ঝলসানো, বিজয়িনী লক্ষ্মীর প্রতিমূর্তি দীপিকা

ছবি: ছপক

পরিচালনা: মেঘনা গুলজ়ার

অভিনয়ে: দীপিকা পাড়ুকোন, বিক্রান্ত মেসি, মধুরজিৎ সারঘি

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ৩ মিনিট

RBN রেটিং: ৩.৫/৫

ছপক কথাটা শুনলেই একরাশ আনন্দ, উচ্ছাস মনে হয় আগে। কিন্তু মেঘনার ‘ছপক’ জ্বালাময়ী। এখানে ছপকের শব্দে মিশে যায় অ্যাসিডের আর্তনাদ। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার ওপর ছবি করতে ভালোবাসেন মেঘনা। ‘ছপক’ও তার ব্যতিক্রম নয়। ছবির কাহিনী শুরু ২০১২ সালে নির্ভয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা দিয়ে। তাঁর খুনীদের শাস্তির দাবিতে যখন সারা দেশ উত্তাল, ঠিক সেই সময় অমল দ্বিবেদী (বিক্রান্ত) লড়াই চালাচ্ছে অ্যাসিডে আক্রান্ত মেয়েদের জন্য। ২০০৫-এ ঘটে যাওয়া লক্ষ্মী আগরওয়ালের কথা তখন মানুষের স্মৃতির পাতায়। ‘ছপক’-এর মালতী (দীপিকা) লক্ষ্মীর নামান্তর মাত্র। বয়সে প্রায় দ্বিগুণ বশির খান ওরফে বাব্বুর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বছর উনিশের মালতী। রাগান্বিত বশির রাস্তার মাঝখানে মালতীর মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে প্রতিশোধ নেয়। হাসপাতালে বেশ কয়েকটি সার্জারির পর নতুন চেহারা পায় মালতী। শুরু হয় জীবনের এক নতুন অধ্যায়। শেষ পর্যন্ত শাস্তি পায় দোষী। ‘ছপক’-এর গল্প এটুকুই।




মেঘনা দক্ষ পরিচালক। তাই অতিরিক্ত মেলোড্রামা না করে বা মালতীকে অহেতুক দয়ার পাত্রী না বানিয়ে তার জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার কথা বলেছেন। অ্যাসিড আক্রান্তরা সব জায়গায় চাকরি পান না। এমন কি বিউটি পার্লারে কাজ পেতেও অক্ষম তাঁরা। কারণ বিউটি পার্লারে চেহারার বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রয়োজন সবার আগে। অন্তরের সৌন্দর্যের দাম সেখানে তুচ্ছ। মালতীও তাই প্রায় প্রতি দরজায় ঠোক্কর খেয়ে শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছোয় অমলের এনজিওতে।

ছবিতে মালতীর লড়াইয়ে তার অন্যতম প্রধান সঙ্গী আইনজীবী অর্চনা বাজাজ (মধুরজিৎ)। মালতীর মতো জীবন্মৃত মেয়েদের অন্তরের নিস্তব্ধতাকে অনুভব করেন তিনি। তাই দোষীকে চিহ্নিত করার থেকে তিনি অনেক বেশি জোর দেন তার কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির ওপর। যে দেশে ঠান্ডা পানীয়ের থেকেও সস্তায় অ্যাসিড পাওয়া যায় খোলা দোকানে, সেখানে আইনী ব্যবস্থার বদল আনাটা অত্যন্ত আবশ্যক, বলেন অর্চনা।

আরও পড়ুন: একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত, মুক্তির দোরগোড়ায় ‘অব্যক্ত’

‘ছপক’-এর চিত্রনাট্য ভীষণ শক্তিশালী। তার সঙ্গে মনকাড়া সংলাপ লিখেছেন গুলজ়ার। একটি দৃশ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক জানতে চান, অ্যাসিডের বিক্রি বন্ধ করলেই কি অপরাধ থেমে যাবে? সত্যিই তো অপরাধমনস্ক মনের তো কোনও মৃত্যু নেই। কিন্তু অমল বলেন, অ্যাসিড প্রথমে আসে মানুষের মনে, তারপরেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে। 

অভিনয়ে মালতীর চরিত্রে দীপিকা অনবদ্য। নিজের গ্ল্যামারাস ইমেজকে ভেঙে এরকম একটি চরিত্রে অভিনয়ের সাহস দেখালেন তিনি। অ্যাসিড আক্রান্ত হওয়ার পর সার্জারির আগে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে শিউরে ওঠার দৃশ্যটিতে দর্শকদের আঁতকে ওঠাই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন: একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত, মুক্তির দোরগোড়ায় ‘অব্যক্ত’

গোটা ছবিতে মালতীর মুখে সংলাপ কম। শুধুমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে একজন অ্যাসিড আক্রান্তের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, লড়াই করার মানসিকতা ও আনন্দ, সবটা ফুটিয়ে তুললেন দীপিকা। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করলেন মধুরজিৎ। শতাধিক মালতীর জীবনযুদ্ধের সেনাপতি তিনি।

অমলের চরিত্রে বিক্রান্ত যথাযত। সাংবাদিকতা ছেড়ে এনজিও চালানো অমল কিছুটা উন্নাসিক, কিছুটা অভিমানী। চরিত্রটিকে খুব কাছের মানুষে পরিণত করলেন বিক্রান্ত।

‘ছপক’-এর সঙ্গীত ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শঙ্কর-এহসান-লয়ের সুরে ও অরিজিৎ সিংহের কণ্ঠে ‘এক চেহারা গিরা হ্যায়’ গানটি ছবির মূল বক্তব্যকে স্পষ্ট করে। চাঁদের বুকে কলঙ্ক থাকলেও তার সৌন্দর্য কমে না। 

তবে মেঘনার ‘তলওয়ার’ বা ‘রাজ়ি’র সঙ্গে তুলনা করা যাবে না ‘ছপক’কে। এই ছবি নিজ আঙ্গিকে এক বিজয়িনীর গল্প বলে। সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে কিছু সত্য উপলব্ধি করাতে চায় ‘ছপক’। যে সমাজ মনে করে অ্যাসিড আক্রান্ত হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ধর্ষিতার মৃত্যু শ্রেয়।  ছবির প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধ একটু ধীরগতির। কিন্তু যে মেয়ের জীবনে অমাবস্যার কালো রাত কাটতে সময় লেগেছিল প্রায় দশ বছরেরও বেশি, সেই বিজয়িনী লক্ষ্মীর কথা জানতে একটু ধৈর্য ধরে দেখাই যায় ‘ছপক’।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *