খেলার ছলে কৃতকর্মের ফল সন্ধান

ছবি: অনুসন্ধান

পরিচালনা: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ১৩ মিনিট

অভিনয়ে: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, পায়েল সরকার, প্রিয়াঙ্কা সরকার, প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল

RBN রেটিং: ৩/৫

মানুষ তার সারাজীবনে নানা অপরাধ করে। কখনও সে অপরাধ হয় ইচ্ছাকৃত, কখনও বা না জেনেই। তবু যেভাবেই অপরাধ হোক না কেন, শাস্তি তার হবেই। পরজন্ম আছে কিনা কেউ জানে না। কাজেই, ইহজন্মেই কৃতকর্মের ফল তাকে পেতে হবে। কেউ-কেউ মনে করে পাপ করে আইনের চোখে ধুলো দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তারা জানে না, জীবনের কোনও না কোনও মোড়ে শাস্তিবিধান করার জন্য নিয়তি ওৎ পেতে থাকে। জীবনের এই সারসত্যকে নিয়েই কমলেশ্বরের ছবি ‘অনুসন্ধান’।




এই ছবির কেন্দ্রে রয়েছে ইন্দ্র চক্রবর্তী (শাশ্বত)। পেশায় সে এক বেসরকারী সংস্থার বিপণন বিভাগের প্রধান। কর্মসূত্রে বিদেশে থাকলেও পরিবারের চাপে পারিবারিক দুর্গাপুজো উপলক্ষে দেশে ফিরতে হয়। এদিকে অষ্টমী নিশিতেই ইন্দ্রের নামে চিঠি আসে। যে সে চিঠি নয়, খোদ গ্রেফতারি পরোয়ানা। ডাক এসেছে বিলেতের আদালত থেকে। কী এমন করেছে ইন্দ্র যার জন্য তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলো?  উত্তর মেলে না। শুধু বোঝা যায়, বাড়ির অন্যান্যদের কাছে ইন্দ্র বিষয়টা লুকিয়ে গিয়েছে। কাজের অজুহাতে রওনা দেয় বিলেতে। সেখানে এক দুর্যোগের রাতে একটি বাড়ির দেওয়ালে হঠাৎই তার গাড়ির ধাক্কা লাগে। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেই বাড়িতেই আশ্রয় নেয় ইন্দ্র।

আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ

এই বাড়ির যারা বাসিন্দা, তারা বেশ অদ্ভুত। এই পরিবারে রয়েছেন এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি (চূর্ণী), সরকারি কৌঁসুলি (ঋদ্ধি), বাদী পক্ষের আইনজীবি (প্রিয়াঙ্কা) ও এক অবসরপ্রাপ্ত জেলার (জয়দীপ)। একাকীত্ব কাটাতে এরা বাড়িতেই নিয়মিত আদালত বসায়। এ এক খেলা। অতিথি হিসেবে ইন্দ্রকেও তাঁরা এই খেলায় অংশ নিতে বলেন। ইন্দ্রের ভূমিকা হয় অভিযুক্তের। তার দাবি, সে জীবনে কখনও কোনও অপরাধ করেনি। এ দাবি কি সত্যি? ধোঁয়াশায় কথা বলা এই পরিবার আসলে কারা? এইসব প্রশ্ন দর্শকের মনে জাগিয়ে তোলেন কমলেশ্বর, যার উত্তরের খোঁজ চলে ছবির দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে।

আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি

এই ছবিতে যদি অভিনয়ে সেরার শিরোপা কারোর প্রাপ্য হয়, তবে তা চূর্ণীর। কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে শাশ্বত যথাযথ। প্রিয়াঙ্কা ও জয়দীপও তাঁদের ভূমিকা যথার্থভাবেই পালন করেছেন। তবে সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে ঋদ্ধি সংলাপ বলতে গিয়ে বড্ড তাড়াহুড়ো করেছেন। তাঁর কথার মধ্যে প্রতিবারেই যেন অতিরিক্ত মাত্রায় আত্মবিশ্বাস দেখা যায়। এছাড়া একটি বিশেষ চরিত্রে পায়েলও যথাযথ।

ছবিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এর আবহ। কিছু ক্ষেত্রে দেবাশিস সোমের আবহ একটু চড়া মনে হলেও দু’ঘন্টার সাসপেন্স থ্রিলারের জন্য মানানসই। অনেক সিরিয়াস থ্রিলার ছবিতেই অকারণে গান রাখা হয়। বাংলা ছবির এই ব্যাধি বহু পুরোন। তবে এই ছবিতে অনুপম রায়ের গাওয়া ‘অনেক দূরের মানুষ’ গানটি যে কতটা প্রাসঙ্গিক, তা দর্শক পর্দায় দেখলে বুঝতে পারবেন। গানটির ট্রিটমেন্ট এককথায় অসাধারণ।



ছবিতে সিনেমাটোগ্রাফিও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই দায়িত্ব পালনে চিত্রগ্রাহক টুবান সম্পূর্ণ সফল। আলো-আঁধারির পরিবেশে রহস্য জমিয়ে দিয়েছেন টুবান। রবিরঞ্জন মৈত্রের সম্পাদনাও যথাযথ।
ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন কমলেশ্বর নিজেই। চিত্রনাট্যে ফ্রেডরিখ ড্যুরেনমাটের উপন্যাস ‘দ্য ডেঞ্জারাস গেম’-এর প্রভাব লক্ষণীয়। কয়েক বছর আগে এই উপন্যাস অবলম্বনে কমলেশ্বর একটি নাটক পরিচালনা করেন। সেই নাটক থেকেই কি এই চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা পাওয়া? প্রশ্ন রয়ে যায়। তবে বিদেশি প্রভাবেই হোক, বা একই থিমের ওপর আগেও নাটক পরিচালনার জন্য হোক, ছবির চিত্রনাট্য নির্মেদ। যার ফলে দর্শক তার আসন ছেড়ে নড়তে পারেন না।

সব মিলিয়ে শহরে শীতের আমেজের সঙ্গে টানটান সাসপেন্স থ্রিলারের স্বাদ পেতে চাইলে একবার প্রেক্ষাগৃহে ‘অনুসন্ধান’ করাই যায়।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Diptajit

An avid reader and a passionate writer of crime fiction. Poems and verses are his second calling. Diptajit is the editor of a Bengali magazine. Nothing makes him weaker than books, films and food

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *