“গল্প যখন এক, প্রতিযোগিতা থাকবেই”

সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ ছবির টিজ়ার। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুর্গরহস্য’ অবলম্বনে এই ছবিতে ব্যোমকেশের ভূমিকায় রয়েছেন দেব। ছবি ঘোষণা হওয়ার পর, গত কয়েকমাস ধরে এটাই ছিল বাংলা বিনোদন বাজারে সবেথেক বড় খবর। অভিনেতা হিসেবে দেবের কাছে এই ছবি যেমন এক বড় পরীক্ষা তেমনই কঠিন চ্যালেঞ্জ পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তর কাছেও। ছবি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে রেডিওবাংলানেট-এর প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন বিরসা। 

তুমি যে ধরনের ছবি করো ‘দুর্গরহস্য’ তার থেকে একেবারেই আলাদা। আচমকা এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কারণ কী?

বিরসা: একে ব্যোমকেশ কাহিনি তার ওপরে ‘দুর্গরহস্য’, এটা একটা লোভ বলা চলে। একটা সৎ লোভ। সেই লোভটাই কীভাবে যেন সাহস এনে দিল। আসলে দেব ব্যোমকেশের চরিত্র করবে এটাই আমার কাছে মূল আগ্রহের বিষয় ছিল। এটা জেনে আর দ্বিতীয়বার ভাবিনি। দেব-শরদিন্দু-ব্যোমকেশ-বড়পর্দা, এই কম্বিনেশনে লোভ সামলানো সত্যিই কঠিন ছিল। 



‘দুর্গরহস্য’ এর আগেও আমরা টেলিভিশনে দেখেছি। সেটা এরকম বিরাট স্কেলে ছিল না। ছবিটাকে এত বড় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা কি শুরু থেকেই ভেবেছিলে?

বিরসা: ‘দুর্গরহস্য’ লেখার ঠিক আগে ব্যোমকেশ কাহিনিতে শরদিন্দুবাবু বারো বছরের গ্যাপ নিয়েছিলেন। আগের ব্যোমকেশ কাহিনিগুলোয় একটা চেনা ধাঁচ আছে। মাঝের এই বড় গ্যাপে তিনি মুম্বই চলে গিয়েছিলেন হিন্দি ছবির চিত্রনাট্য লিখতে। তারপর যখন ফিরে এসে ব্যোমকেশের জন্য কলম ধরলেন তখন উনি নিজেই নিজের স্টাইল পাল্টে ফেলেন। ‘দুর্গরহস্য’-এর প্রথম তিন পাতায় কোথাও ব্যোমকেশ নেই। সেখানে ইতিহাস আছে। ব্যোমকেশ আসছে পরে। এই গল্পটা বলার যে ধারা, ঐতিহাসিক একটা আঙ্গিক, তার গ্র্যাঞ্জার, সব মিলিয়েই এটা খুব স্পেশাল। 

আরও পড়ুন: সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের কথা নিয়ে ছবি

টিজ়ার দেখে বোঝা যাচ্ছে ছবির বাজেট নিয়ে তোমাকে ভাবতে হয়নি

বিরসা: বাজেট নিয়ে টানাটানি আমাদের এখানে থাকেই। সেটা নিয়েই আমরা কাজ করতে অভ্যস্ত। তবে এই ছবির ক্ষেত্রে আমি যা চেয়েছিলাম তা আমার দুই প্রযোজক আমাকে করতে দিয়েছে। আমি নিজে মধ্যপ্রদেশ বেড়াতে গিয়েছি অনেকবার। কাজেই আমার একটা ধারণা ছিল যে কোথায় শ্যুট করা যেতে পারে। ওরছার এক প্রাচীন কেল্লায় শ্যুট করেছি আমরা। ওখানে এমনিতে কোনও শ্যুটিং হয় না। কারণ জায়গাটা খুব দুর্গম। চারশো সিঁড়ি ভেঙে রোজ ওঠানামা করা মুখের কথা ছিল না। আমরা সেটাই করেছি। রেকি করে এসে আমার মনে হয়েছিল এই কেল্লা ছাড়া আমি কিছুতেই শ্যুট করতে পারব না। আমার মনে হয়েছিল, শরদিন্দুবাবু এই কেল্লা দেখেছেন। যদিও গল্পে পশ্চিম বলা আছে, আর তখন পশ্চিম বলতে বিহার-ঝাড়খণ্ড বোঝাত, কিন্তু এই কেল্লায় গল্পে যা-যা বলা আছে সব মিলে গেছে। সিঁড়ি, দেউড়ি, মাঝখানে খালি জায়গা যেমন চেয়েছিলাম, সব পেয়েছি। এর চেয়ে ভালো জায়গা আমি আর কোথাও পেতাম না। 

গল্প যখন এক

ওরছার কেল্লা

ব্যোমকেশ মানেই কিছু বাঁধাধরা লুক চলে আসছে। সেটা ছবিতে কতটা পাল্টানো হয়েছে? যেমন লেখক ব্যোমকেশকে কোনওদিন চশমা দেননি। অথচ সেই ‘চিড়িয়াখানা’ থেকে ব্যোমকেশ মানেই চশমা

বিরসা: ছোটখাটো অনেক জিনিসের ক্ষেত্রে বদল আনলেও চশমাটা রাখতেই হয়েছে। তার একটা কারণও আছে। সত্যজিৎ রায় যখন উত্তমকুমারকে নিয়ে ব্যোমকেশ করালেন তখন তাঁর মহানায়ক ইমেজ ভাঙার জন্য চশমা দিয়েছিলেন। এখানেও দেবের সুপারস্টার ইমেজ ভাঙার জন্য চশমা পরানো হয়েছে। এই প্রথম দেব পুরো ছবিতে চশমা পরে অভিনয় করবে। 

একইভাবে সত্যবতীর উপস্থিতিও এই কাহিনিতে ছিল না। অথচ ছবিতে সে রয়েছে

বিরসা: সত্যবতীকে রাখা কিছুটা সিনেম্যাটিক লাইসেন্স বলতে পারো। আমি একটাই ব্যোমকেশ করব আর সেখানে সত্যবতী থাকবে না এটা কী করে হতে পারে! এইটুকু ছাড় তো দেওয়াই যায়। নাহলে আর অ্যাডাপটেশন হয় কী করে। সবটাই যদি হুবহু বইয়ের মতো হয় তাহলে মানুষ বইটাই পড়বে, সিনেমা কেন দেখবে? তবে সত্যবতী থাকা মানেই একটা অ্যাডাল্ট কনসেপ্ট, সেটা একেবারেই নয়। এই ছবিটা আট থেকে আশি যে কেউ দেখতে পারবে। 

আরও পড়ুন: “আর ভালো লাগছে না”

প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গে আসা যাক। ‘দুর্গরহস্য’ নিয়ে ছবির পাশাপাশি সিরিজ়ও তৈরি হচ্ছে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সিরিজ়ের সঙ্গে এই গায়ে-গায়ে প্রতিযোগিতা কেমন লাগছে? 

বিরসা: এটা নিয়ে সৃজিত আর আমি অনেক কথাবার্তা বলেছি। আমাদের দুজনের কাজের ফরম্যাট আলাদা। একটা গল্প নিয়ে সিরিজ় করতে গেলে চরিত্রগুলোকে অনেক বেশি বিশ্লেষণ করা যায় যেটা বড়পর্দার বাঁধা সময়ে সম্ভব নয়। আবার ছবিতে একটা গল্পকে যে স্কেলে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে, সেটা ওটিটিতে পাওয়া যায় না। আমাদের কাজের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। আমি চাইব লোকে সিনেমা হলে এসে যেমন আমার ছবিটা দেখুক তেমনই বাড়িতে বসে সিরিজ়টাও দেখুক। 

শোনা গিয়েছিল একই জায়গায় তুমি এবং সৃজিত দুজনেই শ্যুটিং করেছ

বিরসা: না, এটা ঠিক নয়। একই লোকেশনে শ্যুটিং হয়নি। মধ্যপ্রদেশে আমরা দুজনেই শ্যুট করেছি বটে তবে একই কেল্লায় নয়। নানারকম খবর ছড়িয়েছে, আসলে কিন্তু যে যার মতোই কাজ করেছি। এমন না কেউ কাউকে দেখে লোকেশন ঠিক করেছি। গল্প যখন এক, প্রতিযোগিতা তো থাকবেই। কেউই তো কাউকে জমি ছেড়ে দেব না। দুটো কাজ নিয়েই নানা কথা উঠবে জানি, সেইজন্যে আমরা প্রস্তুতও। তবে দুজনেই চাই প্রতিযোগিতাটা সুস্থ হোক। তুলনা, সমালোচনা ইত্যাদি যাই হোক সেটা যেন দুটো কাজ দেখার পরেই হয়।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *