ঠাকুরের নাম এক

ছবি: কাবুলিওয়ালা

পরিচালনা: সুমন ঘোষ

অভিনয়ে: অনুমেঘা কাহালি, মিঠুন চক্রবর্তী, আবির চট্টোপাধ্যায়, সোহিনী সরকার

দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট

RBN রেটিং★★★★★★★☆☆☆

মালবিকা মিত্র: ১৯৬৫ সালের কলকাতা। আফগানিস্তান থেকে রহমত খান বেশি উপার্জনের আশায় কলকাতায় আসে। পিছনে রেখে আসে বুড়ি মা আর ছোট্ট মেয়ে রাজিয়াকে। সঙ্গে নিয়ে আসে মেয়ের হাতের ছাপ। কলকাতায় এসে আখরোট-খোবানি বিক্রির মাঝে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে যায় মিনির সঙ্গে। মুহূর্তে মিনির মধ্যে নিজের মেয়েকে খুঁজে পায় রহমত। এরপরের গল্প সকলেরই জানা। মিনির সঙ্গে রহমতের অসমবয়সী বন্ধুত্ব, তাদের মধ্যে বার্তালাপ, মিনির উদারহৃদয় পিতা আর মেয়েকে নিয়ে ভীষণ ভয় পাওয়া মা, এ গল্প বিশ্বসাহিত্যে ক্লাসিক।



১৮৯২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাবুলিওয়ালা প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময়ের কলকাতাকে আজকের দিনে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে ব্যয়সাপেক্ষ হতো। সম্ভবত সে কারণেই সেই পথে হাঁটেননি সুমন। পরিবর্তে ১৯৬৫ সালের এক অস্থির সময়কে বেছে নিয়েছেন তিনি। ব্যবহার করেছেন ভারত-পাক যুদ্ধের আবহ। যুদ্ধ হয়তো সেভাবে ছবিতে ব্যবহৃত হয়নি। তবু যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমে বেড়ে ওঠা অবিশ্বাসকে খুব সুচারুরূপে ব্যবহার করেছেন তিনি। তেমনই প্রবাসী পিতৃহৃদয়কে অতি দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন সুমন ও সহচিত্রনাট্যকার শ্রীজীব।

ছবির আবহ সঙ্গীত সাজুয্যপূর্ণ। বিশেষত শ্রীজাতর লেখনী ও ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে জাভেদ আলি ও ঈশান মিত্রের গলায় ‘খুশি কি ঈদ’-এর ব্যবহার অত্যন্ত যথাযথ। শুভঙ্কর ভড়ের চিত্রগ্রহণ চোখকে আরাম দেয়।

আরও পড়ুন: গম্ভীরার খোঁজে খরাজ, সৌরভ, শ্রীতমা

আসা যাক অভিনয়ে। মিনির মায়ের চরিত্রে সোহিনী এতটাই সূক্ষ্ম যে তা অভিনয় বলে মনেই হয়না। অনুমেঘা সারল্যে ও স্বতঃস্ফূর্ততায় অনবদ্য। ছোট চরিত্রে কাঞ্চন মল্লিকও অসাধারণ। মিনির বাবার ভূমিকায় আবির যথাযথ।

এবং মিঠুন। অস্বীকার করার যায় না, শুরুর দিকের রহমতকে একটু বয়স্ক লেগেছে। মধ্যবয়সী রহমতের যে চেহারা রবীন্দ্রনাথ এঁকেছিলেন বা জন্মাবধি কাবুলিওয়ালার ভূমিকায় ছবি বিশ্বাসকে দেখে বেশিরভাগ দর্শকের মনে যে মূর্তি আঁকা হয়ে আছে, তা ধীরে খুঁড়িয়ে হাঁটা মিঠুনকে দেখে একটু ধাক্কা খায়। এই ধীর চলনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্যেই রহমতের হাঁপানির অসুখের উল্লেখ করেছেন সুমন। মিঠুন নিজেও বোধহয় তাঁর বহিরাঙ্গের এই খামতিটুকু জানতেন। সেই খামতি তিনি ঢাকলেন অভিনয় দিয়ে। একবারের জন্যেও তাঁকে রহমতের থেকে আলাদা করা যায়নি। বিশেষ করে ছবির শেষের দিকে মিঠুনকে চেহারায় ও অভিনয়ে যথার্থ রহমত বলেই মনে হয়েছে। যদি তাঁর নামের আগে এখনও ডিস্কো ডান্সার বসে থাকে, তবে ভবিষ্যতে তাঁকে কাবুলিওয়ালা হিসেবেও মনে রাখা দরকার। সত্যি বলতে কী, মিঠুন-আবিরের মুখোমুখি দৃশ্যে দ্বিতীয়জনকে বেশ নিষ্প্রভ লেগেছে।  

একটিমাত্র বাক্যে গভীর এক বার্তাও দিয়ে যায় সুমনের ‘কাবুলিওয়ালা’। না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা বিরহী পিতৃহৃদয়ের ক্ষত দেশ-ধর্ম নির্বিশেষে এক, তা নয়। মিনির সংলাপেই আছে সে কথা: ‘তোমার ঠাকুরের নাম আল্লা? আমার ঠাকুরের নাম ঠাকুর।’




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *