দাবদাহের মধ্যেও জমে গেল চলচ্চিত্র উৎসব
কলকাতা: চৈত্রের শুরু থেকেই গরম ও আর্দ্রতার জেরে গোটা রাজ্যের হাঁসফাঁস অবস্থা। গতকাল কালবৈশাখীর কারণে সাময়িক স্বস্তি এলেও কোনও আশার বাণী শোনাতে পারেনি আবহাওয়া দপ্তর। তবু সমস্ত জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে নন্দন চত্বরে জমে গেল শহরের বাৎসরিক সিনেপার্বণ। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, করোনা অতিমারীর তৃতীয় ঢেউয়ের ফলে পিছিয়ে যায় এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ২৫ এপ্রিল উৎসব শুরুর দিন ঘোষণা হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ থেকে সাধারণ মানুষ সকলেরই আলোচনার বিষয় ছিল ভরা গ্রীষ্মের মধ্যে দর্শক এই উৎসবে কতটা উৎসাহিত হবেন। সেই সব সন্দেহকে ভুল প্রমাণিত করে, গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যেও সপ্তাহান্তে সাধারণ মানুষের ঢল নামল নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বরে।
কসবা থেকে এসেছিলেন সুদীপ সরকার। জানালেন, আগেও দু’দিন এসেছেন দুটি বিদেশি ছবি দেখতে। আশা করেছিলেন গরমের কারণে এবারে হয়ত প্রেক্ষাগৃহ ফাঁকা থাকবে। কিন্তু তেমনটা মোটেও হয়নি। রীতিমত লাইন দিয়ে পাস জোগাড় করতে হয়েছে তাঁকে।
আরও পড়ুন: শিক্ষিকার ভূমিকায় অর্পিতা, প্রেক্ষাগৃহে আগামী মাসে
গতকাল সন্ধ্যায় পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ‘ধর্মযুদ্ধ’ ছবিটি দেখানো হলো রবীন্দ্রসদনে। ২০২০ থেকে তিনবার চেষ্টা করেও অতিমারীর কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। সেই ছবির পাস সংগ্রহের জন্য অনেকের মধ্যেই উৎসাহ দেখা গেল।
তবে সবক্ষেত্রে যে উৎসাহ নিয়েই মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন তেমন নয়। অনেকেই কিসের লাইন না জেনেও দাঁড়িয়ে পড়েছেন। ২৯ এপ্রিল দুপুরে নন্দন ১-এ প্রবেশের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এক চল্লিশোর্ধ মহিলা। কোন ছবি দেখতে দাঁড়িয়েছেন জিজ্ঞাসা করতে বললেন, “জানি না তো। সিনেমা শুরু হলেই জানতে পারব।”
আরও পড়ুন: ফেটে চৌচির চশমার কাচ, ঠোঁটে রক্ত নিয়ে জঙ্গলমহলে কমলেশ্বর
নন্দন ২-এর প্রবেশের মুখে সত্যজিৎ রায় প্রদর্শনী দেখার জন্য সারাদিনই ভিড় লেগে আছে। ছবি দেখা, ছবি তোলা এবং সেলফি তোলার উৎসাহের অভাব নেই। ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ অবলম্বনে পরিচালক শৈবাল মিত্রর ছবি ‘আ হোলি কনস্পিরেসি’ দেখতে নন্দন ২-এ ভিড় উপচে পড়েছিল সপ্তাহের মাঝেই। হলের সিঁড়িতে এবং প্রবেশপথের ধারে দাঁড়িয়েও ছবি দেখলেন অজস্র সিনেপ্রেমী।
সকলেই যে ছবি দেখতে আসছেন তেমন নয়। কলেজপড়ুয়া পৃথা, অর্ক ও তনুশ্রী এসেছেন প্রদর্শনী দেখতে আর সিনে আড্ডায় যোগ দিতে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সিনেমায় কমেডি নিয়ে একটি সিনেআড্ডার আগে মজাদার ক্যুইজে হইহই করে অংশ নিলেন তিন বন্ধু।
আরও পড়ুন: উত্তমরূপী শাশ্বতর সঙ্গে বার্লিন চললেন ‘সত্যজিৎ’ প্রিয়াংশু
তবে অসন্তোষও রয়েছে কারও মধ্যে। এ বছর কোর্টের নির্দেশে বোর্ড পরীক্ষা চালু থাকার কারণে মুক্তমঞ্চে সিনেআড্ডার ব্যাবস্থা করা যায়নি। বাংলা আকাদেমির সীমিত আসনে অনেকেই জায়গা পাননি। শিয়ালদহ থেকে আসা ক্ষুব্ধ রিনা মিত্র বললেন, “যেখানে অনুমতি দেওয়া হয়নি সেখানে এগুলো এ বছর বন্ধ রাখতে পারত। মুক্তমঞ্চের আলোচনা শোনার জন্যই আসি। এখানে এতগুলো স্ক্রিন রয়েছে, অথচ কোনও অনুষ্ঠান বাইরে দেখানো হচ্ছে না। এই চত্বরে তো কোনও স্কুল নেই। অন্তত স্ক্রিনে তো সকলের জন্য সেমিনারগুলো দেখানো যেত।”
একতারা মঞ্চে অনুষ্ঠান না থাকলেও তার আশেপাশে আড্ডায় মেতেছেন বহু মানুষ। সেই আড্ডায় সিনেমা থাকুক বা না থাকুক, জমজমাট হয়ে রয়েছে চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাঙ্গণ।
ছবি: গার্গী মজুমদার