দিনে মঙ্গল, রাতে মৃত্যু
ছবি: দিন রাত্রির গল্প
পরিচালনা: প্রসেনজিৎ চৌধুরী
অভিনয়ে: রজতাভ দত্ত, রায়তী ভট্টাচার্য, সুপ্রীতি চৌধুরী, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, দেবেশ রায়চৌধুরী, সৌরভ চক্রবর্তী, রুমকি চট্টোপাধ্যায়
দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা
RBN রেটিং: ৩/৫
একের বেশি গল্প নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি বাঙালি দর্শকের কাছে নতুন নয়। তবে কোনও ক্ষীণ সুতোর বদলে যদি একটিই চরিত্র দুটি কাহিনীর যোগসূত্র হয়ে দাঁড়ায়? এমন ছবি বাংলায় সাম্প্রতিক অতীতে খুব একটা হয়েছে বেল মনে পড়ে না। আর সেই কাজটাই প্রসেনজিৎ করলেন তাঁর প্রথম ছবি ‘দিন রাত্রির গল্প’-এ। এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র সুজ়ান (সুপ্রীতি) এক গীর্জার সন্ন্যাসিনী। ছবির দুটি অংশ ‘দিনের গল্প’ ও ‘রাত্রির গল্প’-কে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে সুজ়ান।
‘দিন রাত্রির গল্প’ শুরু হয় এক সান্ধ্য আরাধনার মাধ্যমে। আরাধনা চলাকালীন হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে সুজ়ান। একসময় বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় ‘দস্যু মোহন’ সিরিজ়ের কাহিনীগুলোতে, আচম্বিতে ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনা বোঝানোর জন্য লেখক একটা পরিচিত কথা ব্যবহার করতেন: ‘কী হইতে কী হইয়া গেল।’ অনেকটা সেরকমভাবেই ‘দিনের গল্প’-এ দর্শক হঠাৎ চলে যান ফ্ল্যাশব্যাকে। এখানে উঠে আসে মহাকাশবিজ্ঞানী অরুণিমা (রায়তী) ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য চরিত্ররা। অরুণিমার হঠাৎ করে মঙ্গল গ্রহে পাড়ি এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে আবর্তিত ছবির প্রথমাংশে পাল্লা দিয়ে তাঁদের অভিনয় দক্ষতা আরও একবার ফুটিয়ে তুললেন প্রদীপ ও দেবেশ । তবে অতীত থেকে বাস্তবে আসার ব্যাপারগুলো এত জলদি ঘটে যাওয়ার ফলে, কোন সূত্র ধরে ঘটনাবলী এগোচ্ছে, সেটা বুঝতে দর্শকের বেগ পেতে হতে হয়। এই অর্ধের সংলাপ যথাযথ। বিরতির আগে একটি পারিবারিক ড্রামা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক এবং সেই কাজে তিনি সফল। তবে সৌরভের অভিনীত চরিত্রটি আরও বেশি সময় থাকলে ভালো লাগত।
আরও পড়ুন: এবার তেপান্তরে প্রকৃতির কোলে থিয়েটার উৎসব
ছবির দ্বিতীয়ার্ধ, অর্থাৎ ‘রাত্রির গল্প’-এ আবারও ফিরে আসে সুজ়ানের অতীত রোমন্থন। এবার অতীতে যাওয়ার সূত্র পুরোটাই পরিষ্কার। এই অংশে রজতাভ এবং সুপ্রীতির অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। আজও মানুষের ভয় ও কুসংস্কারকে জাপটে বেঁচে থাকার প্রবণতায় আঘাত হেনেছেন পরিচালক। প্রায় ৫০ মিনিট ধরে একটা শ্বাসরুদ্ধ সাসপেন্সের মধ্যে দিয়ে এগোতে থাকে গল্প। দর্শক হয়তো এরকম কিছু আশাও করতে পারবেন না। সুজ়ান ছাড়াও দুটি কাহিনীর মধ্যে আরও এক যোগসূত্র দর্শক খুঁজে পাবেন একদম শেষে। রজতাভর অভিনয় অনেকদিন মনে থাকবে দর্শকদের। তাঁর অভিনীত চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য অবসেসিভ কম্পালিসভ ডিসঅর্ডারের মতো ডিটেলিং দেওয়া এবং গোটা সময় সেটা পর্দায় বজায় রাখা মুখের কথা নয়।
চিত্রনাট্যে স্বপ্নকে একটা জরুরি অংশ হিসেবে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। এই স্বপ্নের মাধ্যমে যে কথা পরিচালক বোঝাতে চেয়েছেন, তা অনায়াসে অন্যভাবে বুঝিয়ে দেওয়া যেত। উল্টে স্বপ্ন থাকার ফলে ছবির বেশ কিছু অংশ দুর্বোধ্য ঠেকে। তবে এই দুর্বোধ্যতা মূলতঃ প্রথমার্ধেই সীমাবদ্ধ। দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিটা অংশের জিগস পাজ়লকে সযত্নে জোড়া হলেও, শেষে গিয়ে কয়েকটি সংলাপ আর তার আগে দেখানো কিছু ঘটনাবলী দর্শককে দোটানায় ফেলতে পারে।
মৃণ্ময় মণ্ডলের চিত্রগ্রহণ ভালো। শান্তনু দত্তের সুর ও তপন ভট্টাচার্যর আবহ যথাযথ। কোনও বড় ব্যানারের ছত্রছায়ায় না গিয়েও গুণমানের দিক থেকে ‘দিন রাত্রির গল্প’ দর্শকমনে আলাদা জায়গা পেতেই পারে।