কত কথা বলা হলো না, মা-বাবা চলে যাওয়ার পর এটাই মনে হয়: স্বস্তিকা

পুজো মানেই ঘরে ফেরা। কর্মসূত্রে বাইরে থাকা ছেলেমেয়েরা পুজো উপলক্ষে ক’টাদিন কাটিয়ে যায় প্রিয়জনের সান্নিধ্যে। সেই নিয়েই পরিচালক অভিজিৎ শ্রীদাসের ছবি ‘বিজয়ার পরে’ এ মাসেই মুক্তি পেতে চলেছে। কিছুদিন আগে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল ছবিটি। অভিনয়ে রয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, মমতা শঙ্কর, দীপঙ্কর দে এবং অন্যান্যরা। প্রৌঢ় বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়ের সম্পর্ক নিয়ে তৈরি এই ছবি প্রসঙ্গে রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে একান্ত আড্ডা দিলেন স্বস্তিকা। উঠে এল ব্যক্তিগত নানা কথাও।

‘বিজয়ার পরে’ ছবির গল্পটা কী নিয়ে? 

স্বস্তিকা: এই গল্পটা আসলে আমাদের খুব চেনা। আমাদের, মানে আমার মতো যাদের বয়স, তাদের বাবা-মায়েরা সকলেই বয়স্ক। এই মানুষগুলো খুব একা হয়ে গেছে। কাজের সূত্রে আমরা তাদের কাছে থাকতে পারি না। ফোন করেও আমরা আর কেউ গল্প করি না। খেয়েছ, ঘুমিয়েছ, ওষুধ খেয়েছ, এগুলোর বাইরে আমরা আর কথা বলি না বা বলা হয়ে ওঠে না। কারণ সকলেই এত ব্যস্ত, তাদেরও তো উপায় নেই। আমার মেয়েও যখন মুম্বইতে গ্র্যাজুয়েশন করছিল, পুজোয় ছুটি পেত না। আমি সন্ধিপুজোর সময় ওকে ভিডিয়ো কল করে দেখাতাম। কারণ মনে হতো ওর তো দেখা হবে না। বাবা-মায়েদের বয়স বেড়ে গেলে এই অপেক্ষাগুলো বাড়তে থাকে। 



ছবিতে তোমার চরিত্রটা কেমন? 

স্বস্তিকা: আমার চরিত্রের নাম মৃণ্ময়ী। দীপঙ্করজেঠু ও মমপিসির মেয়ে আমি। মৃন্ময়ী তো মা দুর্গারও নাম। তাই খুব পছন্দ হয়েছিল নামটা। তবে পুজোর ছবি হওয়া সত্বেও ছবিটা বেশ সিরিয়াস ধরণের, খুব একটা হুল্লোড় নেই। যাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকে পুজোটা তো বাবা মায়েরা অনেকটা একাই কাটায়। ছুটি থাকে দশেরার সময়। কাজেই বাড়িতে সকলের ফিরতে-ফিরতে পুজো শেষ হয়ে আসে। মৃণ্ময়ী বাইরে পড়াশোনা করেছে। সে একটা লিভ-ইন রিলেশনে থাকে এমন একজনের সঙ্গে যে অন্য ধর্মের। এই চরিত্রটা করেছে মীর (আফসর আলী)। এই সম্পর্ক নিয়েই বাবার সঙ্গে মৃণ্ময়ীর একটা বিরাট সমস্যা দেখা দেয়। বাবা-মা নিজে থেকেই মেনে নেবে নাকি মেয়ে এসে মানিয়ে নেওয়ার কথা বলবে, এই টানাপোড়েনে অনেকটা সময় কেটে যায়। এই সময়টা খুব দামী। সেটা একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না, এটাই এই ছবির মূল বক্তব্য বলা যায়। 

আরও পড়ুন: “আজকাল অনেকেই আমাকে চিনতে পারছেন”

অনেক ক্ষেত্রে তো ইচ্ছে থাকলেও ছেলেমেয়েদের উপায় থাকে না বাবা-মাকে সঙ্গ দেওয়ার বা তাদের সঙ্গে সময় কাটাবার। এটাও তো বাস্তব

স্বস্তিকা: আমি বরাবর বাবা-মায়ের সঙ্গেই থেকেছি। আলাদা বাড়ি কিনলেও আলাদা থাকা আর হয়নি। আমার বন্ধুরা যারা এখনও বাবা-মাকে পাচ্ছে, আমি তাদের বলি যে যতক্ষণ তাঁরা আছে যা বলার বলে নাও। কারণ একবার চলে গেলে তখন মনে হবে অনেক কিছু বলা বাকি রয়ে গেল। আমার নিজেরই এরকম মনে হতো মা চলে যাওয়ার পর। কিন্তু ওই, সব কথা বলা হয়ে ওঠে না। এই ছবিতে একটা জায়গায় মৃণ্ময়ীর মা তাকে বলছে, আর একটু আগে আসতে পারলি না। উত্তরে মেয়ে বলছে, তুমি আর ডাকলে কই? আমরা শুধু অপেক্ষা করি উল্টোদিকের মানুষটা ডাকবে, সেও ভাবে আমি হয়তো আগে বলব। এই অপেক্ষায় সময় চলে যায়। কথাগুলো আর বলা হয় না। তাই সময় থাকতে সব কথা বলে নেওয়া ভালো, নাহলে অনেক আফসোস থেকে যায়। 

