“মনখারাপ হলেই আমি মৃণালদার বাড়ি চলে যেতাম”
সত্তর-আশির দশকে মৃণাল সেন ও সত্যজিৎ রায়ের ছবির নায়িকা হয়েও যিনি এই ২০২৩-এ এসে একাধিক ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠতে পারেন তিনি মমতা শঙ্কর। এখনও তাঁকে প্রতিটি ছবিতে অন্যরকম চরিত্রে দেখে অবাক হয় দর্শক। এ বছর তেমনই কিছু মনে রাখার মতো চরিত্র ছিল তাঁর ঝুলিতে। বিগতপ্রায় বছরে বিভিন্ন ছবিতে নিজের কাজ নিয়ে নানা উপলব্ধি ও স্মৃতিকথা শোনালেন অভিনেত্রী, শুনল রেডিওবাংলানেট
গতবার ছিল ‘প্রজাপতি’। এবারেও বছরের শেষ রিলিজ়, অভিজিৎ সেনের ছবি ‘প্রধাণ’-এ তুমি আছো। এই ছবিতে তোমাকে কীভাবে দেখা যাবে?
মমতা শঙ্কর: এটুকু বলতে পারি, আমার যা বয়স, তার থেকে অনেক বেশি বয়সের চরিত্রে কাজ করেছি ‘প্রধাণ’-এ। ‘প্রজাপতি’র মতো একেবারেই নয় এটা। ওটা অন্যরকম চরিত্র ছিল। তবে এই ছবিতে যে চরিত্রটা করেছি সেটা আমার মনের খুব কাছের।
এ বছর ‘শিবপুর’-এ তোমাকে একেবারে অন্যরকম একটা চরিত্রে দেখা গেছে। এরকম চরিত্র এলে আবারও করবে?
মমতা শঙ্কর: ‘শিবপুর’-এ নেগেটিভ চরিত্র করেছি তার মানে এমন নয় যে এরকম চরিত্র করতে আমি ভালোবাসি। বরং মাঝে মাঝে যাচাই করে দেখতে চাই এরকম কোনও চরিত্র পারব কিনা। বা আমাকে দিয়ে এটা হবে কিনা? এটা এখনও প্রতিটা চরিত্র করার আগেই আমার মনে হয়। ‘শিবপুর’-এ ছোট চরিত্র হলেও সেটা বেশ চমকে দেওয়ার মতো ছিল। এর আগে ‘শাহজাহান রিজেন্সি’তে নেগেটিভ চরিত্র করেছি। তখন আমার অনেক ছাত্রছাত্রী দেখে বিশ্বাসই করেনি। বলেছে ওটা মমমাসি হতেই পারে না। আর ‘শিবপুর’-এ তো অনেক চিনতেই পারেনি।
এ বছর ‘খারিজ’-এর চল্লিশ বছর হলো। একইসঙ্গে এই বছর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পালান’ মুক্তি পেল। একই চরিত্রে এত বছরের ব্যবধানে অভিনয় করে কেমন লাগল?
মমতা শঙ্কর: ‘পালান’ এ কাজ করতে গিয়ে স্মৃতিতে আচ্ছন্ন হয়েছিলাম আমরা সবাই। ওখানে তো আমি আমিই, অঞ্জনও (দত্ত) অঞ্জন, শ্রীলা (মজুমদার) বা দেবপ্রতিম (দাশগুপ্ত) প্রত্যেকেই আমরা যে যার চরিত্রে। মৃণালদা আমাদের চরিত্রগুলো তৈরি করে দিয়ে গেছেন। সেই স্মৃতি তো ভোলা যায় না। তাছাড়া খুব আনন্দের একটা ব্যাপার যে কৌশিকের সঙ্গে এটা আমার প্রথম বড় কাজ। টেলিভিশনে ওর সঙ্গে কাজ করেছি। আর ওর প্রথম ছবি ‘ওয়ারিশ’-এ ছোট একটা চরিত্র করেছিলাম। এই কাজটা করে খুব আনন্দ পেয়েছি। অঞ্জন এত ভালো অভিনয় করেছে কী বলব আর! সঙ্গে পাওলি (দাম) যিশু (সেনগুপ্ত) প্রত্যেকে অসাধারণ।
আরও পড়ুন: গম্ভীরার খোঁজে খরাজ, সৌরভ, শ্রীতমা
মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষ উদযাপন হচ্ছে এ বছর। এবারের কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ওঁর অনেকগুলো ছবি দেখানো হলো, প্রদর্শনীও ছিল। তুমি তো কাজ করেছ ওঁর সঙ্গে, তোমার কী মনে হচ্ছে?
মমতা শঙ্কর: আমি মৃণালদাকে ভীষণ মিস করি। উনি আমার দাদা ছিলেন, বন্ধু ছিলেন। খুব কাছের, খুব নিজের একজন মানুষ। বউদির সঙ্গেও ঠিক সেরকমই সম্পর্ক ছিল। একদম ঘরোয়া সম্পর্ক। কাজ তো পরে, আগে ওঁরা আমার নিজের লোক। আমার মনখারাপ হলে আমি ভবানীপুরে মৃণালদার বাড়ি চলে যেতাম। এখনও ওখান দিয়ে গেলে মনে হয় যাই দেখা করে আসি। মনেই থাকে না যে উনি আর নেই। আসলে সত্যিই তো ‘নেই’, কথাটা বলাই যায় না। উনি এখনও ভীষণভাবেই আমাদের মধ্যে রয়ে গেছেন।
ছবি: প্রতিবেদক