বাংলায় কমেডি ছবির সুদিন ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী বিশ্বনাথ, মানসী, প্রেমেন্দু

RBN Web Desk: বাংলায় কমেডি ছবির সুদিন ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু, অভিনেত্রী মানসী সিংহ ও পরিচালক প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী। বর্তমানে বাংলা ছবিতে কমেডির অবস্থান নিয়ে এক ভার্চুয়াল আড্ডায় অংশগ্রহণ করেছিলেন এই তিনজন। সেখানেই এমন আশা ব্যক্ত করলেন তাঁরা।  

বাংলা ছবির বিভিন্ন রসের মধ্যে এক অন্যতম হলো কমেডি। সিরিয়াস ছবিতেও দর্শকমনকে কিছুটা বিরাম দিতে ব্যবহৃত হয় কমিক রিলিফ। সিনেমায় হাস্যরসের উত্থাপন যদিও হালের উদ্ভাবন নয়। বহু বছর আগে থেকেই এর প্রচলন রয়েছে। তবে যুগ যত বদলেছে, তত হাসির উদ্রেকের কারণও বদলেছে। অভিনয় প্রতিভার পাশাপাশি বদলেছে হাস্যরস পরিবেশনের ধরণও।

আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ

পঞ্চাশের দশকে শ্যাম লাহা, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, নবদ্বীপ হালদারদের কথা উঠে এল আড্ডায়। পরবর্তী প্রজন্মে রবি ঘোষ, চিন্ময় রায়, অনুপ কুমারও ছিলেন চূড়ান্ত সফল। তাঁদের প্রত্যেকের কমিং টাইমিং ছিল দুর্দান্ত। এ প্রসঙ্গে ‘বসন্ত বিলাপ’ ছবিতে চিন্ময়ের পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার দৃশ্যটির উল্লেখ করেন মানসী।  

এরকম সব দাপুটে কমেডি অভিনেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে মাঠে নেমেছিলেন উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো নায়কেরাও। তৈরি হয়েছে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘ওরা থাকে ওধারে’, ‘ছুটির ফাঁদে’, ‘বাক্স বদল’, ‘মৌচাক’, ‘ছদ্মবেশী’র মতো তুমুল জনপ্রিয় কমেডি ছবি। এমনকি জুটি না বেঁধেও উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেন অভিনীত কমেডি ছবি ‘একটি রাত’ সুপারহিট হয়।



কমেডির ক্ষেত্রে কি শুধুমাত্র হাসি উদ্রেককারী সংলাপই যথেষ্ঠ? নাকি শিল্পীদের পরিবেশনের ভঙ্গীও গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রসঙ্গে উঠে এল পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। “উনি নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান,” বললেন মানসী। “সাধারণভাবে কথা বললেও ওঁর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।”

তবে প্রেমেন্দ্র মনে করেন শুধু সংলাপ বা অভিনয় ক্ষমতা নয়, তার সঙ্গে আবহের যোগ্য সঙ্গত থাকতে হয়। “ধরা যাক, মানসী আর বিশ্বনাথ একটি দৃশ্যে ঝগড়া করছে। দর্শকরা এঁদের বাচনভঙ্গী ভালোই জানেন। কিন্তু সেই ঝগড়ার আবহে যদি খোল না বাজিয়ে জগঝম্প সঙ্গীত বাজানো হয়, তাহলে কি তা ভালো লাগবে?” প্রশ্ন প্রেমেন্দুর।

আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ

তবে আদ্যোপান্ত কমেডি ছবির ক্ষেত্রে কাহিনী জোরদার না হলে দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে আসতে আকৃষ্ট করা যাবে না বলে একমত বিশ্বনাথ, মানসী ও প্রেমেন্দু। শুধুমাত্র কিছু সংলাপে দমফাটা হাস্যরস গুঁজে দিলে তা দিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্যের কমেডি ছবি নির্মাণ সম্ভব নয়। পঞ্চাশের দশকে যে সংখ্যক ভালো কমেডি ছবি নির্মাণ হয়েছিল, সেরকম গল্পকারের সংখ্যা বিলুপ্তপ্রায়। “বাংলা ছবির গল্পকারের জগতে এখন ভাটা চলছে,” বললেন বিশ্বনাথ।

তবে এই পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না বলেই মনে করেন তিনজন। “বিশ্বজুড়ে লকডাউনের ফলে বিনোদনের পরিবেশন মাধ্যম বদলে গিয়েছে। এখন বহু ওয়েব প্ল্যাটফর্মে নানা ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। আমরাও ভালো গল্পকারের খোঁজ চালাচ্ছি ভারতজুড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু ভালো লেখক রয়েছেন, যাঁরা প্রচারের আলো পাননি। যেমন আমারই পরবর্তী নাটক লিখছেন একজন বর্ধমান নিবাসী। তাঁর নাম আজ অবধি কেউ শোনেনি। ঠিকঠাক প্রচার পেলে, তাঁদের কাহিনী থেকে ছবি হলে, আস্তে-আস্তে আবার হাসির জোয়ার আসবে,” বললেন বিশ্বনাথ।



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *