আমি ভাগ্যবান যে টাইপকাস্ট হইনি: দর্শনা বণিক
পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরবর্তী ছবি মুখোমুখি-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলের অলিন্দে দাঁড়িয়ে দর্শনা বণিক রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন তাঁর এই ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও আগামী দিনের পরিকল্পনা।
কেমন আছো?
(হেসে) ভালো। অনেকগুলো কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
মুখোমুখি-তে তোমার অভিনীত চরিত্রটি কি রকম?
কমলদার ছবিতে আমি অনুসূয়ার চরিত্রে অভিনয় করছি। শৌনক আর অনুসূয়া স্বামী-স্ত্রী। শৌনক নিজের কর্মস্থলে পরিচিতি পায় না, তাই নিয়ে ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে। এদিকে অনুসূয়া শহুরে, শিক্ষিত একটি মেয়ে। সে চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়, নিজের একটা আলাদা পরিচিতি পেতে চায়। অনুসূয়া নিজের মতবাদকে জোর গলায় বলতে পারে। নানান কারণে তার আর শৌনকের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয় এবং একটা সময়ে গিয়ে বিয়েটা ভেঙে যায়। আজকালকার মেয়েরা খুব সহজেই অনুসূয়ার মধ্যে নিজেদের খুঁজে পাবে।
খেল দিখা সকোগে না?
তথাকথিত বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতে তোমাকে দেখা যাচ্ছে না। এটা কেন?
দেখো, সব ছবিই সেই অর্থে বাণিজ্যিক। সব ছবিরই একটা ব্যবসায়িক দিক আছে, সেটা কখনওই অস্বীকার করা যায় না। তবে খুব শীঘ্রই অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়ের একটা ছবিতে কাজ করতে চলেছি। ওটা একেবারেই বাণিজ্যিক ছবি বলতে যা বোঝায় তাই। নাচ, গান সবই আছে। আমি ছাড়াও এই ছবিতে সোহম চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, বিশ্বনাথ বসু কাজ করছেন। খুব জমাটি ছবি হবে আশা করি। এই ছবিতে আমার চরিত্রের নাম মিমি, উত্তর কলকাতার মেয়ে। বেশ মিষ্টি একটা চরিত্র।
এতদিন বাণিজ্যিক ছবিতে তোমাকে দেখা যায়নি কেন?
নানান কারণ ছিল। ভালো চিত্রনাট্য, পরিচালক পাচ্ছিলাম না। শুধু মুখ দেখাতে পারব বলে একটা ছবিতে কাজ করলাম, এরকম ধারণায় আমি বিশ্বাসী নই। চরিত্রটা জোরদার না হলে আমি সেই ছবিতে কাজ করি না। অভিমন্যুর ছবিতে সেটা শেষ পর্যন্ত পেলাম।
যে জন থাকে মাঝখানে
বড় পর্দার ছবি, ওয়েব সিরিজ়, সবেই তুমি কাজ করছ। বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে তোমাকে
হ্যাঁ ঠিকই। দেখো, আজকাল শুধু বড় পর্দা ছাড়া কাজ করব না, এরকম মানসিকতা নিয়ে চললে হবে না। মুম্বইয়ের বড়-বড় তারকারাও এখন ওয়েব সিরিজ়ে নিয়মিত অভিনয় করছেন। তাঁদের কাজ দর্শকের ভালো লাগছে। অভিনেত্রী হিসেবে আমাকে কাজের পরিধিটা বাড়াতে হবে, আরও বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছতে হবে।
বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে দর্শক তোমাকে পাচ্ছেন। এটা তো খুবই ভালো বলতে হবে
একদম তাই। আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি যে আমি টাইপকাস্ট হইনি। পরিচালকরা নানান চরিত্র দিয়ে পরীক্ষা করছেন, ভাঙছেন আমাকে ক্রমাগত। আমি তাঁদের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারছি বলেই না কাজগুলো পাচ্ছি। ল্যাবরেটরি-তে আমি লীলার চরিত্রে অভিনয় করলাম। লীলা একেবারেই অন্য ধরণের একটা চরিত্র যে ছলাকলা জানে, পুরুষকে নিজের হাতে রাখতে চায়। সিক্স-এ রিখিয়া করলাম, যার স্বামী মানসিক রোগে আক্রান্ত। অঞ্জন দত্ত-এর আমি আসব ফিরে ছবিতে একজন রেপ সারভাইভারের চরিত্রে কাজ করলাম। একই ধরণের চরিত্রে দ্বিতীয়বার কাজ করার প্রস্তাব আমি পাচ্ছি না। প্রত্যেকটা চরিত্রই আগেরটার থেকে আলাদা।
তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে
ওয়েব সিরিজ়ই কি বিনোদনের ভবিষ্যৎ?
আমি তা মনে করি না, জানো। হ্যাঁ এটা ঠিক যে ওয়েবে অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করা যায়, যা বড় পর্দায় হয়ত করা যায় না। ওয়েব পোর্টালের সংখ্যাও বাড়বে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বড় পর্দা, লার্জার দ্যান লাইফ, এটা সবসময়ই থাকবে। এই ব্যপারটার জন্যই দর্শক হলে গিয়ে ছবি দেখবে। সত্যি কথা বলতে কি, আমার মনে হয় ওয়েব আসার ফলে বড় পর্দার ছবির মান আরও বাড়বে। গ্রাফিক্সের কাজ আরও উন্নত হবে। যেন-তেন-প্রকারেণ একটা ছবি বানিয়ে ফেললেই দর্শক সেটা দেখবে, এই ধারণাটা ভেঙে যাবে।
আগামী দিনে আর কোন ছবিতে দেখা যাবে তোমাকে?
অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের বোবা রহস্য-তে কাজ করছি। এই ছবিতে বেণুদা (সব্যসাচী চক্রবর্তী) অনেক দিন পর একজন গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করছেন। ওয়েব সিরিজ়ও করছি বেশ কয়েকটা, তার মধ্যে একটা হল বউ কেন সাইকো। দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালনা করেছে এই সিরিজ়টা। সিক্স-এর সিক্যোয়েলও আসছে। সেটার নাম সিক্সটি সিক্স।
ছবি: রাজীব মুখোপাধ্যায়