“আজকাল অনেকেই আমাকে চিনতে পারছেন”

চেনেন তাঁকে সকলেই। দেখেছেন কোথাও না কোথাও। তবে ‘মন্দার’ মুক্তি পাওয়ার পর বাঙালি দর্শক তাঁকে নামে চিনেছে। যে কোনও চরিত্রে যত স্বল্প উপস্থিতিই হোক না কেন নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যান লোকনাথ দে। সম্প্রতি ওয়েব সিরিজ় ‘আবার প্রলয়’ ও ‘ছোটলোক’-এও বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন তিনি। থিয়েটারের পোড়খাওয়া অভিনেতা ছবির জগতে পা রাখার দু’বছরের মধ্যেই স্বমহিমায় চিনিয়েছেন নিজেকে। কী ভাবছেন লোকনাথ? কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘একটু সরে বসুন’-এর বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে তিনি কথা বললেন রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে

অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অরিন্দম শীল, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। মাত্র দু’বছরে এতজন ভিন্নধারার নামী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে ফেলা মুখের কথা নয়। এত কাজের চাপ সামলে কেমন আছ তুমি এখন? 

লোকনাথ: আমি খুব মজা পাচ্ছি। আমি তো মূলত থিয়েটারের লোক, গত দু’-আড়াই বছর ধরে এই সিনেমার জগতে এসে নানা জিনিস রপ্ত করতে হচ্ছে। টেকনিকাল দিকগুলো শিখতে হচ্ছে ছাত্রের মতো। তবে আজ পর্যন্ত অভিনয়ের জন্য কারও কাছে বকা খেতে হয়নি। নিজের মতো করেই কাজ করেছি আমি, সেটাই পরিচালকেরা পছন্দ করেছেন। 



মঞ্চে অভিনয় আর ক্যামেরার সামনে অভিনয়, এই দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার বলেই আমরা জানি। এই তফাৎটা কীভাবে রপ্ত করলে? 

লোকনাথ: শুরুর দিকে আমার এক বন্ধু পরিচালক একবার শট দেওয়ার আগে বলেছিল, মনে রাখিস, এটা সিনেমা। সেটা শুনে আমি সতর্ক হয়ে গিয়েছিলাম। ওটা নিয়ে কখনও অসুবিধা হয়নি। কেউ কখনও শট শেষে বলেননি যে অতিরিক্ত হয়ে গেল বা একটু কমানো দরকার। আমি নিজে থিয়েটার আর সিনেমার মধ্যে কোনও তফাৎ করি না। আমার মনে হয় যখন যেটা করছি আপনিই হয়ে যায়। তবে একের পর এক কাজ করছি বলেই হয়ত ব্যাপারটার অনুশীলন হয়ে যাচ্ছে। অনেকদিন পরে করতে হলে হয়ত চিন্তাভাবনা করতে হতো। এখনও পর্যন্ত কোনও অসুবিধায় পড়তে হয়নি এটুকু বলতে পারি। 

‘মন্দার’-এ মদন হালদার চরিত্রে অভিনয় তোমাকে বিশেষ পরিচিতি এনে দিয়েছে। ‘মন্দার’ পরবর্তী সময়ে তোমার ব্যক্তিগত জীবনে কতটা পরিবর্তন এসেছে? 

লোকনাথ: হ্যাঁ ‘মন্দার’-এর পর অনেকে চিনেছেন, ফলে আমার কাজ কিছুটা বেড়েছে। ব্যস্ততা খুব বেড়েছে, তা বলব না। কারণ থিয়েটার নিয়ে যে ব্যস্ততা ছিল সেটাই এখন ছবির কাজে লাগছে। থিয়েটার আমার পেশা এবং নেশা ছিল। কাজেই সেখানে আমি অনেকটা সময় দিতাম। থিয়েটারের দর্শকদের আমি এতদিন দেখে এসেছি। তাঁদের চাহিদা তাঁদের পছন্দ, সব আমি বুঝতাম। এখন সেটা বদলে গিয়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি। ফলে তাঁদের কাছে পরিচিতি, তাঁদের চাহিদা এগুলো বুঝতে হচ্ছে। আজকাল অনেকেই আমাকে দেখে চিনতে পারছেন। রাস্তাঘাটে মানুষ এগিয়ে এসে কথা বলেন। সেটা ভালোই লাগে। তবে ছবি বা সেলফি তুলতে চাইলে একটু অস্বস্তি হয়। 

সম্প্রতি অনেকগুলো সিরিজ়ে কাজ করেছ যার প্রত্যেকটা একে অপরের থেকে আলাদা। কেমন অভিজ্ঞতা ছিল? 

লোকনাথ: সব ধরনের কাজই খুব ভালো লাগে। প্রতিটার ধরন আলাদা বলেই নতুন চ্যালেঞ্জও থাকে। যেমন রাজের সঙ্গে কাজের একটা আলাদা রেঞ্জ, আবার কবিদার (ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী) সঙ্গে ‘ছোটলোক’ করলাম, খুব ভালো একটা সিরিজ়, যেটা বাংলা সিরিজ়ের ধারা বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ওখানে ছোট কিন্তু শক্তিশালী চরিত্র ছিল। কমলদার (কমলেশ্বর) সঙ্গে কাজ করে অনেককিছু শেখা, এগুলো প্রত্যেকটা আলাদা অভিজ্ঞতা। কিছু ভালো কাজ সত্যি আনন্দ দেয়। 



পরপর সিরিজ়ে কাজ করছ, নাটকের জন্য তো তাহলে সময় থাকছে না

লোকনাথ: সত্যিই নাটকের জন্য সময় দিতে পারছি না। নাটক আমার অত্যন্ত ভালোলাগার জায়গা। গত দু’বছরে একটাই নাটক করতে পেরেছি। খারাপ লাগাটা আছেই। তবে পরিকল্পনা আছে একটা একক অভিনয় করব। সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। নাটক আমার সঙ্গে থাকবেই। বরং এরকম চিন্তাভাবনা আছে যে চিরকাল তো এত ব্যস্ততা থাকবে না, একটা সময় কাজ কমে যাবে। তখন আবার নাটকে সময় দিতে পারব। 

দুটো মাধ্যমেই তুমি সমান স্বচ্ছন্দ। এই মুহূর্তে নাটক নাকি সিনেমা কোনটা বেশি পছন্দের? 

লোকনাথ: আমি তো একসময় যাত্রাও করেছি। সেটাও ভালো লাগে। যদিও যাত্রার সেই আগেকার ফরম্যাট এখন অনেকটা পাল্টে গেছে। মাইক্রোফোনের ব্যবহার আসার পরে যাত্রা এখন আর অত লাউড নয়। বলা যায় নাটকের চেয়ে এক পর্দা ওপরে। আমার তিনটে ফরম্যাটেই কাজ করতে ভালো লাগে। তবে যে কোনও একটাকে বেছে নিতে হলে যে কোনওদিন আমি নাটককেই বেছে নেব।

ছবি: প্রতিবেদক




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *