বড়পর্দায় আসছে বিনয়, বাদল, দীনেশের রাইটার্স অভিযান
কলকাতা: নব্বই বছর আগের এক শীতের বেলা। ভারত তখন ব্রিটিশ শাসকদের অধীন। কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংসের সামনে ট্যাক্সি থেকে নামল স্যুট-বুট পরা তিন যুবক। আপাদমস্তক বিদেশি পোশাকে সুসজ্জিত এই তিনজনকে দৃপ্ত পদক্ষেপে রাইটার্সের ভেতরে ঢুকে যেতে দেখে স্বভাবতই গেটে থাকা পুলিশ অফিসারদের কোনও সন্দেহের কারণ ঘটেনি। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে ওপর থেকে ভেসে এল গুলির শব্দ। ততক্ষণে বারান্দার শেষপ্রান্তের ঘরে বিনয়কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশচন্দ্র গুপ্তর পিস্তলের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছে লেফটেনেন্ট কর্নেল সিম্পসন। মুহূর্তের মধ্যে তিন যুবককে ঘিরে ফেলল পুলিশ। শুরু হলো গুলির লড়াই। তবু শেষমেশ পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি তিন বাঙালি বীরকে। আত্মহত্যা করেছিলেন বাদল। পরে মারা যান বিনয়ও। একমাত্র সুস্থ হয়ে ওঠেন দীনেশ। ১৯৩১ সালে তাঁর ফাঁসি হয়।
স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি বিপ্লবীদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা। তেমনই এক অধ্যায় ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বিনয়, বাদল, দীনেশের রাইটার্স অভিযান। সেই ঘটনা নিয়েই এবার ছবি করতে চলেছেন পরিচালক অরুণ রায়। রাইটার্স অভিযানের তারিখকে স্মরণ করেই ছবির নাম রাখা হয়েছে ‘৮/১২’। অভিনয়ে রয়েছেন কিঞ্জল নন্দ (বিনয়), অর্ণ মুখোপাধ্যায় (বাদল), ও সুমন বসু (দীনেশ)। এছাড়াও থাকছেন অনুষ্কা চক্রবর্তী ও বিপাশা সাহা। গতকাল ছবির ঘোষণা উপলক্ষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ছবির কুশীলবরা।
আরও পড়ুন: কলকাতার বুকে ক্যাফে থিয়েটারের অভিনব প্রয়াস
তাঁর পরিচালিত ‘হীরালাল’ ছিল ইতিহাসভিত্তিক, ‘৮/১২’-ও তাই। ইতিহাসের নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছবি পরিচালনা করার প্রসঙ্গে অরুণ জানালেন, “আমাদের ইতিহাসে এত কিছু আছে বলে শেষ করা যাবে না। ইতিহাসভিত্তিক ঘটনা নিয়ে কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আসলে বাঙালির ইতিহাস এত সমৃদ্ধ যে বিষয়ের কোনও অভাব হয় না। অন্য ভাষার গল্প থেকে এখানে ছবি করার কেন প্রয়োজন পড়ে বুঝি না। বাঙালির ইতিহাসে অজস্র গল্প রয়েছে।”
আজকের দিনে ইতিহাসের প্রাসঙ্গিকতা নেই, এ কথা মানেন না অরুণ। “বিনয়, বাদল, দীনেশের মতো বিপ্লবীরা না থাকলে আজ আমরা এভাবে ঘুরে বেড়াতে পারতাম না। মানুষ নিশ্চয়ই নিজের ইতিহাসকে জানতে প্রেক্ষাগৃহে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।”
ছবিটি যেহেতু একটি পিরিয়ড পিস তাই সেই সময়ের কলকাতা বা রাইটার্স বিল্ডিংস দেখানোর ক্ষেত্রে ভিএফএক্সের সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানালেন পরিচালক।
আরও পড়ুন: স্নিগ্ধজিতের নতুন গানে পরিবেশ রক্ষার আহ্বান
সদ্য ‘হীরালাল’ ছবির নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন কিঞ্জল। বিনয়ের চরিত্র নিয়ে স্পষ্টতই উৎসাহী তিনি। “ছবির বিষয়টা তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই। বিনয়, বাদল, দীনেশকে চেনে না এমন কোনও বাঙালি বোধহয় পাওয়া যাবে না। আমি বিনয়ের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। অরুণদার সঙ্গে আমার প্রথম ছবি ছিল ‘হীরালাল’, তারপর বিনয়ের চরিত্র পেলাম। দুটো চরিত্রই খুব চ্যালেঞ্জিং। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব এটুকু বলতে পারি,” জানালেন কিঞ্জল।
‘হীরালাল’-এ এক ঐতিহাসিক চরিত্রে ছিলেন অর্ণ। তিনি জানালেন, “বাঙালিকে আত্মবিস্মৃত জাতি বলা হয়, কারণ আমরা নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন নই। তাই বাঙালির ইতিহাস নিয়ে সেভাবে ছবি তৈরিই হয় না। সেই জায়গা থেকে অরুণদা পরপর ইতিহাসের নানা বিষয় নিয়ে ছবি করছেন, এটা খুব বড় পাওয়া। ছবির পোস্টারে আমাদের লুক দেখে নিজেদেরই খুব উত্তেজনা হচ্ছে। সেই স্কুলের বইতে পড়া ইতিহাসের চরিত্রে নিজেদের দেখতে পাব ভাবলে একটা আলাদা অ্যাড্রিনালীন রাশ তৈরি হচ্ছে। এমন অ্যাকশনধর্মী ছবি হয়ত বাংলায় আগে হয়নি।”
সুমন ওরফে রেমো এর আগে কিছু ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করে থাকলেও অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে এই প্রথম। তিনি জানালেন, “ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে একবার রাইটার্স দেখতে গিয়েছিলাম, তখন মিনিবাসের গায়ে লেখার থেকেই বিনয়, বাদল, দীনেশ, নামগুলোর সঙ্গে পরিচয় হয়। কোনওদিন ভাবিনি নিজে এই চরিত্রে অভিনয় করতে পারব।”
ছবির সঙ্গীত পরিচালনায় রয়েছেন ময়ূখ-মৈনাক। চিত্রগ্রহণে থাকবেন গোপী ভগত। ছবি সম্পাদনা করবেন সংলাপ ভৌমিক। প্রোডাকশন ডিজ়াইনের দায়িত্বে রয়েছেন তন্ময় চক্রবর্তী। পোশাক পরিকল্পনায় রয়েছেন সাবর্ণী দাস।
ছবির নাম অনুযায়ী ৮ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ‘৮/১২’।