সংঘাত অব্যাহত, মুখ পুড়ছে বাংলা ছবির
RBN Web Desk: শেষ হয়েও হচ্ছে না শেষ। এই মুহূর্তে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় (Rahool Mukherjee) ও তাঁর সম্ভাব্য পুজোর ছবি নিয়ে ফেডারেশনের সঙ্গে গিল্ডের ইগোর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত লাভ যারই হোক, মুখ পুড়ছে বাংলা ছবিরই।
গতকাল সকালে পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকের পর ডিরেক্টর্স গিল্ড এই মর্মে সংবাদমাধ্যমকে বিবৃতি দেয় যে ভুল তথ্যের কারণে রাহুলের ওপর লাগু হওয়া তিনমাসের সমস্ত কর্মবিরতির নির্দেশ তুলে নেওয়া হচ্ছে। বিদেশি সংস্থা বা সেখানকার প্রযোজকদের নীতি নির্ধারণ করা গিল্ডের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করার জন্য অনুমতি নেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না। সম্পূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাবে এই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিশিষ্ট পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনার পর রাহুলকে সমস্ত রকম নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই দিচ্ছে গিল্ড।
আরও পড়ুন: চলচ্চিত্র উৎসবে নয়া ভূমিকায় প্রসেনজিৎ?
এই ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে খুশির হাওয়া বয়ে গিয়েছিল। রাহুলের পাশে থাকা পরিচালক, অভিনেতা ও সাধারণ দর্শক একে এক ধরনের নৈতিক জয় হিসেবেই দেখছিলেন। আজ থেকে বড় প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে পুজোর ছবির শুটিং শুরু করারও কথা ছিল। কিন্তু গতরাত থেকে দেখা গেল অন্য ছবি।
রাতের বৈঠকের পর ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ন্স অ্যান্ড ওয়াকার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া জানায় যে আগের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে। অর্থাৎ পরিচালক হিসেবে রাহুল আগামী তিনমাস কাজ করতে পারবেন না। তবে কার্যনির্বাহী প্রযোজক হিসেবে ছবিটির সঙ্গে তিনি থাকতে পারবেন। এর কারণ হিসেবে ফেডারেশন জানায় বেশ কিছু টেকনিশিয়ন নাকি রাহুলের পরিচালনায় কাজ করতে আপত্তি জানিয়েছেন। তবে এই কারণের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পুজোয় পুলিশ টোটা?
বাংলা ছবির অবস্থা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নানা আলোচনায় বারবার এ কথাই উঠে এসেছে যে দর্শকদের হলমুখো করে তুলতে না পারলে বাংলা ছবিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। সেই জন্য চাই বড় বাজেটের বিনোদনমূলক ছবি। অথচ বছরে যে ক’টা ছবি হয় তার মধ্যে বিনোদনমূলক ছবির সংখ্যা খুবই কম এবং সেই সব ছবির বাজেটও তেমন বলার মতো নয়। এর ওপর থাকে ফেডারেশনের চোখরাঙানি ও নিয়মের বেড়াজাল। যেসব শর্ত ও যে পরিমাণ টেকনিশিয়ন নিয়ে কাজ করার নিয়ম সেই শর্ত মেনে চলার উপযুক্ত বাজেট থাকে না অনেক সময়েই। যদিও ফেডারেশন এই সমস্ত শর্ত আরোপ করে টেকনিশিয়নদের কথা ভেবেই, তবু এত নিয়ম মানতে গিয়ে আদতে ক্ষতি হয় ছবিরই।
এছাড়া বছরে যে ক’টা ছবি হয় তাই দিয়ে টেকনিশিয়নদের অবস্থার বিশেষ কোনও উন্নতি হয় না। টেলিভিশন ও ওয়েব সিরিজ়ের কাজের ওপরেই বেশি নির্ভর করে থাকতে হয় তাঁদের। তাহলে শুধুমাত্র সেই নিয়মের দোহাই দিয়ে একজন পরিচালকের তিনমাস কাজ বন্ধ করে দেওয়া, যখন তাঁর হাতে বড় কাজের দায়িত্ব এসেছে, কতটা যুক্তিযুক্ত তাই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মতো তারকা নিয়ে যে ছবি শুরু হতে যাচ্ছে তাকে বারবার বাধা দিয়ে ফেডারেশনের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের ভেতরের ইগো সমস্যাকেই প্রকট করলেন। যে বাংলা ছবির স্বার্থে ফেডারেশনের জন্ম, তা যদি সত্যিই বিচার্য হতো তাহলে এই পরিস্থিতি কখনওই উদ্ভূত হতে পারে না।
আরও পড়ুন: ‘সোলজার ২’-এর সম্ভাবনা, থাকবে কি প্রিটি-ববি জুটি?
একইভাবে আগেও ফেডারেশনের হস্তক্ষেপে কয়েকজন পরিচালকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে বড় প্রযোজনা সংস্থা থাকায় রাহুলের হয়ে অনেকেই যেভাবে মুখ খুলেছেন সেটা অন্য কোনও পরিচালকের ক্ষেত্রে হওয়া সম্ভব ছিল না। কাজেই সেক্ষেত্রে ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত নতুন পরিচালকদের কাজে বাধা দেওয়া ছাড়া বিশেষ কিছুই করছে না যার ফলে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির। এই পরিস্থিতিতে ভেবে দেখার সময় এসেছে আগামি দিনে বাংলা ছবির ভাগ্য নির্ধারণ কি তাহলে বহিরাগতরাই করবে?
আজ সকালে পরিকল্পনা মতো শুটিং করতে গিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু টেকনিশিয়নদের অনুপস্থিতিতে শুটিং করা যায়নি। এই ঘটনায় পরিচালকরাও আজ সরব হয়েছেন।
শেষ খবরে জানা গেছে, আজ ফেডারেশনের তরফে টেকনিশিয়ন স্টুডিয়োতে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীদের তথাকথিত ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও ফেডারেশনকে মিথ্যা বদনাম দেওয়ার অভিযোগে একজোট হওয়ার জন্য বিভিন্ন গিল্ড সংস্থাগুলিকে ডাক দিয়েছে ফেডারেশন।