছিল না। কৌশিকেরও অভিব্যক্তি ও সামান্য কিছু সংলাপ বলা ছাড়া তেমন কিছু করার ছিল না। কনীনিকা একা হাতে রিজপুরের কাহিনী রক্ষার চেষ্টা করলেও নকল বুঁদিগড় তো আর কুম্ভ একা সামলাতে পারে না!

আরও পড়ুন: থাকছেন না সলমন?

শুভদীপ দে’র চিত্রগ্রহণ বেশ ভালো। তবে প্লট টুইস্টের অংশগুলিকে কিছু নতুনত্ব অবলম্বনে দর্শকের কাছে পেশ করলেও পারতেন। সম্পাদনার দায়িত্বে অমিতাভ দাশগুপ্তর খুব কিছু করার ছিল না। বরং আবহ এবং টাইটেল কার্ডে অমিত বসু ও যশ গুপ্তর কাজ ভালো লাগে। খুবই পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত শ্লোক দিয়ে তৈরি হওয়া টাইটেল ক্রেডিটটিকে এনচান্টিং বলা যেতেই পারে।

মোটের ওপর ‘রাজনীতি’তে থেকে যাওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে কৌতূহলে ‘আবার রাজনীতি’ দেখতে বসলেও সিরিজ়ের শেষে ছেড়ে যাওয়া প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে তৃতীয় সিজ়নের জন্য আগ্রহ মনে জাগে না।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
1

Diptajit

An avid reader and a passionate writer of crime fiction. Poems and verses are his second calling. Diptajit is the editor of a Bengali magazine. Nothing makes him weaker than books, films and food

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *