“যাই হয়ে যাক, ‘শিবপুর’ আমার ছবি হয়েই থাকবে”
কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছে ছবির ট্রেলার। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন না পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য। অন্যদিকে আমন্ত্রণ পেয়েও উপস্থিত হননি ছবির মুখ্য অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক সময়ে কোনও বাংলা ছবি নিয়ে এত বিতর্ক প্রায় নজিরিবহীন। এরই মাঝে অরিন্দমের পরবর্তী ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রেও থাকছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ‘শিবপুর’ নিয়ে ওঠা নানা প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন অভিনেত্রী। শুনল রেডিওবাংলানেট
প্রযোজক অজন্তা সিংহ রায় সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, তোমার সঙ্গে সব সমস্যা মিটিয়ে নিয়েছেন এবং তোমার প্রতি ওর পূর্ণ সহানুভূতি আছে। মিটমাট কি আদৌ হয়নি?
স্বস্তিকা: কীসের মিটমাট? এরকম একটা অন্যায় কি এত সহজে মিটে যেতে পারে? এটা তো একটা ক্রিমিনাল অফেন্স। তাহলে সেটা কী করে মিটে যেতে পারে? সন্দীপ সরকার মেল করে হুমকি দিয়েছিল, আমার ম্যানেজারকে বাইক অ্যাকসিডেন্ট করিয়ে খুন করবে, আমার অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। এর পরে আর কীসের মিটমাট? লোকটা আজ পর্যন্ত আমার কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চায়নি। অজন্তার সহানুভূতির কোনও প্রয়োজন নেই আমার। কারও ‘আহা’ শুনতে আমি চাই না। উনি নিজেও তো একজন মহিলা। তাহলে যেখানে সন্দীপ একমাস ধরে আমাকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে এসেছে, সেই মেলে অজন্তা মার্কড থাকা সত্বেও কোন স্টেপ নিল না কেন?
ইম্পা এই ব্যাপারে তোমাকে কতটা সাহায্য করেছে?
স্বস্তিকা: ইম্পাতে আমি যখন গিয়েছিলাম তখন চেয়ারপার্সন পিয়া সেনগুপ্ত আমাকে দুটো কথা বলেছিলেন। এক, সন্দীপের নাম প্রযোজক হিসেবে ছবিতে কোথাও থাকবে না, আর সেটা কোনও ফরম্যাটেই থাকবে না। দুই, উনি পাবলিকলি আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন। সেই ক্ষমা উনি আজও চাননি। উনি শুধু এটা জানিয়েছেন যে মদের আসরে আমার এবং আমার ম্যানেজারের ইমেল ও ফোন নম্বর উনি নিজের কলিগদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। যারা ওই মেলগুলো করেছে, তারা এটা লিখেই করেছে যে আমরা সন্দীপের কলিগ, বা সন্দীপ আমাদের মেন্টর। অন্য লোকে করলেই কি সন্দীপের অপরাধ এখানে কমে যায়?
আইনি পদক্ষেপ নিলে না কেন? এটা তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ
স্বস্তিকা: শাস্তি নিশ্চয়ই দেওয়া যায়। দিতে পারতাম যদি এফআইআর করতাম। কিন্তু সেটা করতে গেলে যে পরিমাণ ছুটোছুটি করতে হবে, সেই সময়টা আমার নেই। দুটো আলাদা শহরে আমার ফিল্ম কেরিয়ার আছে। আমাকে দু’জায়গায় সমান সময় দিতে হয়। এর মধ্যে এসব আমি কখন করব? আর কোর্টে গেলে তো প্রচুর টাকাও খরচ করতে হবে। আসল লোক তো আমেরিকায় বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। তার টাকা আছে বলে সে যা খুশি করতে পারে। আমার বাজে খরচ করার মতো টাকা বা সময় কোনওটাই নেই।
আরও পড়ুন: সৌরভের বায়োপিকে অভিনেতা চূড়ান্ত?
এই হুমকি মেলগুলো পাঠানো শুরু হলো কবে থেকে?
স্বস্তিকা: যৌন নির্যাতন বা ম্যানেজারকে খুনের হুমকি তো শেষে আসে। তার একমাস আগে থেকে সন্দীপ আমাকে হুমকি দিয়ে গেছে যে আমি যদি ‘শিবপুর’-এর মার্কেটিংয়ে না থাকি, তাহলে এই-এই করা হবে। এগুলো কিন্তু পুরোটাই একটা ‘যদি’র ওপর দাঁড়িয়ে। কারণ যেখানে মার্কেটিং প্ল্যানই নেই, সেখানে আমি থাকছি কিনা সেই প্রশ্নই তো ওঠার কথা নয়। খুব হাস্যকর ব্যাপার নয় কি? আমি বারবার বলেছি যে মার্কেটিং প্ল্যান আমাকে পাঠানো হোক। এমন তো নয় যে আমি আমার ছবির প্রমোশন করি না। সকলেই জানে আমি নারীকেন্দ্রিক ছবি করি। আমার প্রতিটা অভিনীত চরিত্র একটার থেকে অন্যটা আলাদা হয়। সেই কারণেই আমি প্রতিটা ছবির প্রমোশনে থাকি। সেখানে ছবি বিপণনের কোনও প্ল্যান না বানিয়েই উনি আমাকে মার্কেটিংয়ে থাকার জন্য হুমকি দিতে শুরু করলেন। অথচ আমাকে একবারও জানানো হলো না মার্কেটিং কীভাবে হবে, বা কোন তারিখে হবে। আমাকে তো সেটা আগে থেকে জানতে হবে, তবে আমি ডেট রাখব। বারবার চাওয়া সত্বেও কোনও প্ল্যান আমি আজ পর্যন্ত পাইনি।
আরও পড়ুন: ‘মাসুম’-এর সিক্যুয়েল করবেন শেখর?
তার মানে ছবি বিপণন নিয়ে প্রযোজকের তরফে কোনও পরিকল্পনাই ছিল না?
স্বস্তিকা: যেটুকু প্রমোশন করার সেটা তো আমিই করছি। প্রযোজকদের তরফে কতটুকু প্রমোশন হচ্ছে? আচ্ছা বলো তো, তোমরা ছবি সম্পর্কে কিছু জানো? আমি আমার ব্যাক্তিগত পিআর দিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, ছবিটা দেখার ব্যাপারে সকলকে জানাচ্ছি। কারণ আমি আমার ৫০০ শতাংশ দিয়ে এই চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার সব ছবির ক্ষেত্রে আমি তাই করি। আমি চাই আমার কাজটা লোকে দেখুক।
তার মানে ছবি বিপণনের বিষয়ে প্রযোজনা সংস্থা কিছুই জানে না। অরিন্দমদাও এই একই কথা বলছিলেন
স্বস্তিকা: একেবারেই কিছু জানে না। ছবির ট্রেলার মুক্তি পেল। সেই ট্রেলার তো প্রোডাকশন হাউজ় থেকে মেল করে অভিনেতাদের পাঠানো হয়। এটা সকলেই জানে। কারণ সকলে মিলে নিজেদের পেজ থেকে পোস্ট করলে আরও বেশি লোক জানতে পারবে। এটাই তো স্বাভাবিক। আমাকে ট্রেলার পাঠানো হয়নি। শ্যুটের মাঝে এত স্টিল ফটো তোলা হয়, সেটা তো প্রমোশনের জন্যই। আজ পর্যন্ত সেই ছবিগুলো আমি পাইনি। প্রমোশন মেটিরিয়াল ছাড়া আমি লোককে জানাব কীভাবে? আমার সোশ্যাল মিডিয়া টিম ইউটিউব থেকে ট্রেলার ডাউনলোড করে পেজে দিয়েছে। অর্থাৎ আমার তরফ থেকে যা-যা করার আমি করছি। তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি, সকলকে জানাবার চেষ্টা করছি। অথচ প্রযোজকদের তরফে ওই একটা ট্রেলার ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। হ্যাঁ, হয়তো তাদের মার্কেটিং প্ল্যানে আমি কোথাও নেই। সেটা হলেও ছবির প্রমোশন তো চোখে পড়ত। কোথাও তো কিছু দেখছি না। ছবির মিউজ়িক পার্টনারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি নিজে কথা বলেছি যে কীভাবে গানের লিঙ্ক ইনস্টাগ্রামে দেওয়া যায়, যাতে সবাই শুনতে পারে। যদিও ছবিতে গানের কোনও প্রয়োজন ছিল না। একটা গ্যাংস্টার ছবিতে গানের দরকারই বা কী? আমি যে ছবিতে, যে চিত্রনাট্যে অভিনয় করেছি, সেটায় কোনও গান ছিল না। ৩০ জুন যে ‘শিবপুর’ মুক্তি পেতে চলেছে, সেটা আমাদেরই ছবি নাকি প্রযোজক সেখানে অন্য কিছু করে রেখেছেন, তাও আমরা জানি না।
কোনও ছবিতে সই করার সময় পরিচালক কে সেটাই আগে দেখা হয়। প্রযোজক নিয়ে কেউ খুব একটা মাথা ঘামায় না। এবারের অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখলে?
স্বস্তিকা: প্রযোজক কে, সেটা জানার খুব একটা দরকার হয় না, এটা ঠিক। পরিচালক কে, সেটাই ছবি করার জন্য যথেষ্ট। এটুকু দেখে নিই যে চিট ফান্ড বা ওরকম কিছু আছে কিনা। তবে এবার আরও সতর্ক হয়ে যাব, ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করব। সবথেকে অবাক করার মতো ব্যাপার, এরা কিন্তু শিক্ষিত। এমন নয় যে যেমন তেমন একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে। শিক্ষিত লোকজন প্রমাণ রেখে এসব করছে মানে এদের কতটা ঔদ্ধত্য ভাবো! আমি ইম্পাকেও বলেছি যে সন্দীপ যদি আবারও প্রযোজনায় আসতে চায়, সেটা কিন্তু ভেবে দেখা দরকার। শুধুমাত্র টাকার জোরেই একটা লোক যদি প্রযোজক হয়ে আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করতে পারে, তাহলে তো সে যে কোনও অভিনেত্রীর সঙ্গেই এইসব করবে।
এইসব ঘটনার পর অরিন্দমদার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন? আবার কাজ করবে ওঁর সঙ্গে?
স্বস্তিকা: অরিন্দমদা আবারও ডাকলে আমি আছি। সেখানে আমার কোনও সমস্যা নেই। অরিন্দমদার সঙ্গে প্রযোজকদের যে সমস্যাটা হয়েছে, সেটাও পুরোপুরি তাদের ব্যাপার। আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা একটা সম্পূর্ণ অন্য সমস্যা। তবে যাই হয়ে যাক, ‘শিবপুর’ আমার ছবি হয়েই থাকবে। এই ছবিতে আমার একমাত্র হাতিয়ার হলো অভিনয়। ছবিতে আমি আগাগোড়া একটা সাদা শাড়িতে মেকআপহীন মুখ নিয়ে কাজ করেছি। সাজগোজ নেই, সুন্দর পোশাক নেই, শুধু অভিনয় আছে। বাংলায় এরকম ছবি খুব একটা হয় না। আমি নিজের সবটা নিংড়ে দিয়ে অভিনয় করেছি। আমি নিশ্চয়ই চাইব দর্শক ছবিটা দেখুক, আমার কাজ দেখুক। নাহলে আমি তো ছবিটা থেকে নিজেকে একেবারে সরিয়ে নিতে পারতাম। আমি কিন্তু আমার তরফ থেকে সব চেষ্টা করছি দর্শককে জানাবার। এটাই চাইব, সকলে ‘শিবপুর’ দেখুক।