‘মেল টাচ’ বর্জিত মানবিকতার মজাদার প্রেসক্রিপশন

ছবি: ডক্টর জি

পরিচালনা: অনুভূতি কাশ্যপ

অভিনয়ে: আয়ুষ্মান খুরানা, রকুলপ্রীত সিং, শেফালী শাহ, শিবা চাড্ডা, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, আয়েশা কাড়ুস্কর, অভয় মিশ্র

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৪ মিনিট

RBN রেটিং: ৩/৫

ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ঠিক কতটা আকুলতা ও আগ্রহ থাকে সেটা মোটামুটি সকলেরই জানা। তবু ডাক্তারি পড়তে গিয়েও কি কম ঝক্কি পোহাতে হয়! যে চিরকাল ভেবে এসেছে হৃদরোগের চিকিৎসা করবে তাকে যদি দাঁত কিংবা পেটের ডাক্তারি করতে হয়, তার পক্ষে সেটা মেনে নেওয়া বড় কষ্টের। সাধারণ মানুষ যেখানে মনে করে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাওয়াটাই অনেক বড় ব্যাপার, এরপরে আর কী সমস্যা থাকতে পারে, শিক্ষার্থীটি তখন হয়তো নিজের এতদিনের স্বপ্ন আর ইচ্ছের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে।



উদয়ের (আয়ুষ্মান) মা শোভাও (শিবা) ঠিক এমনটাই ভাবতেন। অর্থোপেডিক পড়ার স্বপ্ন থাকলেও কম নম্বরের জন্য উদয়ের  কপালে জোটে স্ত্রীরোগ বিভাগ। যদিও শোভার বক্তব্য প্যাথলজি যে জোটেনি এও তো একরকম আশীর্বাদই। স্ত্রীরোগের চিকিৎসায় খারাপ কী আছে? মুশকিল হলো উদয় এমনটা ভাবতে পারে না কিছুতেই। যা তার কাছে নেই, সেটার চিকিৎসা সে কীভাবে করবে? রোগী হিসেবে কোনও ডাক্তারের মুখে এ কথা শুনতে হলে সে অভিজ্ঞতা ভয়ঙ্কর হবে বলাই বাহুল্য। তবে উদয় যে পরিস্থিতিতে এ কথা বলে, তাতে দর্শকের হাসি পাওয়াই স্বাভাবিক। একে তো অপছন্দের বিষয়, তায় ফতিমা (রকুলপ্রীত), জেনি, কেএলপিডিদের মতো ইন্টার্নদের সারাক্ষণ হেনস্থা, আর তার চেয়েও ভয়ঙ্কর সিনিয়র ডাক্তার নন্দিনী শ্রীবাস্তবের (শেফালী) ধমক, সব মিলিয়ে উদয়ের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তবে কতই বা পিছনে হাঁটবে উদয়, একসময় দেয়ালে পিঠ ঠেকেই যায় তার।

ডাক্তারির আর সব বিষয়ের মতোই স্ত্রীরোগ চিকিৎসার মধ্যেও রয়েছে কিছু মহৎ ব্রত। সদ্যোজাতকে পৃথিবীর আলো দেখানো তার মধ্যে অন্যতম। ক্রমশ উদয় সেই স্বর্গীয় অনুভূতির স্বাদ পায় যেখানে মানুষও কিছুটা ভগবানের অংশ হয়ে ওঠে। তারপর? যে দূর সম্পর্কের অশোকদাকে (ইন্দ্রনীল) গুরু মেনে স্কুলজীবন থেকে উদয় অর্থোপেডিক হতে চেয়েছে, সেই দাদার বিপদের দিনে হাত বাড়াতে হয় উদয়কেই। কাব্যর (আয়েশা) মতো একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবে সে? উদয়ের ডাক্তারি বিবেক জেগে উঠবে কি? 



হাসির মোড়কে গল্প বলা হলেও স্ত্রীরোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগকে নিয়ে উদয়কে যে পরিমাণ তাচ্ছিল্য করতে দেখা গিয়েছে তা ডাক্তারি ছাত্রদের প্রভাবিত না করলেই মঙ্গল। কারণ বাস্তবে বহু পুরুষ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে কাজ করছেন এবং মহিলারা তাঁদের কাছে চিকিৎসা করাতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। ২০২২-এ এসে কোনও ডাক্তারি ছাত্র এরকম চিন্তাভাবনা করে বলেও মনে হয় না। এছাড়া, হয়তো সংশ্লিষ্ট বিভাগে ‘মেল টাচ’ বর্জন করতে সত্যিই শেখানো হয় পুরুষ ডাক্তারদের এবং সেটা প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যেই পড়ে। উদয়কে হাতে ধরে সেই শিক্ষাগুলো দিতে দেখা গেল না কাউকেই। যাদেরকে তার সিনিয়র ইন্টার্ন বলে দেখানো হলো, তাদের সঙ্গেই সমান দক্ষতায় তাকেও চিকিৎসা করতে হবে বলে শর্ত দেওয়া হলো কেন, সেটা পরিষ্কার হলো না। ইন্টার্নশিপের প্রথম দিন থেকেই উদয়ের কাছে যে পরিমাণ দক্ষতা আশা করা হলো, কোনওরকম হাতেকলমে শিক্ষা ছাড়া কোনও বিভাগেই সেটা চলতে পারে না। 

আরও পড়ুন: এ বছরেই ফের চলচ্চিত্র উৎসব

আলোকপাত করা যাক ছবির ভালো দিকগুলোয়। শুরুটা হালকা চালে হলেও ক্রমশ ছবির গল্প সিরিয়াস হয়ে উঠেছে। আয়ুষ্মান তাঁর সহজাত অভিনয়গুণে ছবির এই চড়াই উতরাইকে সামাল দিয়েছেন দক্ষ হাতে। স্টারসুলভ ঝকঝকে প্রোফাইল না থাকলেও তিনি একাই যে কোনও সাধারণ কাহিনীকে টেনে দিতে পারেন তা আবারও প্রমাণিত হলো। তবে বড় বেশি এক ধাঁচের চরিত্র করছেন তিনি। নিজের কমফর্ট জ়োন ছেড়ে এবার অন্তত বেরোনো উচিত। 

নতুনদের ভিড়ে রকুলপ্রীত বেশ নজর কাড়ার মতো। তবে পুরোদস্তুর নায়িকা হয়ে উঠতে তাঁর সময় লাগবে। গোটা ছবি জুড়ে বরাবরের মতোই নির্ভরযোগ্য সঙ্গত করে গেছেন শিবা। ভালো লাগে চাড্ডির ভূমিকায় অভয়কেও। ভালো হোক বা মন্দ, সব ধরণের চরিত্রেই সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি, আর একবার বুঝিয়ে দিলেন ইন্দ্রনীল। 

আরও পড়ুন: আবারও থ্রিলারে অরিন্দম

আর শেফালী। ছবির সিংহভাগ জুড়ে আয়ুষ্মান রাজত্ব করলেও ছোট-ছোট দৃশ্যে নন্দিনীরূপে শেফালীর তাকানো, বিরক্ত হওয়া, সিনিয়র ডাক্তারসুলভ শাসন, অল্প কথায় কর্তব্য বুঝিয়ে দেওয়া আলাদাই এক ব্যক্তিত্বের বৃত্ত রচনা করে। ইদানিংকালের বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ়ে তাঁর অভিনয়ের ওজন আলাদা করে চিনিয়ে দিয়েছে এই ব্যতিক্রমী অভিনেত্রীকে। তবে ‘দিল ধড়কনে দো’ ছবির মতো হালকা চরিত্রেও মাঝেমধ্যে ফিরে আসার প্রয়োজন আছে তাঁর। 

অমিত ত্রিবেদী ও কেতন সোধার সুরে ছবির গান কাহিনীর সঙ্গে মানানসই। প্রেরণা সায়গলের সম্পাদনা মেদহীন। হালকা মেজাজে সিনেমা হলে ঢুকে আনন্দ পেতে চাইলে ‘ডক্টর জি’ ভরপুর বিনোদন দেবে, নিঃসন্দেহে এ কথা বলাই যায়। সঙ্গে থাকবে মানবিকতার দাওয়াইও।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
11

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *