পাননি প্রযোজক, কাস্টিং চূড়ান্ত করেও ৩৩ বছর আগে বাতিল ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’

RBN Web Desk: সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজ়ের গল্প ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’ নিয়ে টেলিফিল্ম করতে চেয়েছিলেন অঞ্জন দত্ত। স্বত্বও দিয়েছিলন লেখক। কিন্তু প্রযোজক পাননি বলে সেটি শুরুই করতে পারেননি অঞ্জন। ১৯৭৪ ও ১৯৭৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিৎ পরিচালিত ‘সোনার কেল্লা’ ও ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ যা আজও সমান জনপ্রিয়। দুটি ছবিতেই ফেলুদার চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তোপসে ও জটায়ুর ভূমিকায় অভিনয় করেন সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সন্তোষ দত্ত। ১৯৮৮ সালে সন্তোষ দত্ত মারা যাওয়ার পর ফেলুদাকে নিয়ে আর ছবি করেননি সত্যজিৎ। 

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রেডিওবাংলানেট-কে অঞ্জন জানালেন, “নব্বই দশকের শুরুর দিকের কথা। তখনও আমি সিনেমা বানাই না। টেলিভিশনে নানারকম কাজ করছি। আমার ইচ্ছে ছিল ফেলুদাকে নিয়ে কাজ করার। এই নিয়ে কথা বলতে বারবার ওঁর বাড়ি যেতাম। প্রথমদিকে রাজি ছিলেন না। বলতেন, সন্তোষ নেই, কী করে হবে? আবার আমার পরীক্ষাও নিতেন। ওই লেখকের গোয়েন্দার নাম বলো, সেই গল্পটা কোন কেস নিয়ে ছিল, এইসব। অনেকদিন এরকম চলার পর অবশেষে ‘গ্যাংটক’ দিতে রাজি হলেন। বললেন, সন্তোষ তো নেই, তুমি এটা করতে পারো।” 

আরও পড়ুন: এবার বড়পর্দায় নন্টে-ফন্টে, সুপারিনটেনডেন্ট স্যার

তবে স্বত্ব দিলেও শর্ত ছিল সৌমিত্রকেই ফেলুদার চরিত্রে রাখতে হবে। ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ ছবিতে ব্যবহৃত উইগ পরিয়েই কাজটা হবে এমন কথাও হয়ে গিয়েছিল। সে সময় প্রযোজক জোগাড় করার পর কাজটা শেষ করে দূরদর্শনের হাতে তুলে দিতে হতো।

“কাস্টিং চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল,” জানালেন অঞ্জন। “সৌমিত্রদা ফেলু, নিশিকান্ত সরকারের চরিত্রে রবি ঘোষ এবং শশধর বোসের ভূমিকায় দীপঙ্কর দে। লিউ হিল্ট ছিল হেলমুট উঙ্গারের চরিত্রে। উনি গল্প দিলেও তার জন্য কোনও টাকা নেননি। বলেছিলেন, সন্দীপ ছবি (বড়পর্দায়) করবে। তুমি টেলিভিশনের জন্য নাও। সব ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও প্রযোজক পেলাম না। অনেকদিন অপেক্ষা করেছিলাম কাজটার জন্য। কেউ রাজি হয়নি প্রযোজনা করতে। সেই সময়ে ফেলুদা করার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। আর উনি পারিশ্রমিক নেননি বলেই ওঁর অবর্তমানে আমি আর পরে সন্দীপের কাছে যাইনি। ওটা আর হবে না ধরে নিয়েছিলাম।” 

আরও পড়ুন: ঋত্বিক ঘটকের ভূমিকায় শিলাজিৎ

স্বত্ব পাওয়ামাত্রই অঞ্জন ছুটে গিয়েছিলেন সৌমিত্রকে খবরটা দিতে। “বিশ্বরূপায় তখন সৌমিত্রদার ‘দেখা’ নাটক চলছে। উনি শুনেই লাফিয়ে উঠলেন, পেয়ে গেছ? বললাম, হ্যাঁ। এই কাজটার জন্য সেই সময় প্রযোজক পাওয়া গেল না, এটা এখন ভাবলে খুব অবাক লাগে,” বললেন অঞ্জন। 

বর্তমানে ফেলুদার গল্প উপন্যাস নিয়ে সিনেমা ও একাধিক সিরিজ় হচ্ছে। অঞ্জন মনে করেন, একই সময়ে একই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি নিয়ে আলাদাভাবে কাজ হতে থাকলে সেই চরিত্রের ক্ষতি হয়, বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। “শার্লক হোমস অনেকেই করেছে বলে উদাহরণ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও একটা সময়ে একজনকেই হোমস হিসেবে দেখা গেছে। একটা চরিত্রে একাধিক অভিনেতাকে দেখলে দর্শক­ ফোকাস করবে কী করে? ফেলু ছাড়াও তো সত্যজিতের অসাধারণ সব গল্প আছে। সেগুলো নিয়ে কেউ কেন ভাবে না আমি জানি না,” বললেন অঞ্জন।  

ছবি: প্রতিবেদক




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *