ফ্যান্টম প্রেগনেন্সি নিয়ে ছবি চলচ্চিত্র উৎসবে

কলকাতা: ফ্যান্টম প্রেগনেন্সি। শব্দটার সঙ্গে খুব বেশি মানুষ পরিচিত নন। তবু আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের কল্যাণে শিক্ষিত মানুষ যদি বা জানতে বুঝতে পারেন, নিম্নবিত্ত আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এ হলো আদপেই এক ভূতুড়ে ব্যাপার। এই ধরনের গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ ছাড়াই গর্ভধারণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ গর্ভধারিণী মনে করেন তিনি মা হতে চলেছেন, শারীরিক সমস্ত পরিবর্তন সেইভাবেই হতে থাকে, অথচ জরায়ুতে ভ্রূণ থাকে না।

চিকিৎসাশাস্ত্রের এই জটিল এবং কিছুটা বিরল ঘটনাকে নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘ন’মাস ন’দিন এবং অন্তহীন’ (Silence of the Womb) ছবিটি। পরিচালনায় সৌমদীপ ঘোষ চৌধুরী। অভিনয় করেছেন শ্রেয়া ভট্টাচার্য, সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়, পারমিতা মুখোপাধ্যায়, বৈশাখী রায় ও অভীক বাগচি। গতকাল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ছবির পরিচালক ও শিল্পীরা। এবারের উৎসবে ভারতীয় ভাষার প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ছবিটি।

সৌমদীপ জানালেন, “ফ্যান্টম প্রেগনেন্সি আসলে একটা রোগ। একজন মহিলা মনে করছে সে অন্তঃসত্ত্বা। তার পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেছে, তার শারীরিক পরিবর্তন এসেছে। অথচ কয়েক মাস পরে দেখা যায় পেটের ভেতরে আসলে কিছুই নেই। হাওয়া বেরিয়ে গিয়ে তখন আবার পেটটা আগের মতো হয়ে যায়। তখন লোকজনের ধারণা হয় পেটের ভেতর তাহলে নিশ্চয়ই ভূত বা জিন কিছু ছিল। এর সঙ্গে রয়েছে সেই মহিলার মানসিক অবস্থা, যেটা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে।” 

আরও পড়ুন: পরনে ‘ভালো থেকো’র শাড়ি, প্রথম ছবির স্মৃতিচারণে বিদ্যা বালন

শ্রেয়া এই ছবির মূল চরিত্র শ্রীময়ীর ভূমিকায় আছেন। জানালেন, “ফ্যান্টম প্রেগনেন্সি সম্পর্কে আমি আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু একটা বিশেষ রোগ নিয়ে জানা আর সেই রোগে আক্রান্ত হিসেবে অভিনয় করা, সেই চরিত্রে বাঁচা দুটো একেবারে আলাদা জিনিস।”

একজন মেয়ে যখন মা হতে যায় তার ভেতর অনেক পরিবর্তন আসে, অনেক দুশ্চিন্তা ভীতি কাজ করে। ঠিক সেরকমই একজন হবু বাবার মধ্যেও কিন্তু এরকমই কিছু জিনিস ঘটে, জানালেন সাগ্নিক। তিনি রয়েছেন শ্রেয়ার স্বামী সিধুর চরিত্রে। “মা না হতে পারার জন্য মেয়েটিকে যেমন নানা কথা শুনতে হয়, ছেলেটিকেও তেমনইশুনতে হয়। সেটা অন্যভাবে, অনেক ক্ষেত্রেই খুব কঠিন হয় এই অবস্থাটা। এই ব্যাপারটা আমার এই চরিত্রের মধ্যে ছিল। এছাড়াও নৌকো চালানো, জাল ফেলা এইসব কাজ যেগুলো আমি প্রতিদিন করি না, সেগুলোও আমাকে এখানে করতে হয়েছে,” বললেন সাগ্নিক। 

আরও পড়ুন: কেয়াতলায় রাপ্পা রায়, সঙ্গে ডলফিনও

ছবি করতে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ মানুষই এরকম কোনও শারীরিক অসুস্থতার ব্যাপারে জানে না, জানালেন পরিচালক। ভারতীয় সমাজে এক বিবাহিত দম্পতির বাবা-মা হতে না পারা বহু বাইরের লোকের কাছেই বেশ অস্বস্তিকর এবং হতাশাজনক। সেই সময় সেই দম্পতিকে কোন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় সেই সামাজিক ও মানসিক চাপের পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছেন শ্রেয়া ও সাগ্নিক। সঙ্গে রয়েছে এক অদ্ভুত বিরল অসুস্থতা যাকে বোঝা এক নিম্নবিত্ত অশিক্ষিত পরিবারে প্রায় অসম্ভব। ফলে খুব সহজেই সেই মেয়েটিকে দায়ী করা হয় সমস্ত দুর্ভাগ্যের জন্য। 

ছবিটি সম্পাদনা করেছেন সুজয় দত্ত রায়। সুর সংযোজন করেছেন শুভদীপ গুহ। 

ছবি: সুফল ভট্টাচার্য




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *