‘দুঃখিত, আমি কাউকে তেল দিতে পারব না’
মল্লিকা সেনগুপ্তর উপন্যাস ‘শ্লীলতাহানীর পরে’ অবলম্বনে একই নামের ছবি পরিচালনা করছেন রেশমি মিত্র। এই ছবিতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায় । সম্প্রতি ছবির মহরতে ধরা গেল তাঁকে, অভিনয় জীবন নিয়ে অনেক কথাই খোলাখুলি বললেন রেডিওবাংলানেট-কে।
রেশমির ছবিতে কোন চরিত্রে দেখা যাবে আপনাকে?
এই ছবিতে আমি একজন শিল্পপতির ভূমিকায় অভিনয় করছি, এটুকুই বলতে পারি। ছবির কারণেই এর বেশি কিছু বলা যাবে না।
খুব কম ছবিতে দেখা যায় আপনাকে। এই ছবিটা করতে রাজি হলেন কেন?
রেশমিকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। ও যখন সাংবাদিক ছিল, তখন সাক্ষাৎকার নিতে আসত। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছে। রেশমি খুব ভালো ছবি করছে। এর আগে ‘বারান্দা’ করল, সেটা তো দেশে-বিদেশে দারুণ প্রশংসা পেয়েছে, বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে। তাছাড়া মল্লিকাদির গল্পটাও ভীষণ প্রাসঙ্গিক, তাই রাজি হলাম।
আপনি কি সচেতনভাবেই কম ছবিতে কাজ করেন?
একেবারেই না। ভালো ছবির কাজ পেলে নিশ্চয়ই করব। প্রায় ৩৫ বছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে আছি। তাই এই বয়সে এসে, দুশোর ওপর ছবিতে কাজ করে, আমি কাউকেই বলতে পারব না ‘দাদা, আমাকে একটু দেখবেন।’ দুঃখিত, আমি কাউকে তেল দিতে পারব না। কোনও পরিচালক যদি আসেন তাঁর ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব নিয়ে, আমি নিশ্চয়ই ভেবে দেখব। অভিনয়টাই তো আমার পেশা, সুতরাং সচেতনভাবে আমি সেটা এড়িয়ে যাব কেন?
বিশ্বনাথের বারাণসী, বারাণসীর বিসমিল্লাহ
আশি বা নব্বইয়ের দশকে আপনারা যখন চুটিয়ে কাজ করছেন, সেই সময় থেকে এখন বাংলা ছবি অনেকটাই বদলে গেছে। এখন কি আগের থেকে ভালো ছবি তৈরি হচ্ছে বলে মনে হয়?
একদমই না। যে সময়টার কথা তুমি বললে, তখনকার ছবি অনেক ভালো হত। একটা নিটোল গল্প থাকত, গোটা পরিবার একসাথে বসে দেখে পারত সেই ছবি। তার মধ্যেই পরীক্ষানিরিক্ষা চলত। এখন তো সবই নকল। বেশিরভাগই হয় দক্ষিণী নয়ত হিন্দী ছবির রিমেক। সেই জন্যই একটা ছবিও চলছে না, দু’সপ্তাহ পরেই উঠে যাচ্ছে। যে ছবি মানুষ দেখতে চাইছে না, হল মালিক সেই ছবি দেখাবেন কেন? উনি তো ফাঁকা হলে মাছি তাড়ানোর জন্য হল খুলে বসেননি।
অঞ্জন চৌধুরী থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণ ঘোষ, বিভিন্ন ঘরাণার পরিচালকের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন। এই দুই ঘরাণার পরিচালকের মধ্যে মিল বা অমিল কোথায়?
আশি-নব্বইয়ের দশকে বাংলা ছবির সব প্রথম সারির পরিচালকের ছবিতে আমি কাজ করেছি, যেমন অঞ্জনদা, ঋতুপর্ণ, তরুণ মজুমদার, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী এবং আরও অনেকেই। এদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা মিল ছিল। তাঁর সবাই অভিনেতার সেরাটা বার করে আনতে পারতেন। তাঁরা জানতেন কাকে দিয়ে কোন কাজটা হবে। আমি তো এখনকার পরিচালকদের সঙ্গে খুব একটা কাজ করিনি, তবে যাঁদের নাম করলাম, তাঁরা সবাই একটা দৃশ্য শ্যুট করার আগে অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন। সেটা বোধহয় এখন আর পাওয়া যাবে না। দেখো, আসল কথা হল যে পরিচালক আমাকে নিচ্ছেন, আমি তাঁর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি কি না। সেটা করতে পেরেছি বলেই অঞ্জনদা, তরুণবাবু, ঋতুপর্ণর মত পরিচালক আমাকে তাঁদের একাধিক ছবিতে নিয়েছেন। আজ অবধি আমাকে কোনও পরিচালকের কাছে গিয়ে হাত পেতে কাজ চাইতে হয়নি। তাঁদের বিশ্বাস ছিল আমার ওপর।
যে জন থাকে মাঝখানে
বাংলায় একদিকে যেমন ছবির সংখ্যা বাড়ছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে হলের সংখ্যাও কমছে। এই পরিস্থিতিটা কতটা ভালো বা খারাপ বলে আপনি মনে করেন?
যে কোনও পরিস্থিতেই হলের সংখ্যা কমে যাওয়া সিনেমা শিল্পের ক্ষেত্রে খারাপ। এখন তো একক প্রেক্ষাগৃহ নেই বললেই চলে, সবই মাল্টিপ্লেক্স। কিন্তু মাল্টিপ্লেক্সে তো আর সব ছবি চলবে না। একটা বিশেষ ধরণের ছবি মাল্টিপ্লেক্সে চলে। এর বাইরে অন্য ঘরাণার বা মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি হল পাচ্ছে না। মূলধারার ছবিই কিন্তু একক প্রেক্ষাগৃহগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছিল, ভালো ব্যবসা দিয়েছিল। এখনকার ছবি হলে লোক টানতে ব্যর্থ। হল বন্ধ হবে না কেন?
আগামী দিনে আর কোন ছবিতে দেখা যাবে আপনাকে?
এই মুহূর্তে ছবির কাজ আর কিছু নেই। একটা ধারাবাহিকে অভিনয় করছি। এছাড়া খুবই স্বল্প সামর্থ্যের প্রযোজকদের কিছু ছবিতে ছোট-ছোট চরিত্রে কাজ করেছি।
এখন আপনার কেরিয়ার যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আপনি খুশি?
কখনওই না। আমি মনে করি আমার আরও বেশি কাজ পাওয়া উচিত। কিন্তু ওই যে বললাম, কারোর কাছে গিয়ে আমি হাতজোড় করে কাজ চাইতে পারব না।