একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত, মুক্তির দোরগোড়ায় ‘অব্যক্ত’
কলকাতা: মুক্তি পেতে চলেছে পরিচালক অর্জুন দত্তর ছবি ‘অব্যক্ত’। দেশে বিদেশে প্রায় তিরিশটি চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে। এর মধ্যে যেমন কলকাতা, গৌহাটি, বেঙ্গালুরু, দিল্লী বা ঢাকা আছে তেমনই রয়েছে বার্লিন, বোস্টন ও লন্ডনের মতো শহরের ফিল্ম উৎসবগুলিও। চারটি পুরস্কারে ভূষিত অর্জুনের প্রথম ছবি এবার মুক্তির অপেক্ষায়। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, অনুভব কাঞ্জিলাল, আদিল হুসেন, সামন্তক দ্যুতি মৈত্র, অনির্বাণ ঘোষ, খেয়া চট্টোপাধ্যায়, পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী ও দেবযানী চট্টোপাধ্যায়। গতকাল শহরে ছবির ট্রেলার মুক্তি ও মিউজ়িক প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক ও কলাকুশলীরা।
এক মা ও ছেলের সম্পর্ক ঘিরে আবর্তিত হয়েছে ‘অব্যক্ত’। এই দুই চরিত্রে দেখা যাবে অর্পিতা ও অনুভবকে। একটা সময় মা সাথী পারিপার্শ্বিকের চাপে ছেলে ইন্দ্রকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। নানা মানুষের সান্নিধ্যে বড় হতে থাকে ইন্দ্র। এই সময় সে কাছে পায় তার বাবা কৌশিককে ও বাবার বন্ধু রুদ্রকে। বহু বছর পর একজন পরিণতমনস্ক মানুষ হিসেবে সাথীর মুখোমুখি দাঁড়ায় ইন্দ্র। উঠে আসে দুজনের জীবনের নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে পাওয়া ভালোবাসা, আক্ষেপ, একাকীত্ব ও কষ্টের কথা।
আরও পড়ুন: রক্তবরণ মুগ্ধকরণ
ছবির বিষয়ে অর্জুন জানালেন, “‘অব্যক্ত’ এক মা ও তার সন্তানের সম্পর্কের দূরত্বকে ঘিরে। এমন একটা সম্পর্ক বাংলা ছবিতে আগে সেভাবে উঠে আসেনি। এছাড়া একটা সামাজিক সমস্যাকেও আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি ছবির মাধ্যমে যেটা মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। বহু মানুষ ছবিটা দেখে প্রশংসা করেছেন। তবে নিজের শহরে মুক্তির আগে টেনশন তো থাকেই।”
ছবিতে দুটো বয়সের চরিত্রে দেখা যাবে অর্পিতাকে। কীভাবে এত বয়স্ক একটা চরিত্রের জন্য নিজেকে তৈরী করলেন তিনি? “সাথীর চরিত্রটা বেশ কঠিন ছিল,” বললেন অর্পিতা। “দুটো বয়সের একটা বছর তিরিশেক আর অন্যটা ষাটোর্ধ। আমি সারাক্ষণই চারপাশের মানুষজনকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। সেখান থেকেই নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছি চরিত্রটা। আর নানা ফেস্টিভ্যালে ছবিটা সকলের প্রশংসা পেয়েছে যখন তার মানে নিশ্চয়ই খারাপ অভিনয় করিনি। এমন নয় যে ফেস্টিভ্যালে গেছে বলেই এটা খুব গুরুগম্ভীর একটা ছবি। ‘অব্যক্ত’ খুব সহজভাবে বলা একটা সম্পর্কের গল্প। আমার মনে হয় বিষয়টা সকলেরই ভালো লাগবে।”
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে ছবির সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত অনুভব জানালেন, “কেরিয়ারের শুরুতেই অর্পিতাদি বা আদিল হুসেনের মতো মানুষদের সঙ্গে অভিনয় করতে পারা বিরাট বড় একটা সুযোগ। অর্জুনের চিত্রনাট্যটা এত সুন্দর ছিল যে আমার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। মা ও ছেলের মধ্যে খুবই জটিল একটা সমীকরণ দেখানো হয়েছে ছবিতে যা এর আগে বাংলা ছবিতে উঠে আসেনি।”
অর্পিতার সঙ্গে ‘গুলদস্তা’ ও ‘হৃদপিন্ড’ ছবিতেও দেখা যাবে অনুভবকে। অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর রসায়ন কেমন ছিল? “অর্জুন কাস্ট করার সময় বলেছিল আমাকে না কি অর্পিতাদির মতো দেখতে। আমি অবশ্য বিশ্বাস করিনি সেটা। কিন্তু তারপরে বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে যখন ছবিটা দেখানো হয়েছে তখন সেখানেও অনেকেই একই কথা বললেন। তাই এখন আমিও মনে করি সত্যিই বোধহয় আমার মুখের সঙ্গে অর্পিতাদির মুখের কিছুটা হলেও মিল আছে,” হেসে বললেন অনুভব।
ছবিতে সঙ্গীতের দায়িত্বে রয়েছেন সৌম্যঋত নাগ। কেমন হবে ‘অব্যক্ত’র সঙ্গীত? “আমার মনে হয়েছিল ভারতীয় ক্লাসিকাল সুর এই ছবিতে সবচেয়ে ভাল লাগবে,” বললেন সৌম্যঋত। “অর্জুন নিজেও মিউজ়িকটা খুব ভালো বোঝে। বর্ষার রাগের ভিত্তিতে মিয়া কি মল্লারের ওপর আবহটা করেছি, যেটা ছবির করুণ আবেগের সঙ্গে খুব ভালো মানিয়েছে। একটাই গান থাকছে ছবিতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশ রাগে ‘কাঁদালে তুমি মোরে’ গানটি গেয়েছেন জয়তী চক্রবর্তী। আবহের জন্য পাখোয়াজ, সরোদ ও সারেঙ্গির ব্যবহার করেছি।”
৩১ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ‘অব্যক্ত’।