“বেস্টসেলার না হয়েও এ ছবির নিজস্ব ভাবনা আছে”
আগামীকাল মুক্তি পেতে চলেছে পরিচালক সুদীপ্ত লাহার ছবি ‘কারণ গ্রিস আমাদের দেশ নয় অথবা ব্লু ব্ল্যাক ও ট্রান্সপারেন্ট ওয়াইট‘। মুখ্য ভূমিকায়, বা বলা ভালো সুদীপ্তর নিজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনিন্দ্য সেনগুপ্ত (Anindya Sengupta)। এছাড়াও রয়েছেন তনুশ্রী চক্রবর্তী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ও গৌরব চট্টোপাধ্যায়। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির প্রাক্কালে ছবির সঙ্গে জড়িত নানা উপলব্ধির কথা রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন অনিন্দ্য।
এই ছবিতে একজন নতুন পরিচালকের ভূমিকায় আছো তুমি, যেটা এই ছবির পরিচালক নিজেই। সেই চরিত্রটাকে কীভাবে নিজের মধ্যে তৈরি করলে?
অনিন্দ্য: যে কোনও চিত্রনাট্যে আমি এটাই দেখি যে আমার অভিনীত চরিত্র কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে। সুদীপ্তর স্পষ্টতা আমার কাছে ভরসাযোগ্য লেগেছিল। চিত্রনাট্যে সংলাপ এমন কিছু ছিল না যেটা থেকে চরিত্রটাকে বোঝা যায়। বরং সুদীপ্তই চরিত্রটার থেকে কী চাই সেটা লিখে দিয়েছিল। চরিত্রের বেসিক ট্রেটগুলো ও বলে দেওয়াতে একটা আদল আমি ভেবে নিতে পেরেছিলাম। এছাড়া আমি সুদীপ্তর কিছু-কিছু ম্যানারিজ়ম অনুকরণ করেছিলাম, কারণ আমার চরিত্রটা আসলে সুদীপ্তর। অবশ্য সেটা না করলেও কিছু যেত আসত না। তবু আমি করেছি। চরিত্রটা কোথায় থাকে সেটা বলা নেই। সুদীপ্ত উত্তরপাড়ার ছেলে, আমি কলকাতার। কিন্তু একটা জায়গায় গিয়ে বুঝতে পারলাম এই চরিত্রটার উদ্বেগ, তার নিরাপত্তাহীনতা তা উত্তরপাড়ায় থেকে হোক বা কলকাতায়, সেটা একইরকম থাকে।
এই ছবির বিষয়ে গভীর দার্শনিক তত্ত্বের কথা রয়েছে, গল্প সেই অর্থে খুব বেশি নেই। সাধারণ দর্শক ছবিটা কেন দেখতে যাবে?
অনিন্দ্য: চিরাচরিত বিনোদন যাকে বলা হয় সেটা ধরলে মেনে নিতে হবে যে এটা ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ নয়। অর্থাৎ মাস এন্টারটেনার নয়। কম সংখ্যক মানুষ এই ছবিটা দেখতে যাবে সেটা আমরা জানি। এই ছবিটা ফেস্টিভ্যালের কথা ভেবে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আমরা সেভাবে ছবিটাকে ফেস্টিভ্যালে নিয়ে যেতে পারিনি। গ্রিস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ছবিটাকে অনারেবল মেনশন দিয়েছে। ছবিতে যদিও গ্রিসের কোনও উল্লেখ নেই। তবে সক্রেটিক প্যারাডক্স এই ছবির একটা মূল ভাবনা বলা চলে।
পরিচালক সুদীপ্তর সঙ্গে
ছবিতে তোমার আর কমলেশ্বরদার চরিত্র দুটো বিপরীত মেরুতে রয়েছে। সেই ব্যাপারটা অভিনয়ের ক্ষেত্রে কতটা কঠিন ছিল?
অনিন্দ্য: আমার চরিত্রটা—অর্থাৎ সুদীপ্ত—এর আগে ওরকম কোনও মানুষ দেখেনি। সে জানতে চাইছে এই ভদ্রলোকের ছবি আঁকার জন্য কী-কী লাগছে, কতদিন সময় লাগে। ও নিজে একজন ফিল্মমেকার, প্রথম ছবিটা ও যা বানাতে চেয়েছিল সেটা বানাতে পারেনি। পরের ছবিটা ওর ধারণা ও কম্প্রোমাইজ় করছে। ওর মধ্যে একটা সুপিরিয়রটি কমপ্লেক্স আছে যেটা কিন্তু কমলেশ্বরদার চরিত্রের মধ্যে নেই। একটা পিস অফ আর্ট যদি বিক্রি হয় তার মানেই সেটা খারাপ জিনিস এমন তো নয়। কিন্তু ওই লোকটার এভাবেই চলে যাচ্ছে। সে যে প্রচুর ছবি আঁকছে এমনও নয়। কিন্তু তার কাছে তার কাজটা ভালোবাসার। সেই লোকটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী নয়, আর সেটা হতে গেলে যা-যা করতে হবে সেগুলো করতে লোকটার আপত্তি আছে। বিরোধটা সেখানেই। দুটো দর্শন আলাদা।
আরও পড়ুন: ভাইরাল হওয়া এখন অসুখের মতো, ক্ষোভ পঙ্কজের
ছবির মূল অভিনেতা হিসেবে এই বিষয়টাকে তুমি কীভাবে বর্ণনা করবে?
অনিন্দ্য: নবারুণ ভট্টাচার্য যখন ‘কাঙাল মালসাট’ লিখেছিলেন তিনিও তো জানতেন না কেউ পড়বে কিনা। তাই এক্ষেত্রেও হয়তো বিনোদনমূলক বলা যাবে না ছবিটাকে। যারা ভালো টাইমপাসের জন্য ছবি দেখে, তারা এই ছবি দেখবে না। কিন্তু কেউ যদি একটা ফিলজ়ফিক্যাল ছবি দেখতে চায় সে অবশ্যই যাবে। যেমন সব বই বেস্টসেলার নয়, তাই বলে কি বাকি সব বই খারাপ? তা তো নয়। সেরকমই এই ছবিটা বেস্টসেলার না হয়েও এটার একটা নিজস্ব ভাবনা আছে, সেটা যারা দেখতে চায় তারা ঠিকই দেখবে।
ছবি: প্রতিবেদক