‘মহানন্দা’র গান শোনালেন বিক্রম ঘোষ ও দলবল
RBN Web Desk: অভিজাত বেঙ্গল ক্লাবের সামনে পৌঁছতেই পরিচিত কণ্ঠস্বরটা কানে এল। বিশাল লনে পা দিতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস। যাক বাবা, আসল অনুষ্ঠান এখনও শুরু হয়নি। বিক্রম ঘোষের অনুষ্ঠান মানেই নতুন কিছুর আশা। বিক্রম ও তাঁর দলবল শোনালেন অরিন্দম শীলের পরবর্তী ছবি ‘মহানন্দা’র সঙ্গীত। তবলার প্রতিটি বোল যেন একটি প্রশ্ন যার যথাযথ উত্তরে বাঁশিতে সুর তুললেন সৌম্যজ্যোতি ঘোষ। গানে সঙ্গত করলেন ইমন চক্রবর্তী, দীপান্বিতা আচার্য, সাহানা বাজপেয়ী ও তিমির বিশ্বাস। এই প্রথম বিক্রমের সুরে গান গাইলেন সাহানা।
মহাশ্বেতা দেবীর জীবনাধারে অরিন্দম তৈরি করেছেন ‘মহানন্দা’। তবে এই ছবি কোনওভাবেই তাঁর জীবনী নয়, জানালেন অরিন্দম। “বরং বলা যায় তাঁর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, যেগুলো সাধারণ মানুষের জানা প্রয়োজন, সেগুলো দেখানো হয়েছে। ছোটবেলায় শুরু হয়ে ছবি শেষ হয় ওঁর সিঙ্গুর সংগ্রাম দিয়ে। আমি নিজে মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছি। আমার মনে হয়েছিল ওঁর এই বর্ণময় জীবন সকলের জানা উচিত। শুধুমাত্র ওঁর লেখা বই পড়ে ওঁকে সম্পূর্ণ জানা সম্ভব নয়,” দাবি পরিচালকের।
আরও পড়ুন: ঋষিকে হারিয়ে দিয়েছিলেন রাজেশ?
অরিন্দমের ছবি মানেই বিক্রমের সুর। মঞ্চে সুর-তাল-লয়ের যুদ্ধ শুরুর আগে কিছুক্ষণের জন্য তাঁকে ফাঁকা পাওয়া গেল। মহাশ্বেতা দেবীর জীবন যখন, সেক্ষেত্রে সাঁওতাল, মুন্ডা জনজাতির কথা স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে। বিক্রমের সঙ্গীতও কি সেই ধামসা মাদলের মাদকতা ছুঁয়ে যাবে? লোকগীতিই কি এবার বিক্রমের অস্ত্র?
“না, কোনও পরিচিত লোকগীতি বা সাঁওতাল গান আমরা ব্যবহার করিনি,” রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন বিক্রম। “ছবিতে মোট আটটা গান থাকছে। তার মধ্যে একটি গান রবীন্দ্রসঙ্গীত আর বাকি সাতটিই নতুন। প্রত্যেকটা গানের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যাতে মনে হবে গানগুলি অনেক পুরোনো। আমরা সাঁওতালি সুরের ক্ষেত্রে সাঁওতালি যন্ত্রই ব্যবহার করেছি। আসল ধামসা মাদলই বেজেছে। এমনকি রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যেও সাঁওতালি সুরের ছোঁয়া থাকছে।”
আরও পড়ুন: স্লিপার সেলের কর্মকাণ্ড নিয়ে ছবিতে ইন্দ্রনীল, রাজনন্দিনী, শতাফ
আটটি গানের মধ্যে ‘হে ওতে’ ও ‘ঢোল বাজে’ গেয়েছেন দীপান্বিতা। ‘রং ধরসে’ ও ‘আমার এ পথ’ গানদুটি গেয়েছেন সাহানা। ‘মাটি’ রয়েছে ইমনের কণ্ঠে আর তিমির গেয়েছেন ‘ধনুক উঠাও’ ও ‘আপনি বাঁচলে’। তিমির ও দীপান্বিতার দ্বৈতকণ্ঠে থাকছে ‘ঝাঁসির গান’। এদের মধ্যে ‘আপনি বাঁচলে’ গানটি তিমিরের লেখা এবং সুরারোপিত। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া বাকি গানগুলি লিখেছেন শুভেন্দু দাশমুন্সি যিনি এই ছবির চিত্রনাট্যকারও।
মঞ্চে একের পর এক গান শুনতে-শুনতে শ্রোতারা নিজেরাও যেন হারিয়ে যাচ্ছিলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের যুগে।
অনুষ্ঠানের মধ্যেই উপস্থিত হলেন গার্গী। জানালেন, “আমার সঙ্গে মহাশ্বেতা দেবীর ব্যক্তিগত আলাপ হয়নি। স্কুলে পড়ার সময় শুধু ‘ন্যাদোস’ গল্পটি পড়েছিলাম। এরপর ওঁর লেখা বই পড়েছি। এই ছবির জন্য আমি মহাশ্বেতা দেবীর অনেক ইন্টারভিউ দেখেছি। উনি কীভাবে হাঁটতেন, কথা বলতেন সেগুলো শিখেছি। একবার একটা সাক্ষাৎকারে উনি বলেছিলেন ওনার হাঁটুতে ব্যাথা। সেটা আমার অভিনয়ের মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছি,” জানালেন গার্গী।
গার্গী রায়চৌধুরী
গার্গীর দাবি, তিনি বরাবরই জানতেন এই চরিত্রটা উনিই করবেন। একদিন ঘরোয়া আলোচনায় মহাশ্বেতা দেবীকে নিয়ে ছবি করার কথা ওঠে। “এতটা বর্ণময় একজন মানুষের জীবন তো আর একটা ছবিতে বলা সম্ভব নয়। তাই ওঁর জীবনের কিছু বিশেষ ঘটনাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘মহানন্দা’, জানালেন গার্গী।
ছবিতে বিশেষ প্রস্থেটিক্সের সাহায্য নিতে হয়েছে গার্গীকে। রামপুরহাটে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রায় আড়াই ঘন্টারও বেশি সময় নিয়ে মেকআপ হতো। আর সেই মেকআপ তুলতে আরও ঘন্টা দেড়েক সময় লাগত। তবু এসব কোনও কষ্টই নয় বলে মনে করেন গার্গী।
আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ
তাঁর সঙ্গে আড্ডার মাঝেই কানে এল ইমনের কন্ঠস্বর। মঞ্চে তিনি তখন বিক্রমের সঙ্গে খুনসুটিতে ব্যস্ত। মজার ছলে ইমন বললেন, “আমার খুব দুঃখ ছিল এই ছবিতে বিক্রমদা আমাকে একটাও গান দিচ্ছিল না।” সঙ্গে-সঙ্গে বাধা দিলেন বিক্রম। বললেন, “আমি একবারও বলিনি ইমনের কোনও গান নেই। আমি বলেছি ওর গানটা তখনও অন প্রসেস।” হেসে ফেললেন ইমন, “তবুও এখানে তিনটে গান গেয়েছে দীপান্বিতা, দুটো সাহানা, দুটো তিমির আর আমার কপালে মাত্র একটা।” এরপরই ইমন শুরু করলেন ‘মাটি আমার শুনছে কথা, মাটিতে মা জমছে ঋণ’।
এরই মাঝে শুভেন্দু জানালেন, “’মহানন্দা’ সম্পূর্ণ সত্যনির্ভর। মহাশ্বেতার জীবন এমনিতেই এত ঘটনাবহুল, সেখানে আলাদা করে কিছু যোগ করার সুযোগই ছিল না। এমনকি ওঁর জীবনের সব ঘটনা দেখানো সম্ভবও হয়নি।”
এক সময় শেষ হলো অনুষ্ঠান। চৈত্রের গরমে মঞ্চ থেকে ঘামতে ঘামতে-নেমে এলেন সকলে। তবুও কারও মুখে ক্লান্তির রেশমাত্র নেই। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছিল এবার ওঠার পালা। মাটির সুরে ধামসার তালে অদ্ভুত সুন্দর একটি সন্ধ্যার সাক্ষী থাকলেন শ্রোতারা।
গার্গী ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ঈশা সাহা, দেবশঙ্কর হালদার ও অর্ণ মুখোপাধ্যায়।
৮ এপ্রিল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে ‘মহানন্দা’।
ছবি: প্রতিবেদক