পঞ্চকের ভূমিকা পালন করলেন রাজ

ছবি: ধর্মযুদ্ধ

পরিচালনা: রাজ চক্রবর্তী

অভিনয়ে: স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, পার্নো মিত্র, ঋত্বিক চক্রবর্তী, সোহম চক্রবর্তী, সপ্তর্ষি মৌলিক, কৌশিক রায়

দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৫১ মিনিট

RBN রেটিং: ৩/৫

‘উমর ভর গালিব ইয়ে হি ভুল করতা রহা, ধুল চেহেরে পে থি, ঔর আইনা সাফ করতা রহা।’ মির্জ়া গালিবের এই শায়েরি প্রায় সকলেরই জানা। আমরা কমবেশি সকলেই নিজের ভুল খোঁজার পরিবর্তে অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াই। ভুলে যাই কারও দিকে একটি আঙুল তুললে, তিনটি আঙুল নিজের দিকেই থাকে।



সকালবেলা সংবাদপত্র খুললে বেশিরভাগ সময়ই চোখে পড়ে হিংসার খবর। দেশের কোথাও না কোথাও হয়ে চলেছে হানাহানি, কাটাকাটি। হিংসা থেকে প্রাণনাশ আজকাল যেন অনেকটাই জলভাত। ধর্মকে হাতিয়ার করে রাজনীতির কারবারিরা যা ব্যবসা ফেঁদে বসেছে, তাতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ওপরতলার অঙ্গুলিহেলনে পুতুলনাচ নাচছে সমাজের খেটে খাওয়া জনগণের এক বৃহৎ অংশ। সাম্প্রদায়িক দলাদলিতে কে প্রকৃত মানুষ তার খোঁজ বোধহয় কেউ রাখে না। দেশভাগের এত বছর পরেও পিছুটান ছাড়েনি এই ধর্মযুদ্ধ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা নজরুল ইসলামের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কবিতাও আজকাল যেন পাঠ্যপুস্তেকই সীমাবদ্ধ। তবে নিয়মের বেড়াজাল ভাঙতে প্রতিবারই পঞ্চকদের ডাক পড়ে। পঞ্চকের রূপ ধরে প্রতিবারই কেউ এসে বোঝায় যে ধর্মের নামে ভেদাভেদ নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। ‘ধর্মযুদ্ধ’-এ অনেকটা সেই ভূমিকা পালন করলেন রাজ।

আরও পড়ুন: সানাইবাদকের স্বপ্নভঙ্গ, গ্রামের ডিজে হলেন গৌরব

নারায়ণকে (কৌশিক) ভালোবেসে প্রেমিকের মৃত্যুর কারণ হয় শবনম (পার্নো)। আত্মকষ্টে, গ্লানিতে শবনম আম্মির (স্বাতীলেখা) কাছে আশ্রয় নেয়। একইভাবে সাম্প্রতিক দাঙ্গায় ঘরছাড়া হয় রতন (সপ্তর্ষি) ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুন্নি (শুভশ্রী)। হঠাৎই রাস্তার মাঝখানে তাদের ঘিরে ধরে কয়েকজন লোক। কোনওমতে মুন্নিকে পালাতে সাহায্য করলেও নিখোঁজ হয়ে যায় রতন। মুন্নি এসে হাজির হয় আম্মির কাছে। একইভাবে একে-একে এসে পৌঁছয় জব্বর খান (সোহম), রাঘব দাসেরা (ঋত্বিক)। নামের ফেরে ফের শুরু হয় হানাহানি। কেউ বলে, মুসলমান বলেই জোর করে তার খাবারে গোমাংস মেশানোর মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তাকে ঘরছাড়া করা হয়েছিল। আবার কারও দাবি, আজানের সময় তার মায়ের শঙ্খধ্বনিই হয়ে ওঠে পারস্পরিক যুদ্ধের কারণ। শুরু হয়ে যায় ধর্মযুদ্ধ। সকলেই শেষমেশ সুরক্ষিত হয় আম্মির ছত্রছায়ায়। কখনও তার মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে গীতার শ্লোক, কখনও বা গড়গড় করে শোনাচ্ছেন কোরআনের বাণী। কে এই আম্মি? কোন ধর্মের ধারক তিনি? পর্দা জুড়ে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে ছবির শেষ লগ্নে এক মোক্ষম ট্যুইস্ট দিয়েছেন রাজ।

আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তবুও ঔজ্জ্বল্যে অম্লান

অভিনয়ে সকলেই যথাযথ। তবে স্বাতীলেখা এই ছবির প্রাণ। ‘বেলাশুরু’র পর ‘ধর্মযুদ্ধ’তে তাঁর অভিনয় মনে রাখবেন দর্শক। নিজের পরিচিত খোলস ছেড়ে এক নতুন রূপে ধরা দিলেন শুভশ্রী। মেকআপ ছাড়া, সাধারণ এক গৃহবধূর চরিত্রে ভীষণ ভাল লাগল তাঁকে। শুভশ্রীকে যোগ্য সঙ্গত করলেন সপ্তর্ষি। সোহমের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই ছবিতে হিরোসুলভ ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। ঋত্বিক, পার্নো, কৌশিক এঁরা প্রত্যেকেই যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন চরিত্রগুলির। একটি বিশেষ চরিত্রে পর্দা কাঁপালেন রুদ্রপ্রসাদ। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের পরিচালনায় ছবির সঙ্গীত যথাযথ। শুধুমাত্র বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের মনোভাবকে এই ছবির বিষয় করা হয়তো দর্শকের একাংশের পছন্দ নাও হতে পারে। তবু এই ছবি বানানোর জন্য যথেষ্ট সাহস দেখিয়েছেন পরিচালক।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে রাখীবন্ধন উৎসবের আহ্বান করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। হিন্দু-মুসলমান একে অপরের হাতে রাখী বেঁধে সৌহার্দ্য উদযাপন করেছিল। সেই সৌহার্দ্যের বার্তাই ‘ধর্মযুদ্ধ’ মারফত যেন ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন রাজ। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *