সিনেমার নামে দর্শককে গারবেজ গেলানো হচ্ছে: আর বালকি
RBN Web Desk: প্রায় ছ’দশক আগে সত্যজিৎ রায় তাঁর ছবি ‘নায়ক’-এর চরিত্র হরেন বোসের মুখে সংলাপ বসিয়েছিলেন, ‘আমরা এখনও কোয়ালিটি নিয়ে মাথা ঘামাতে শিখিনি। আমাদের মটোই হচ্ছে প্রোডিউস মোর অ্যান্ড প্রোডিউস রাবিশ।’ ২০২৪ সালে পরিস্থিতির যে কোনও উন্নতি হয়নি, বরং তা আরও অবনতির দিক গেছে, সেই আক্ষেপই ঝড়ে পড়ল পরিচালক আর বালকির (R Balki) কথায়। রাবিশ নয়, তাঁর মতে সিনেমার নামে আজকাল দর্শককে গারবেজ গেলানো হচ্ছে।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ৬ ডিসেম্বর সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতার বক্তা ছিলেন বালকি। বললেন, “পরিবেশের সঙ্গে সিনেমাও ধুঁকছে। তবু পরিবেশের অসুস্থতা নিয়ে অনেকের মাথাব্যথা আছে, কিন্তু মরণাপন্ন সিনেমা নিয়ে কারও বিশেষ ভ্রুক্ষেপ নেই।”
বালকির বক্তৃতার বিষয় ছিল: ‘সিনেমার মৃত্যুর আগে যেন আমার মৃত্যু হয়।’ সৃজনশীল শিল্প হিসেবে সিনেমা আর কতদিন টিকবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। “সত্যজিৎ রায় ভাগ্যবান, তাঁকে সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হয়নি,” বললেন বালকি।
আরও পড়ুন: পরনে ‘ভালো থেকো’র শাড়ি, প্রথম ছবির স্মৃতিচারণে বিদ্যা বালন
বর্তমান সময়ে যে কোনও ছবিকে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সাফল্য দিয়ে বিচার করা হয় বলে মনে করেন ‘চিনি কম’, ‘পা’, ‘প্যাডম্যান’-এর মতো ছবির পরিচালক। অথচ একটা ছবির মাপকাঠি তো সেটা হওয়ার কথা নয়। সাফল্যের দিক থেকে ধরলে বক্স অফিসে সফল বেশিরভাগ ছবিই অত্যন্ত খারাপ মানের এবং দেখার অযোগ্য বলে মনে করেন তিনি। “শুধুমাত্র টাকার জোরে সেই সমস্ত ছবি প্রচারের মাধ্যমে দর্শককে হলে টেনে আনছে। ছবিটি দেখার পর দর্শকের হয়তো ভালো লাগছে না কিন্তু ততক্ষণে প্রচারের উদ্দেশ্য সফল হয়ে যাচ্ছে। এমন ছবি দেখে দর্শকের মধ্যে ভালো ছবির খিদে তৈরি হয় না। ছবি এমন হওয়া উচিত যা দর্শককে ভাবতে বাধ্য করবে। আরও ছবি দেখতে উৎসাহিত করবে,” বললেন বালকি।
ইদানিং ডিজিটাল মাধ্যমের দৌলতে মোবাইল ফোনে ছবি দেখার অভ্যাস সর্বত্র। সেই প্রসঙ্গে বালকি বললেন, “প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখা মানে মাথা উঁচু করে দেখা, অর্থাৎ নিজেকে বড় একটা প্রেক্ষাপটে উত্তীর্ণ করা। অন্যদিকে মোবাইল ছবি দেখা মানে মাথা নামিয়ে নিজেকে অনেকটা ছোট গণ্ডিতে বেঁধে ফেলা। মেধার অভাব শুধু ভারত নয়, সমগ্র বিশ্বে ছবির মান নামিয়ে দিচ্ছে।”
আরও পড়ুন: ফেলুদা সিরিজ়ে বিশেষ চরিত্রে ঋদ্ধি
কথা প্রসঙ্গে উঠে এল বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচারিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির কথা। বালকি বললেন, “কিছু শাড়ির আমরা আলাদা করে কদর করি, কারণ সেগুলো হ্যান্ডমেড হয়। খুব দ্রুত এমন একটা সময় আসতে চলেছে যখন ছবিও ম্যানমেড এবং মেশিনমেড এই দু’প্রকারে ভাগ করা যাবে।”
সিনেমার টিকিটের দাম কমানোর পক্ষেও জোরালো সওয়াল করেন বালকি। বলেন, “স্রেফ বড় বাজেটের ছবির খরচ তোলার জন্য টিকিটের দাম এত বেশি রাখা হচ্ছে। সিনেমাকে সকলের সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসা আশু প্রয়োজন।”
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য