সত্যজিৎ আর রবিশঙ্করের ঘরানা মাথায় রেখে এগিয়েছিলাম: বিক্রম
RBN Web Desk: শুভ্রজিৎ মিত্রর ‘অভিযাত্রিক’ ছবির কাজ শুরু করার আগে সত্যজিৎ রায় ও রবিশঙ্করের ঘরানার সোনালী অতীতকে মাথায় রেখেই তিনি এগিয়েছিলেন বলে জানালেন বিশিষ্ট সুরকার ও পারকাশনিস্ট বিক্রম ঘোষ। সম্প্রতি ‘অভিযাত্রিক’ ছবির জন্য মন্ট্রিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা সুরকারের পুরস্কার জিতেছেন বিক্রম।
কী মনে হয়েছিল ‘অভিযাত্রিক’-এর বিষয়টা শুনে?
“মনে হয়েছিল শুভ্রজিৎ কি কাজটা ঠিক করছে?” হাসতে-হাসতে রেডিওবাংলানেট-কে বললেন বিক্রম। “তারপর ছবিটা দেখার পর নড়েচড়ে বসলাম। ওর কাছে বিষয়টা শুনে থিমটা করেছিলাম, অবশ্যই ওঁদের মাথায় রেখে, সেটা খুব প্রশংসা পেয়েছিল। পরে আসল কাজটা যখন শুরু করলাম, তখন সেটা আমার কাছে যেমন চ্যালেঞ্জিং ছিল তেমনই মনে হয়েছিল এই সুযোগে যদি নতুন প্রজন্মকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কাছাকাছি নিয়ে আসা যায়। তবে সবদিক থেকেই ব্যাপারটা খুব কঠিন ছিল। খুব ধরে-ধরে এগিয়েছে কাজটা। কোনও একটা নোট থেকে সরে যাব না, বা এটা এভাবেই চাই, এইসব মাথায় রেখে একটু-একটু করে এগিয়েছি আমরা। আসলে আমি নিজে যেমন খুঁতখুঁতে, শুভ্রজিৎও তাই। তাই প্রতিটা সুর বারবার শুনে বুঝতে চেয়েছি ওই ফিলটা আসছে কিনা।”
আরও পড়ুন: অন্তরঙ্গ দৃশ্যে ‘না’, রাজ কাপুরকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পদ্মিনী
পুরস্কার পাওয়া নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী?
“পুরস্কারটা পাওয়ার আগে আমি জানতাম না, পরে জেনেছি যে মন্ট্রিয়ালের জুরি বোর্ড সবদিক থেকে সেরা। বহু পণ্ডিত মানুষ আছেন এই বোর্ডে। তাঁদের যেমন পছন্দ হয়েছে, সেরকমই কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটা দেখে সাংবাদিকরা বলেছেন খুব ভালো হয়েছে। সাধারণ মানুষও যেচে এসে বলে গেছেন সুরটা ভীষণ ভালো হয়েছে, যার মধ্যে ১৮-১৯ বছরের ছেলেমেয়েরাও রয়েছে। এটাই সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে আমাদের কাজটা সবরকম দর্শককে ছুঁতে পেরেছে। শুভ্রজিৎকে কুর্নিশ এই ছবিটা করার জন্য। কাউকে তো সাহস করে করতে হবে। ও সেটা করেছে। আর অর্জুন (চক্রবর্তী, ছবিতে অপুর চরিত্রাভিনেতা) যেন এই চরিত্রটা করার জন্যই জন্মেছে। সুর করার জন্য তো একটা চেহারা সামনে লাগে। আমার সামনে শুরু থেকেই সেই চেহারাটা ছিল অর্জুনের। আর কাউকে ওই জায়গায় রাখা যেত না।”
আরও পড়ুন: তিনবার অভিনেতা পাল্টে ‘গুপী’ হলেন তপেন
বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও কাজ করছেন বিক্রম। হর্ষ ছায়ার ‘খজুর পে অটকে’ ছবিতে সুরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি গিরিশ মালিকের ‘তোড়বাজ’ ছবির সুর করেছেন। গিরিশের পরবর্তী ছবি ‘ব্যান্ড অফ মহারাজা’তেও সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। এছাড়া অরিন্দম শীলের ‘মায়াকুমারী’, ‘মহানন্দা’ ও শবর সিরিজ়ের পরবর্তী ছবিতেও সুর করেছেন বিক্রম। শুভ্রজিতের ‘মায়ামৃগয়া’তেও সুরারোপ করেছেন তিনি। এছাড়া রয়েছে পুজোর অ্যালবামের কাজ।
হিন্দিতে যেভাবে কাজ বাড়ছে তাতে কি আগামীদিনে পাকাপাকিভাবে মুম্বইতে থেকেই কাজ করবেন তিনি?
“মুম্বই থেকে বহুবার ডাক এসেছে,” জানালেন বিক্রম। “অনেকেই বলেছে এখানে থেকে কীভাবে হিন্দি ছবির কাজ করবে? সোনুর (নিগম) সঙ্গে কাজ করার সময় ও অনেকবার বলেছে ওখানে গিয়ে থাকতে। কিন্তু আমি আমার শহর ছেড়ে যাব না। এখানে নিজের স্টুডিওতে আমি যেভাবে কাজ করতে পারি, সেটা আর কোথাও সম্ভব নয়। যাঁর দরকার তিনি আমাকে খুঁজে নেবেন। অনেকেই তো এখানে এসে কাজ করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনিই আমি নানারকম কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকি। তার মধ্যে শাস্ত্রীয় বা ফিউশন যেমন থাকে তেমনই নিজের অ্যালবামের কাজও থাকে। তাই ছবির কাজ করলে বেছেই করব। একসঙ্গে প্রচুর ছবির কাজ আমি করব না। আর কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা আমার নেই।”
ছবি: প্রতিবেদক