আরও পড়ুন: ডেভিড হেয়ারের জীবনী প্রকাশ

তুমি নতুন পরিচালকদের সঙ্গে প্রচুর কাজ করো। এই ছবির পরিচালকও নতুন। এই ক্ষেত্রে তুমি কী দেখে একজনকে হ্যাঁ বা না বলো? 

স্বস্তিকা: প্রথমে অবশ্যই গল্প শুনব এবং চিত্রনাট্য পড়ব। কারণ এমন বহুবার হয়েছে যে গল্প ভালো হলেও চিত্রনাট্য খারাপ। আবার এমনও হয়েছে যে দুটোই ভালো কিন্তু পরিচালকের টিমে তেমন কেউ নেই যাঁর ওপর ভরসা করা যায়। নতুন হলেও কাজটা তো হাতেকলমে জানতে হবে। এমনও হয়েছে আমাকে এসে গল্প শুনিয়ে মিটিং করে ছবি নিয়ে আলোচনা করে গেছে। এরকমও হয়েছে, এই সবটাই ছিল আমাকে কাছ থেকে দেখার একটা অছিলামাত্র। আদৌ কোনও ছবি তিনি করবেন না। তাই কাদের নিয়ে পরিচালক কাজ করবেন সেটা অবশ্যই দেখতে হয়। ছবিতে আর কারা অভিনয় করছেন সেটা অবশ্য সবসময় এতটাও জরুরি নয়। কারণ এই ছবিতে যেমন সকলেই নামী অভিনেতা, এমনও হয়েছে নতুন অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছি তারা থিয়েটার থেকে এসেছে এবং সকলেই দুর্দান্ত অভিনয় করে। 

আরও পড়ুন: অন্তত পাঁচ বছর থিয়েটার করার পরামর্শ মনোজের

এই ছবির ক্ষেত্রে গল্প না চিত্রনাট্য কোনটা ভালো লেগেছিল? 

স্বস্তিকা: দুটোই। এই ছবিতে আমি কিন্তু মুখ্য চরিত্র নই। এখানে দুই মূল চরিত্র দীপঙ্করজেঠু ও মমপিসি। বাকি আমরা সবাই পার্শ্বচরিত্র। আমি চিত্রনাট্য পড়ে দেখলাম যে বাবা-মায়েরা তো সব সিনেই ওভারবাউন্ডারি মারবেন, কারণ গল্পটা তাদের নিয়েই। সেখানে আমার অন্তত দু’তিনটে বাউন্ডারি মারার সুযোগ থাকলেই হলো। আমার অভিনয় করতে খুব ভালো লেগেছে, কারণ এদের দুজনকে বাবা-মা বলে ডাকতে পেরেছি, যেটা অনেকদিন আর ডাকা হয় না। তাই ‘বিজয়ার পরে’ খুব ইমোশনাল একটা জার্নিও বলা চলে। 



মীরের সঙ্গে অনেকদিন পর অভিনয় করলে 

স্বস্তিকা: মীরের সঙ্গে শেষ ছবি করেছি মাইকেল। সেটা ২০১৮।  মমপিসির সঙ্গে ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ করেছি ২০১৯-এ। মীরের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। আর দীপঙ্করজেঠুকে দেখলে আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ে। এই ছবির একটা ভালো দিক হলো আমরা প্রায় সকলেই সব সিনে রয়েছি। এতজনের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে বেশ ভালো লেগেছে। 

ছবিতে তোমার নাচের দৃশ্যও আছে

স্বস্তিকা: হ্যাঁ, একটা নাচের দৃশ্য আছে। সেটা শুরুতে আমার আর মমপিসির একসঙ্গে করার কথা ছিল। আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম যে এটা একটা মনে রাখার মতো দৃশ্য হবে। কিন্তু যেদিন শ্যুট হবে সেদিন জানলাম মমপিসি ওটা করছে না। পরিচালককে বুঝিয়ে আমাকে বলল, আমার মেয়েরা করবে, তুই ওদের সঙ্গে কর। পায়ে ব্যথা বলে আর করলই না নাচটা। আর আমাকে একা করতে হলো। তবে খুব মজা পেয়েছি নাচের দৃশ্যটা শ্যুট করে। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *