‘নারী শরীর অশুচি নয়’ বার্তা নিয়ে মিছিলে হাঁটলেন ঋতাভরী, সোহম, সোমারা
কলকাতা: দশ বছর বয়স হলেই মাঠে গিয়ে খেলা বন্ধ, নাচ শেখাটাও এবার ছেড়ে দিলেই হয়, ফ্রক নয় এবার পা ঢাকা পোশাক পরো, এসব হয়তো এই ২০২০-তে এসে আর হয় না। তবে যেটা এখনও হয় সেটা হলো ঋতুমতী অবস্থায় চারদিন ঠাকুর ঘরের চৌকাঠ না মাড়ানো। প্রযুক্তির অসীম কল্যানে যেখানে মেয়েরা চাঁদেও যাচ্ছে সেখানে শুধুমাত্র ‘শরীর খারাপ’-এর দোহাই দিয়ে তাঁদের পুজো করতে বাধা দেওয়া হয় মাসের এই বিশেষ ক’টা দিনে। কারণ শতাব্দী প্রাচীন কিছু ভ্রান্ত ধ্যানধারণা, যার জেরে আজও মনে করা হয় নারী অশুচি। তারা আর যাই হোক ঠাকুরের নিত্যপূজা করতে পারেন না। এই ধ্যানধারণা পাল্টাতেই আসছে পরিচালক অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’। ছবির বিভিন্ন ভূমিকায় রয়েছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী, সোহম মজুমদার, সোমা চক্রবর্তী, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, মানসী সিনহা।
এই ছবিকে কেন্দ্র করে আজ শহরে ‘আমি নারী, নই অশুচি’ শীর্ষক এক অভিনব মৌন মিছিলে হাঁটলেন ঋতাভরী, সোহম, সোমারা। একজন নারীর শারীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অশুচিতা ও অসম্পূর্ণতার নাম দিয়ে তাঁকে যে কোনও ধরণের পুজোর থেকে দূরে সরিয়ে রাখার যে প্রবণতা, তার বিরোধিতা করেই এই মিছিলে হাঁটলেন ছবির শিল্পী ও কলাকুশলীরা।
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
“উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণরা একটা সময় আমাদের যা বুঝিয়ে গেছেন আমরা তাই বুঝেছি, কেন না শাস্ত্রের পাতা উল্টে কেউ দেখেনি যে মেয়েদের পুজো করায় কোনও বাধা নেই,” বললেন ঋতাভরী। “অম্বুবাচিতে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে বিশেষ পুজো হয়। কেন? সেটা তো দেবীর ঋতুমতী হওয়ার সময়। তাহলে যা দেবীর ক্ষেত্রে হতে পারে সেটা তো অস্বাভাবিক বা অশুচি কিছু নয়। এটা নাকি মেয়েদের ‘শরীর খারাপ’। কিন্তু আসল কথা হলো ঋতুস্রাব না হলেই শরীর খারাপ হতে পারে। সঠিক সময়ে ঋতুস্রাব হওয়া শরীর ভালো থাকা এবং মাতৃত্বের ক্ষমতার লক্ষণ।”
শবরীমালা মন্দির নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনার জের টেনে ঋতাভরী প্রশ্ন তোলেন, “একটা বিশেষ বয়সের মেয়েদের ওই মন্দিরে যাওয়া বারণ। কারণ এই বয়সে মেয়েরা ঋতুমতী হয়। অথচ এই প্রক্রিয়া প্রতিদিন খাদ্যগ্রহণ বা মলমূত্র ত্যাগের মতোই স্বাভাবিক। এগুলোর জন্য যখন লজ্জিত হতে হয় না তাহলে ঋতুস্রাবের কারণে কেন লজ্জা পেতে হবে?”
আরও পড়ুন: বাংলা টেলিভিশনে এবার অবনীন্দ্রনাথ
মিছিল নিয়ে সাধারণ মানুষের উৎসাহও ছিল চোখে পড়ার মতো। ঋতুস্রাব যে অতি সাধারণ একটি ব্যাপার তার স্বপক্ষে অজস্র প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায় প্রচুর মানুষকে। কোনও প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘জিনসে যদি লাগে রক্তের ছাপ, be bold new girl don’t take chap’, আবার কোনওটায় লেখা ‘ন্যাপকিনে ট্যাক্স বসে সিঁদুরেতে নয়, বল নারী বল তুমি পিরিয়ড হয়’। বলা বাহুল্য কয়েক যুগ আগের কিছু বস্তাপচা ধারণাকে পাল্টে ফেলতে মিছিলে হাঁটতে দেখা গেছে প্রধানত অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদেরই।
“ছেলেদের ছোট থেকে এই বিষয়ে কিছুই শেখানো হয় না। ফলে তারা সারাজীবন অসংবেদনশীল থেকে যায়। তাদের কাছে এটা একটা মেয়েলি ব্যাপার যা নিয়ে হাসাহাসি করা যায়। খোলাখুলি আলোচনা করা বা সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করেন না তাঁরা। আর মহিলাদের ঋতুস্রাবজনিত অসুস্থতা নিয়ে কোথাওই কথা বলা হয় না। গ্রামে তো দূর, শহরেও একই অবস্থা। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ক্যানসার থেকে কিভাবে সাবধান হতে হবে তা আমরা টিভি দেখে জানতে পারি, কিন্তু ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনেও কোথাও নারীদের হাইজিন বিষয়ে কিছুই বলা হয় না,” বললেন ঋতাভরী।
ছবির বাইরে গিয়েও এই বিষয়ে যতটা সম্ভব মানুষকে সচেতন এবং কুসংস্কারমুক্ত করা যায়, এমন পরিকল্পনাও তাঁদের আছে বলে জানালেন ঋতাভরী ।