ভালোবাসার জন্য কতদূর যাওয়া যায়?
ছবি: চিরসখা হে…
পরিচালনা: অর্ঘ্যদীপ চট্টোপাধ্যায়
অভিনয়ে: তনুশ্রী চক্রবর্তী, ঈশান মজুমদার, মিঠু চক্রবর্তী, বরুণ চন্দ
দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট
RBN রেটিং ★★★★★★☆☆☆☆
ভালোবাসার জন্য কতদূর যাওয়া যায়? সত্যিকারের ভালোবাসলে মানুষ তার জন্য কী না করতে পারে! আসলে এ এক এমন আবেগ যা নির্বিকার মানুষকেও পাগল করে দিতে পারে। আবার দুরন্তকেও অচিরেই করে তুলতে পারে শান্ত। তবু সব ভালোবাসার গল্প সমান হয় না, যার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ বোধহয় ও হেনরির ‘গিফট অফ দ্য ম্যাজাই’। কারণ মানুষের পরিকল্পনার ওপরেও এক ওপরওয়ালার সুতোর টান চলে। তবু তিনি যাই করুন, ভালোবাসাকে হারিয়ে দেওয়া সহজ নয়। এ কথাই যেন নতুন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন অর্ঘ্যদীপ।
মা আর জ্যেঠুমণির সঙ্গে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে এক বাংলোয় থাকে ঈশান। তার পেশা ফটোগ্রাফি, নেশা ছবি আঁকা। জ্যেঠু শিবাশিস নামকরা উকিল। আচমকাই একদিন ছবি তুলতে গিয়ে ঈশানের দেখা হয়ে যায় তিলোত্তমার সঙ্গে। দেখামাত্রই তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে ঈশান। যদিও তাদের দ্বিতীয় দেখাও হয় কাকতালীয়ভাবেই, তবু ঈশান নিজের মনের ভাব ধীরে-ধীরে প্রকাশ করতে থাকে তিলোত্তমার কাছে। স্কুলশিক্ষিকা তিলোত্তমা একাই থাকে। বাড়ি নিয়ে আইনি লড়াই ছাড়াও সে অন্য আরও কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে। ঈশানকে সে পছন্দ করে বোঝা যায়, তবু কিছুতেই তাকে কাছে আসতে দেয় না। ঈশান কি তিলোত্তমার এই অদ্ভুত আচরণের কারণ খুঁজে বার করতে পারবে?
আরও পড়ুন: ফিরছে মধুমিতা-অপরাজিতা জুটি
ছবির কাহিনী কিছুটা একমাত্রিক। বিশেষ করে প্রথমার্ধ আর একটু গতিশীল হতে পারত। ছবির গল্প অন্যরকম, অন্তত শেষ কয়েকবছরে যে ধরণের ছবি বাঙালি দর্শক দেখে এসেছেন, সে তুলনায় একেবারেই আলাদা। থ্রিলার, গোয়েন্দা, ড্রামার মিলিত ঘরানার একচেটিয়া বাজারে আদ্যোপান্ত প্রেমের ছবি বানানোর সাহস দেখানো চাট্টিখানি কথা নয়। ছবির নামের সঙ্গে গল্পের পরিণামের এক অদ্ভুত সুন্দর মিল রয়েছে যা ছবির শেষে আচ্ছন্ন করে রাখে। তবু গল্পের শেষটা অন্যরকম হতে পারত। বস্তুত মূল ঘটনার সঙ্গে আরও কিছু সাবপ্লট থাকলে তা গল্পের গতিকে বাড়তে সাহায্য করতো। এছাড়াও ঈশান ও তিলোত্তমার সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে আর একটু সময় দিলে ঘটনাক্রম আরও বিশ্বাসযোগ্য হতো।
তবে দুর্বল চিত্রনাট্য হওয়া সত্বেও অভিনয় সকলেরই ভালো। তনুশ্রী যে কোনও চরিত্রে নিজেকে সুন্দরভাবে মেলে ধরেন, এখানেও তিনি ব্যতিক্রম নন। তিলোত্তমার মতো জটিল চরিত্রে অনায়াসে মানিয়ে গিয়েছেন তিনি। প্রথমবার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করলেও এর আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছোট চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ঈশান। এই ছবিতে স্বনামের চরিত্রে তিনি নিজের মতোই স্বাভাবিক ও সাবলীল। ভালো চরিত্র পেলে ভবিষ্যতে সফল হবেন ঈশান, আশা করা যায়। বরুণ এবং মিঠু দুজনেই নিজেদের অভিনয়ের সুনাম রক্ষা করেছেন।
আরও পড়ুন: অতনুর ছবিতে খিটখিটে, হতাশাগ্রস্ত ‘বাল্মীকি’ প্রসেনজিৎ
সৌম্য ঋতের সুরে ছবির গানগুলি শ্রুতিমধুর। দুর্নিবার সাহার গাওয়া ‘যদি পাওয়া যেত’ গানটির রেশ থেকে যায়। এছাড়াও নচিকেতা চক্রবর্তী ও মেখলা দাশগুপ্তের গলায় ‘কাছ থেকে দূরে’ গানটিও শুনতে ভালো লাগে। পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য সুন্দরভাবে ধরা দিয়েছে শুভদীপ নস্করের ক্যামেরায়। নিজের চেনা থ্রিলার ঘরানা থেকে বেরিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ হিসেবে অর্ঘ্যদীপের এই ছবি ভিড়ের মাঝে অন্যরকম এক প্রচেষ্টা, দেখতে বসলে সময়টা মন্দ কাটবে না।